আসানসোল, 29 জানুয়ারি : "বিদ্রোহী রণক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত ..." কোনও বাঙালি এই লাইনগুলো জানে না, তেমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর । এই লাইনগুলো পাঠ করলেই বা শুনলে বুকের ভিতরে রক্তস্রোত কেমন যেন তীব্র হয়ে যায় । ঠিকই ধরেছেন, কাজি নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা । সেই কবিতা 100 বছরে পা দিল । অথচ কেমন যেন নীরবেই পেরিয়ে যাচ্ছে "বিদ্রোহী"-র শতবর্ষ ।
একবার পড়ে নেওয়া যাক "বিদ্রোহীর" ইতিহাস ৷ সেই সময় নজরুল ইসলাম সামরিক বিভাগে চাকরি করতেন । পল্টনে আড়াই বছর তিনি বেঙ্গল রেজিমেন্টে সেনা হিসেবে চাকরি করেছেন । কিন্তু বেঙ্গল রেজিমেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর 1920 সালের মার্চ মাসে ফিরে আসেন তিনি । কলেজ স্ট্রিটে মুজফর আহমেদের আশ্রয়ে থাকতে শুরু করেন । চাকরি করার সময় থেকেই লেখালেখি শুরু করেন নজরুল । কিন্তু চাকরি ছেড়ে আসার পরেই তিনি যেন সাহিত্যে নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে নিয়োজিত করেন । মাঝে বেশ কয়েকবার বাসা বদল হলেও টানা দু'বছর মুজাফফর আহমেদের সঙ্গে ছিলেন নজরুল । আর এই সময়েই নজরুলের চূড়ান্ত সাহিত্যচর্চার শুরু ।
ওই বছরেই তালতলা লেনের একটি বাড়িতে উঠে যান নজরুল এবং মুজফফর আহমেদ । একটি দোতলা বাড়ির নীচের দক্ষিণ পূর্ব কোনের ঘরে থাকতেন তাঁরা । সেই ঘরেই রচিত হয় বিদ্রোহী ।
আরও পড়ুন : উধাও চা চক্রের সৌজন্য, ফের মমতাকে বিঁধলেন রাজ্যপাল
আসানসোলের বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সাহিত্যিক অরুণাভ সেনগুপ্ত জানান, " ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহের একরাতে রচিত হয়েছিল এই বিদ্রোহী কবিতা । সেই রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টি নেমেছিল । খুব দ্রুততার সঙ্গে নজরুল এই লেখা সেই রাতে শেষ করেছিলেন । শোনা যায় দোয়াতের কালি শেষ হয়ে আসছিল তাঁর লেখনীর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে । আর সেই কারণে তিনি পেন্সিলে এই কবিতা লিখেছিলেন । একটি টেলিগ্রাফ কাগজের উপর এই কবিতা রচনা করেন তিনি । 1922 সালে জানুয়ারি মাসে বিজলী পত্রিকায় এই লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় । পরবর্তীকালে "প্রবাসী", "সাধনা" সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকাতে "বিদ্রোহী" কবিতাটি প্রকাশিত হয় । কিন্তু বিজলি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরেই তুমুল আলোড়ন উঠেছিল কবিতাটিকে নিয়ে । এমনকী প্রকাশকালে একই সপ্তাহের মধ্যে দু'বার ওই কবিতাটি ছাপতে হয়েছিল । এক সপ্তাহে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ এই কবিতাটি পড়েছিলেন । একদিকে যেমন তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয় নজরুলকে । তেমনি তিনি পরিচিত হন বিদ্রোহী কবি হিসেবে । "
বলাই বাহুল্য এই একটি কবিতা অবিভক্ত বাংলার মানুষের মণিকোঠায় জায়গা করে নেন নজরুল ইসলাম । সেই কবিতার শতবর্ষ পদার্পণে বাঙালিরা কেমন যেন নীরব, এমনই আক্ষেপ করেছেন বুদ্ধিজীবীর । তবু চুরুলিয়ার কবি পরিবার এবং আসানসোলের বুদ্ধিজীবীকুল এই বছর টিকে বিশেষভাবে স্মরণীয় করে রাখতে চাইছেন । কবি পরিবারের সদস্য তথা বিশিষ্ট শিল্পী সোনালি কাজি জানিয়েছেন, সোশাল মিডিয়ায় অনলাইনে তাঁরা বহু বাচিক শিল্পীকে দিয়ে এই কবিতার বিভিন্ন পংক্তি পাঠ করিয়ে প্রকাশ করে চলছেন । যাতে এই প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের কাছেও কবিতাটি পরিচিত হয় । এছাড়া আগামী দিনে বিদ্রোহীর শতবর্ষ উপলক্ষে কবির জন্মভিটে চুরুলিয়া থেকে আসানসোল পর্যন্ত একটি র্যালি করা হবে । এছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সারাবছর পালিত হবে বিদ্রোহীর শততম বর্ষ ।
আরও পড়ুন : ডাস্টবিনের দুর্গন্ধে প্রাণ ওষ্ঠাগত রানিগঞ্জের বল্লভপুরবাসীর