মালদা, 4 জুন : লকডাউন শুরুর 74 দিন পর আজ থেকে ফের মহদিপুর সীমান্তে শুরু হল ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ৷ জেলা প্রশাসনের অনুমতিতে বেশ কিছু নির্দেশিকা পালন করে আজ থেকে প্রতিবেশী দেশে পণ্য পাঠাতে শুরু করেছেন এদেশের ব্যবসায়ীরা ৷ প্রথমে খাদ্যশস্য ও পচনশীল সামগ্রী রপ্তানি করার অনুমতি দিয়েছে মালদা জেলা প্রশাসন ৷ পরবর্তীতে ধাপে ধাপে অন্যান্য সামগ্রী রপ্তানি করা হবে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা ৷
লকডাউন শিথিল হওয়ার পর ইন্দো-বাংলা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ফের চালু করার জন্য দাবি তুলেছিলেন ব্যবসায়ীরা ৷ গত মঙ্গলবার তাঁরা বাণিজ্য শুরু করার উদ্যোগ নেন ৷ শুল্ক দপ্তরের বাধায় তাঁদের পিছিয়ে আসতে হয় ৷ শুল্ক দপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়া তাঁঁরা বাণিজ্য শুরু করতে পারবেন না ৷ কারণ, বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চালু করতে হলে বেশ কিছু সরকারি নির্দেশিকা পালন করতে হবে ৷ তার ব্যবস্থা করার পরিকাঠামো শুল্ক দপ্তরের নেই ৷ ওইদিন ব্যবসায়ীরা শুল্ক দপ্তরের কর্তাদের জানিয়ে দেন, বৃহস্পতিবার থেকে তাঁরা যেকোনও মূল্যে বাণিজ্য চালু করবেন ৷ তার ব্যবস্থা শুল্ক দপ্তরকেই করতে হবে ৷ এই নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয় ৷
অবশেষে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন ৷ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলেন জেলাশাসক ৷ শেষ পর্যন্ত বেশ কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলার কথা জানিয়ে আজ থেকে শর্তসাপেক্ষে বাণিজ্য শুরুর অনুমতি দেয় প্রশাসন ৷ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাণিজ্য শুরুর জন্য 50 জন লরিচালককে চিহ্নিত করতে হবে ৷ তাদের প্রত্যেকের যাবতীয় তথ্য প্রশাসনকে জানাতে হবে ৷ এই চালকরা আজ থেকে 15 দিন মহদিপুর পার্কিং এরিয়া থেকে খাদ্যশস্য ও পচনশীল পণ্যবোঝাই লরি বাংলাদেশের পানামা পোর্টে নিয়ে যাবে ৷ সেখানে লরি রেখে তাঁঁরা হেঁটে ফের এদেশে আসবেন ৷ দেশে ঢোকার সময় তাদের সঠিকভাবে স্যানিটাইজ় করতে হবে ৷ প্রত্যেকের শারীরিক পরীক্ষা করা হবে ৷ এরপর ওই লরি চালকরা আবার দ্বিতীয় ধাপে মালমোঝাই লরি প্রতিবেশী দেশে নিয়ে যাবেন ৷ পানামা পোর্টে পণ্য খালি হলে চালকরা একই পদ্ধতিতে ফাঁকা লরি এদেশে নিয়ে আসবেন ৷ সেইসময় সীমান্তে প্রতিটি লরিকে সঠিকভাবে স্যানিটাইজ় করতে হবে ৷
যাতায়াতের এই 15 দিনে চালকদের নির্দিষ্ট জায়গায় থাখতে হবে ৷ সেখান থেকে তাঁঁরা বের হতে পারবেন না ৷ ওই জায়গায় পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা থাকবে ৷ 15 দিন পর তাদের প্রত্যেককে বাধ্যতামূলকভাবে 14 দিনের হোম কোয়ারানটিনে যেতে হবে ৷ তখন নতুন 50 জন চালক একই পদ্ধতিতে 15 দিন কাজ করবে ৷ জেলা প্রশাসনের জারি করা সব শর্ত মেনে নেন ব্যবসায়ীরা ৷ মহদিপুর এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, “কোরোনা প্রতিহত করার জন্য দেশে লকডাউন শুরু হতে সীমান্ত স্থল বন্দরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায় ৷ এতদিন ব্যবসা বন্ধ থাকায় এর সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকে সমস্যায় পড়েছেন ৷ প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ এই ব্যবসার উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল ৷ বাণিজ্য চালু করার জন্য আমরা একাধিকবার জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছি ৷ শেষ পর্যন্ত 75 দিনের মাথায় জেলা প্রশাসন বাণিজ্য শুরু করার অনুমতি দিয়েছে ৷ তার জন্য জেলাশাসক আমাদের কিছু গাইডলাইন দিয়েছেন ৷ আমরা সেই গাইডলাইন মেনে চলব ৷"
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে আপাতত ভুট্টা ও পিঁয়াজ রপ্তানি শুরু হয়েছে ৷ এরপরে পাথর রপ্তানি করা হবে ৷ আপাতত প্রতিদিন 100 থেকে 150টি লরি বাংলাদেশে পাঠানো হবে ৷ বাণিজ্য শুরু করার অনুমতি দেওয়ায় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান প্রসেনজিৎবাবু । মহদিপুর ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ভূপতি মণ্ডল, সীমান্ত ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক হৃদয় ঘোষ, গৌড় মালদা ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সমীর ঘোষ এক মত পেশ করেছেন ৷