বর্ধমান, 9 জানুয়ারি : তৃণমূলের বাঙালি কালচারের সঙ্গে বিজেপির বাঙালি সত্তার পার্থক্য কোথায় তার ব্যাখ্যা দিলেন জে পি নাড্ডা ৷ আর এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ডায়মন্ড হারবারে তাঁর কনভয়ের উপর হামলার ঘটনাকে উসকে দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি ৷ তিনি এজন্য স্বাধীনতা সংগ্রামী গোপালকৃষ্ণ গোখলের মন্তব্যটিকে অন্য বিজেপি নেতাদের মতো আরও একবার উল্লেখ করলেন ৷ হোয়াট বেঙ্গল থিংক্স টুডে, ইন্ডিয়া থিংস টুমরো ৷ বাঙলা আজ যা ভাবে, বাকি ভারত আগামীকাল তা ভাবে ৷
বর্ধমানে সাংবাদিক সম্মেলনে নাড্ডা বাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতি থেকে আদব-কায়দার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে গিয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বাংলার সঙ্গে বিজেপির নাড়ির টান বোঝাতে চাইলেন ৷ আবার এই অবসরে নিজের সঙ্গেও বাংলার যোগসূত্রটিকেও উল্লেখ করলেন স্পষ্টভাবে ৷ তাঁর স্ত্রী মল্লিকার বিয়ের আগে পদবী ছিল বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ জন্মসূত্রে মল্লিকা মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা ছিলেন ৷ গত 11 ডিসেম্বর নাড্ডার বিবাহবার্ষিকীর দিনে মল্লিকা বিয়ের ছবির কোলাজ ফেসবুকে আপলোড করেন ৷ সেই ছবিতে নাড্ডা ধুতি পঞ্জাবি ও টোপরের সাজে সজ্জিত ৷ এতদিনে ফেসবুকের কল্যাণে তাঁর এই বঙ্গযোগ প্রমাণিত ৷ এবার সেই প্রসঙ্গ হালকা চালে তুলে ধরে টোপর পরে তিনি যে বিয়ে করতে গিয়েছিলেন তাও উল্লেখ করেন ৷ এভাবেই তাঁর প্রতি তৃণমূলের বহিরাগত তকমা কী মুছে ফেলতে চাইলেন নাড্ডা ? শ্যামাপ্রসাদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিজেপির বাঙালি সত্তাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, "বাংলার মাটি বহু বিপ্লবীর জন্ম দিয়েছে ৷ বাঙলার সংস্কৃতি, সাহিত্য গোটা দেশে মান্যতা পেয়েছে ৷ শ্যামাপ্রসাদের আদর্শ নিয়ে আমরা দেশ গঠনের প্রেরণা পেয়েছি ৷ তাঁর জন্য আজ দেশে এক সংবিধান এক দেশ। আজ আপনারা পশ্চিমবঙ্গকে পেয়েছেন তা শ্যামাপ্রসাদের জন্যই ৷ তাঁর আত্মত্যাগ থেকে প্রেরণা পাই ৷’’
বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে তৃণমূলের সংস্কৃতির পার্থক্য নিরুপণে নাড্ডা আগের তোলা অভিযোগকেই আবার তুলে ধরেন ৷ তিনি বলেন," মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সংস্কৃতি নিয়ে চলেন তা কী বাংলার সংস্কৃতি ? তাঁর ভাষা ব্যবহার সেটা কী বাংলার সংস্কৃতি? তোলাবাজি, কাটমানি, তুষ্টিকরণ কী বাংলার কালচার? কয়লা মাফিয়া, বালি মাফিয়া কী বাংলার কালচার ?"
রাজ্যে নিহত বিজেপি কর্মীদের প্রসঙ্গ তুলে তাঁর অভিযোগ, এখানে প্রশাসনে রাজনীতিকরণ হয়েছে ৷ বাংলার কৃষকরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোঘিত কিষাণ নিধি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত কেন রাজ্য সরকারের কাছে সে প্রশ্ন করে তাঁর ঘোষণা," বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে প্রত্যেক কৃষককে কিষাণ নিধি প্রকল্পের আওতায় আনা হবে ৷ আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প নিয়েও তৃণমূল সরকারকে এদিন তিনি সমালোচনা করেন ৷ নাড্ডা বলেন,"রোড শো-তে যে উৎসাহ দেখেছি, এমন কোনও জায়গায় কোনও স্থান খালি থাকেনি ৷ বাংলা পরিবর্তনের পক্ষে মন স্থির করে নিয়েছে ৷ আমদের সরকার এলে রাজ্যে আয়ুষ্মান ভারত চালু হবে ৷ অটো ড্রাইভার, রিক্সাচালক, নাপিত, ঠেলাওয়ালার মতো গরিব মানুষ এর সুবিধা পাবেন ৷ মমতার সরকারের উপর রাজ্যের মানুষের বিশ্বাস উঠে গিয়েছে ৷ বিজেপি দুশোর বেশি আসন পাবে ৷"
আরও পড়ুন :বিজেপি ক্ষমতায় এলে সুবিচার পাবে বাংলার কৃষকরা, দাবি নাড্ডার
রাজ্যে আল কায়দার প্রভাব বৃদ্ধি হচ্ছে বলে ধনখড়ের অভিযোগকেও সমর্থন করেন নাড্ডা ৷ এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন," মুর্শিদাবাদের কথা তো আপনারা সবাই জানেন ৷" সাংবাদিক বৈঠকে লাভ জেহাদ নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যান নাড্ডা ৷ তবে সিএএ দেশে চালু করার বিষয়ে বিজেপি যে বদ্ধপরিকর তা আরও একবার স্পষ্ট করেন ৷ নাম না করে বিভিন্ন জনসভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নতুন রাজকুমার বলেন নাড্ডা ৷ এই নতুন রাজকুমার কে, কী তাঁর নাম এই প্রশ্নে নাড্ডা বলেন, "আমি নাম নিই না, জনতা নেয় ৷ আপনারাও তা জানেন ৷"