দুর্গাপুর, 22 মে : নাম শুভদীপ । দুর্গাপুরের ছেলে । এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম হয়েছে । শুভদীপ নরেন্দ্রপুর ব্লাইন্ড অ্যাকাডেমির ছাত্র । মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৬৩ । শতাংশের হিসেবে ৯৫% ।
শুভদীপের বাবা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার সেন্ট্রাল স্টোর্স বিভাগের কর্মী আদিত্য মণ্ডল । আদিত্যবাবুর দুই সন্তান । মেয়ে সুষমা স্নাতকোত্তরের ছাত্রী । শুভদীপ জন্মান্ধ । ছোটো থেকেই সে নরেন্দ্রপুর ব্লাইন্ড অ্যাকাডেমির ছাত্র । সেখানেই থাকতে সে । মা তনুশ্রী নিয়মিত দুর্গাপুর থেকে নরেন্দ্রপুর যেতেন শুভদীপের সঙ্গে দেখা করতে ।
শুভদীপ শুধু রাজ্যে দৃষ্টিহীনদের মধ্যেই প্রথম হয়নি । আরও একটি রেকর্ড করেছে সে । তার প্রাপ্ত নম্বর নরেন্দ্রপুর ব্লাইন্ড অ্যাকাডেমির ইতিহাসেও একটি রেকর্ড । শুভদীপের আগে আর কেউ এত নম্বর পায়নি । অসমর্থিত সূত্রের দাবি, সম্ভবত রাজ্যেও এর আগে আর কোনও দৃষ্টিহীন পড়ুয়া মাধ্যমিকে এত নম্বর পায়নি ।
শুভদীপ যে নম্বর পেয়েছে, তা অনেক চক্ষুষ্মান ছেলেমেয়ের কাছেও স্বপ্ন ।
সে জানায়, কখনও নিজেকে প্রতিবন্ধী বলে ভাবেনি। ওর এই মানসিকতা তৈরিতে অ্যাকাডেমি ওকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে । না, আর পাঁচজনের মতো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়র হওয়ার ইঁদুর দৌড়ে শুভদীপ নেই । তার ইচ্ছে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া । শুভদীপ বলে, "কৃষ্ণচন্দ্র দে-র পরে সেইস্তরের দৃষ্টিহীন কোনও সঙ্গীতশিল্পী বাংলা গানের জগতে আসেননি। আমি সেই মাত্রার একজন সঙ্গীতশিল্পী হতে চাই।"
শুভদীপের সাফল্যে শুধু তার পরিবার নয়, গোটা দুর্গাপুর গর্বিত । অনেক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছেলেমেয়েদের অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায়, হীনমন্যতায় ভোগেন । শুভদীপের সাফল্য তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি পালটে দিতে বাধ্য ।