বর্ধমান, 15 অগাস্ট: কালের নিয়মে বা উদাসীনতায় হারিয়ে যায় অনেক গৌরবজ্বল ইতিহাস । প্রজন্মের পর প্রজন্ম অতিবাহিত হয়, মুছে যায় শেষ স্মৃতিটুকু । যেমন মুছে যাচ্ছে স্বাধীনতা সংগ্রামী বিমলপ্রতিভা দেবীর নাম । তাঁর নামও শোনেনি শিল্পাঞ্চলের এখনকার প্রজন্ম । তাঁর বাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে, নেই কোন মূর্তি । এমনকী, তাঁর নামাঙ্কিত একটি ফলক ভেঙে গিয়ে অবহেলায় পড়ে আছে রাস্তার এককোণে । অথচ এই সাহসী বীরাঙ্গনার ভয়ে ব্রিটিশ আমলে তটস্থ হয়ে থাকত খনি অঞ্চলের মস্তানরা ।
ওড়িশার কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিমলপ্রতিভা দেবী । 1901 সালে জন্ম । বাবা ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় । ওড়িশায় বাঙালিদের স্বাধীনতার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত বারেবারেই পাওয়া যায় । বাবার আদর্শে অল্প বয়সেই স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদান । বিয়ের পর চলে আসেন কলকাতায় । দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের বোন উর্মিলাদেবীর সংস্পর্শে এসে স্বাধীনতা আন্দোলনে আরও সক্রিয় হয়ে পড়েন । সেই সময় গড়ে উঠছে ভগত সিংয়ের নেতৃত্বে নওজোয়ান সভা । বাংলা প্রদেশের সভানেত্রী হিসেবে যোগ দেন বিমলপ্রতিভা । এই সময় ঘোড়ায় চাপা, বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেলেন তিনি । বিপ্লবীদের গোপণে অস্ত্র সরবরাহ করতেন ৷ পরবর্তীকালে জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিলেও তিনি নরমপন্থী আন্দোলনে বেশি দিন স্থির থাকতে পারেননি । কংগ্রেস ত্যাগ করে চরমপন্থী আন্দোলনকারীদেরই দলে চলে আসেন । 1941 সালে কারারুদ্ধ হন বিমলপ্রতিভা । ছাড়া পান 1945 সালে । এরপরেই খনি শ্রমিকদের উপর ব্রিটিশ মদতপুষ্ট মস্তানদের অত্যাচারের খবর পেয়ে চলে আসেন ।
শ্রমিক ইউনিয়নের নেত্রী হয়ে ওঠেন তিনি । খনি, ইস্পাত অঞ্চলে যেখানেই শ্রমিকদের উপর অত্যাচার হত, বিমলপ্রতিভা ঘোড়া ছুটিয়ে পৌঁছাতেন সেখানে । শোনা যায় জলন্ত সিগার মুখে বিমলপ্রতিভাকে ঘোড়া ছুটিয়ে ছুটে আসতে দেখেই ভয়ে গা ঢাকা দিত মস্তানরা । তাঁকে সবাই 'হান্টারওয়ালি' বলতেন । 1978 সালে তিনি মারা যান । এখন তাঁর বাড়িটিও নেই ৷ বিলীন হয়ে গেছে দামোদরের গ্রাসে ।
আরও পড়ুন: অর্থের অভাব, নিজের চিকিৎসার টাকা জোগাতে সমস্যায় পড়েছিলেন বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত
বাম আমলে আসানসোল পুরসভা সূর্যনগর এলাকার একটি রাস্তাকে বিমলপ্রতিভার নামে নামাঙ্কিত করেছিল । বর্তমানে তার নামাঙ্কিত সেই ফলক পড়ে আছে রাস্তার একদিকে । আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি জানালেন, খুব তাড়াতাড়ি ওই ফলক আবার নতুন করে লাগানো হবে ৷