মালদা, 23 জুন : আজ রথযাত্রা । জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা আজ রথে চেপে মাসির বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবেন। তবে এই বছর অধিকাংশ জায়গাতেই কোরোনা ভাইরাসের দৌলতে রথযাত্রা বাতিল হয়ে গিয়েছে কিংবা যাত্রা অনুষ্ঠিত হলেও জনসমাগমে সামাজিক দূরত্ব বিধির কাঁচি চালানো হয়েছে। তবে রথযাত্রা সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসবও, কারণ রথযাত্রা দিনই কাঠামো পুজো করে শুরু হয় দুর্গা প্রতিমা তৈরি। প্রতিবছরের মতো নিয়ম মেনে মালদার মৃৎশিল্পীরা প্রতিমা গড়ার কাজে হাত লাগালেও পুজো আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছেন তারা।
রথযাত্রা দিন থেকেই দুর্গাপুজোর দিন গোনা শুরু করে বাঙালি। পুজোর পাঁচটা দিনের জন্য সারা বছর ধরে প্রস্তুতি নেয় বিভিন্ন সংগঠন থেকে শুরু করে লক্ষাধিক মানুষ। কিন্তু এই বছরের পরিস্থিতি বাকি বছরের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে পুজোয় জনসমাগম তো দূরের কথা, আপাতত রাস্তায় বের হতেও ভয় পাচ্ছেন দেশবাসী। দেশে বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লক্ষ। দেশ তথা বিশ্ব থেকে কবে কোরোনা ভাইরাস বিদায় নেবে, তা জানেন না কেউই। তবে ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রেখেই দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজে হাত লাগালেন মালদার মৃৎশিল্পীরা।
মালদা জেলার অন্যতম খ্যাতনামা মৃৎশিল্পী রাজকুমার পণ্ডিত ৷ আজ তিনিও দুর্গাপ্রতিমার কাঠামো পুজো করে মূর্তি তৈরির কাজে হাত লাগালেন ৷ রথযাত্রার সঙ্গে দুর্গাপুজোর সম্পর্ক কী, তা অবশ্য জানেন না এই বয়োজ্যেষ্ঠ মৃৎশিল্পী ৷ তিনি বলেন, "বহু বছর ধরেই এই দিনটি এভাবেই আমরা পালন করে আসছি৷ এই দিনটা আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ পূর্বপুরুষের আমল থেকে রথযাত্রার দিন থেকে আমরা দুর্গাপ্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করি৷ কাঠামো পুজোর মাধ্যমে আজ থেকে সেই কাজ শুরু করলাম৷ শুধু মালদা নয়, গোটা রাজ্যে এই প্রথায় দুর্গাপুজোর কাজ হয়ে আসছে৷ তবে রথ যাত্রার সঙ্গে দুর্গা পুজোর সম্পর্ক কোথায়, তা আমার জানা নেই ৷"
রাজকুমার পন্ডিত বলেন, " এই বছর প্রতিমা তৈরি নিয়ে বেশ চিন্তিত আছি। অন্যান্য বছর এই সময় কমপক্ষে আট-দশটি প্রতিমার অর্ডার চলে আসে। কিন্তু এবছর এখনও পর্যন্ত মাত্র দুটি প্রতিমার অর্ডার এসেছে। কোরোনা পরিস্থিতিতে জেলার পুজো কমিটিগুলি পুজো করার সিদ্ধান্ত নিলেও পুজোর বাজেট এক চতুর্থাংশ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আগে থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে আমাদের । অন্যদিকে, প্রতিমার কাজ দেরি করে শুরু হলে সময়মতো কাজ শেষ করা যাবে না।"
হাতে সময় কম, অথচ বাকি বছর গুলির মতো এই বছর প্রতিমা গড়ার খুব একটা অর্ডার আসেনি, এমন কঠিন পরিস্থিতিতে কি করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না মৃৎশিল্পীরা। অন্যান্য প্রতিমা গড়লেও মৃৎশিল্পীদের মূল আয় হয় দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেই। ডাকের সাজ কিংবা হাল আমলের থিমের ঠাকুর তৈরি করেই সারাবছর পেট চলে মৃৎশিল্পীদের। কিন্তু এই বছর কোরোনা ভাইরাস এসে তাদের এক প্রকার কর্মহীন করে দিয়েছে বলেই দাবি শিল্পীদের।