জামুরিয়া, 24 নভেম্বর : মানব জীবনের হিসাবরক্ষকের নাম " চিত্রগুপ্ত " । শিল্পাঞ্চলের "চিত্রগুপ্ত" জামুড়িয়ার নন্ডি গ্রামের দেবশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় । গ্রামের লোকেদের কারও মতে তিনি চিত্রগুপ্ত দাদু, কেউবা গুগল বাবা বলেন, কারোর মতে তিনি সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি সিধু জ্যাঠা ।
সাম্প্রতিক ঘটনার আর্কাইভ থেকে নিউজ় পেপার ক্লিপিংসের স্ক্র্যাপবুক, এমনকী স্থানীয় ও বিখ্যাত মানুষের জন্ম মৃত্যুর হিসেব তাঁর ডায়েরিতে বন্দী । এটাই তাঁর নেশা । প্রাক্তন এই খনিকর্মীর বয়স এখন 87 বছর । কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর বহুদিন আগেই নিয়েছেন ৷ কিন্তু ডায়েরি লেখার কাজ এখনও অব্যাহত ।
"জীবন খাতার প্রতি পাতায়/ যতই লেখো হিসাব নিকাশ", "দেয়া- নেয়া" ছবিতে শ্যামল মিত্রের বিখ্যাত সেই গান । গানের কথায়, জীবন খাতার হিসাব নিকেশ কিছুই থাকে না । সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি সিধু জ্যাঠা ছিলেন একেবারেই ফটোগ্রাফিক মেমোরি । তাঁর পেপার কাটিংয়ের নেশা ছিল । ফেলুদা হামেশাই তাঁর কাছে নানা সমস্যা নিয়ে যেতেন । সোনার কেল্লা, কৈলাসের কেলেঙ্কারি, গোরস্থানে সাবধান-এ সিধু জ্যাঠাকে দেখা গেছে । গুগলবাবার সময়ে সিধু জ্যাঠা কতটা প্রাসঙ্গিক এই প্রসঙ্গ উঠলেও, জামুড়িয়ার সিধু জ্যাঠা অর্থাৎ দেবশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু নিরুত্তাপ । এসব নিয়ে কোনও ভাবনা নেই দেবশংকরবাবুর । 87 বছর বয়সেও তিনি স্থানীয়দের জন্ম, মৃত্যুর নথি, পেপার কাটিং ও সাম্প্রতিক ঘটনার তথ্য ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করে রাখার কাজ করে চলেছেন ৷ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার আর্কাইভ বানিয়েছেন নিজের বাড়িতে । আলমারি ভরতি ডায়েরি । সেই 1957 সাল থেকে চলে আসছে ডায়েরি লেখার কাজ । আলমারিতে সারি দিয়ে সাজানো রয়েছে তাঁর ডায়েরি ।
দেবশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, " আমার যখন বয়স উনিশ-কুড়ি তখন থেকে ডায়েরি লিখতে শুরু করেছি । দিনের শুরু ও শেষ সমস্ত কিছুই ডায়েরিতে লিখে রাখতাম । এরপর পাড়ায় কারও জন্ম হল, সেই দিনটি লিপিবদ্ধ করে রাখতাম ডায়েরিতে । শুধু জন্ম নয়, মৃত্যু ও বিবাহের দিনক্ষণ লিখে রাখতাম । শুধুমাত্র গ্রামের মানুষ নয়, রাজ্য ছাড়াও মহান ব্যক্তির জন্ম ,মৃত্যু ও বিবাহ সমস্তকিছুই লিপিবদ্ধ রয়েছে আমার ডায়েরিতে । জামুরিয়ায় 1959 সালে বিশাল ঘটনা ঘটেছিল । বিস্ফোরণ হয়েছিল । বিস্ফোরণে প্রায় 300 থেকে 400 মানুষ মারা গিয়েছিলেন । দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু এসেছিলেন এই ঘটনার জন্য । তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়ও এসেছিলেন । এই সমস্ত ঘটনার বিবরণ রয়েছে আমার ডায়েরিতে । 64 বছরের ডায়েরি রয়েছে । পরপর সাল অনুসারে ডায়েরিতে তথ্য লিপিবদ্ধ করে রাখা রয়েছে । অনেকেই নিজেদের পরিবারের কোনও সদস্যের মৃত্যুর দিন ভুলে গেলে তথ্য নিতে আমার কাছে আসেন ।
দেবশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে রাসবিহারী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন " বাবা দীর্ঘদিন ধরে ডায়েরি লিখছেন । আজও সেই লেখা অব্যাহত । ডায়েরিতে ভরতি আলমারি । গ্রামের মানুষ বাবাকে "চিত্রগুপ্ত " বলে ডাকেন । তবে বাবার এই ডায়েরি লেখার জন্য আমরা পুরো পরিবার সবসময়ই তাঁর পাশে রয়েছি ।"