কলকাতা, 26 মে : প্রকৃতির আক্রোশ মোকাবিলা করার ক্ষমতা একমাত্র বোধ হয় প্রকৃতিরই আছে ৷ আর সেই কারণেই ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে রাশ টানতে প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করার পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৷ রাজ্য়ের উপকূলবর্তী এলাকা-সহ সম্ভাব্য সমস্ত জায়গায় ম্য়ানগ্রোভ অরণ্য় তৈরির নির্দেশ দিলেন তিনি ৷ মমতা বলেন, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হোক ৷ কিন্তু অবিলম্বে রাজ্যের যত জায়গায় সম্ভব ম্য়ানগ্রোভ অরণ্য তৈরির ব্য়বস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে ৷ এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্য়ের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে ৷ তাঁর নেতৃত্বে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে বলে বুধবারই জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তাতে বন, সেচ, স্বরাষ্ট্র-সহ সমস্ত দফতরের আধিকরিকরা থাকবেন ৷
বুধবার ওড়িশার বালেশ্বরের দক্ষিণ উপকূলে আছড়ে পড়ে যশ ৷ যার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাও ৷ প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, দুই মেদিনীপুর ও দক্ষিণ 24 পরগনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবথেকে বেশি ৷ প্রাথমিক রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, 3 লাখের বেশি বাড়ি ভেঙে গিয়েছে ৷ অন্তত 134 টি নদী বাঁধ ঘূর্ণিঝড়ের বলি হয়েছে ৷ সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন 1 কোটিরও বেশি মানুষ ৷ চাষের জমি ও পুকুর-ভেড়িতে সমুদ্রের নোনা জল ঢুকে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাধারণ কৃষক ও মাছচাষিরা ৷ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, অবিলম্বে এই ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষতে হবে ৷ প্রাথমিকভাবে চেষ্টা করতে হবে যাতে নোনা জল বের করে ফসল ও মাছ বাঁচানো যায় ৷ আর তা সম্ভব না হলে নোনা মাটি ও নোনা জলেই যাতে চাষের উপযুক্ত বন্দোবস্ত করা যায়, তা স্থির করতে হবে ৷
প্রসঙ্গত, গত বছরও এই মে মাসেই বাংলায় আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আমফান ৷ সেই ক্ষত এখনও টাটকা ৷ এদিন যশের পর নবান্নে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্য়োপাধ্য়ায়-সহ সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতরের কর্তারাই বৈঠকে যোগ দেন ৷ সেখানে ঘূর্ণিঝড়ের বারবার আসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, প্রতি বছর টাকা খরচ করে বাঁধ তৈরি করে হবে, আর প্রতি বছরই তা ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ভেঙে যাবে, এটা চলতে পারে না ৷ তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থায়ী সমাধান খুঁজতে হবে ৷ এই প্রসঙ্গেই ম্য়ানগ্রোভ অরণ্য় তৈরির কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
সুন্দরবনের ম্য়ানগ্রোভ বিশ্ববিখ্যাত ৷ একটা সময় এর ঘনত্ব অনেক বেশি থাকলেও বর্তমানে এর ক্ষয়িষ্ণু দশা ৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মূলত কাঠপাচারকারী ও মাটি মাফিয়াদের দাপটেই ধ্বংস হচ্ছে সুন্দরবনের এই সম্পদ ৷ যার প্রভাব পড়ছে প্রকৃতিতে ৷ আগে যেসব ঝড়ের ঝাপটা অনায়াসে সামলাতে পারত এই এলাকা, এখন তাতেই তার থরহরিকম্প দশা হয় ৷
আরও পড়ুন : কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ প্রচেষ্টাতেই যশের মোকাবিলা সহজ হয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী
এই অবস্থায় অবিলম্বে উপকূলীয় এলাকা-সহ রাজ্য়ের যেসমস্ত জায়গায় সম্ভব নতুন করে ম্য়ানগ্রোভ অরণ্য তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ পাশাপাশি, উপকূলীয় এলাকার মাটির দৃঢ়তা বাড়াতে মুখ্যমন্ত্রীকে ভেটিভার ঘাস লাগানোরও পরামর্শ দেন আধিকারিকরা ৷ এই প্রস্তাবটিও খতিয়ে দেখে ব্য়বস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা ৷
এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, যেহেতু ভরা কোটালের খাঁড়া এখনও কাটেনি ৷ তাই আগামী 48 ঘণ্টা সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে ৷ পাশপাশি, 72 ঘণ্টার মধ্যেই ক্ষয়ক্ষতির সমস্ত হিসাব করে ফেলতে হবে ৷ পুনর্বাসনের কাজ শুরু হবে 48 ঘণ্টা পর থেকে ৷ এসব নিয়ে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটেয় আবারও প্রশাসনিক বৈঠকে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী ৷