বর্ধমান, 7 জানুয়ারি : দৃষ্টিহীনদের জন্য সরকারি স্কুল। শুধু পূর্ব বর্ধমান নয় ,পশ্চিম বর্ধমান পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, হুগলি সহ অন্যান্য জেলা ছাড়িয়ে ঝাড়খন্ড থেকেও দৃষ্টিহীন ছাত্রছাত্রীরা বর্ধমান ব্লাইন্ড একাডেমিতে পড়াশোনার জন্য আসেন । সম্পূর্ণ নিখরচায় পড়াশোনার পাশাপাশি দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের নানা রকম সুযোগ সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও আবাসিক স্কুলে পাঠাতে চাইছেন না অভিভাবকেরা। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ছেলেধরা কিংবা পাচারকারী বদনাম দিচ্ছেন বেশ কিছু অভিভাবক। অগত্যা স্থানীয় পঞ্চায়েত বা প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে তারা অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন।
রাজ্য সরকারের জনশিক্ষা প্রসার বিভাগের সাহায্যে আবাসিক অবৈতনিক দৃষ্টিহীনদের বিশেষ বিদ্যালয় 'বর্ধমান ব্লাইন্ড অ্যাকাডেমি' । সম্পূর্ণ বিনা খরচে প্রি-প্রাইমারি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ব্রেইল পদ্ধতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের এখানে লেখাপড়া শেখানো হয়। শুধু তাই নয় স্কলারশিপ থেকে শুরু করে কন্যাশ্রী শিক্ষাশ্রী যাবতীয় সরকারি সুযোগ-সুবিধা ছাত্র ছাত্রীদের দেওয়া হয়।অষ্টম শ্রেণির পরে তাদের নরেন্দ্রপুর সহ অন্যান্য স্কুলে ভর্তি হন ছাত্রছাত্রীরা। কিন্তু এরপরেও দৃষ্টিহীন ছাত্র-ছাত্রীদের বেশ কিছু অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলমুখী করতে চাইছেন না। বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষক থেকে অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা সেইসব বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন। এখানকার শিক্ষকরা জানান,তাঁরা অভিজ্ঞতা দেখেছেন স্নেহের বশবর্তী হয়ে কিংবা দৃষ্টিহীন ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার এই মিথ্যা ভাবনার বশবর্তী হয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না । অথচ এই স্কুল থেকে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রী স্কুল-কলেজের শিক্ষক পদে কর্মরত কেউ কেউ সংগীত বিষয়ে পারদর্শী।তাদের আক্ষেপ ছাত্রছাত্রীদের স্কুলমুখী করতে গিয়ে শুনতে হচ্ছে ছেলেধরা কিংবা পাচারকারী বদনাম। তবুও তারা উৎসাহ হারাননি ।
স্কুলের অধ্যক্ষ কাজল কুমার রেজা বলেন ,এই স্কুল থেকে সাফল্যের সঙ্গে পাশ করে আজ অনেক ছাত্র-ছাত্রী স্কুল কলেজে শিক্ষক পদে কর্মরত। এছাড়া সংগীত বিষযে অনেকেই জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। কিন্তু অনেক অভিভাবকের ধারণা, দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার ।তাদের স্কুলে পাঠিয়ে কোন লাভ নেই। এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
স্কুলের শিক্ষক অসিত কুমার দে বলেন, ''আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর পেলেই দৃষ্টিহীন ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলমুখী করার চেষ্টা করি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই অভিভাবকদের কাছে ছেলেধরা কিংবা ছেলে পাচারকারী বদনাম শুনতে হয়েছে। এর পরেও কিন্তু শুধুমাত্র ছেলেমেয়েদের ভালোবেসে তাদের স্কুলমুখী করার নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি।''