কুরুক্ষেত্র (হরিয়ানা), 10 ডিসেম্বর: হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গীতা মহোৎসব 2023 ৷ যেখানে নজর কাড়ছে বাংলার স্টল । আসলে আন্তর্জাতিক এই মেলায় দেশের বিভিন্ন জায়গার শিল্পীরা নিজেদের হস্তশিল্প নিয়ে পসরা সাজিয়েছেন ৷ বাদ পড়েনি বাংলাও। সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ বাংলার শিল্পীদের পসরাতেই ৷ সেখানকার ধান দিয়ে তৈরি দেবীমূর্তি টানছে সবাইকে ৷ এটি দেখতেই সকলে ভিড় জমাচ্ছেন বাংলার স্টলে ৷ বিক্রিও হচ্ছে দেদার ৷
বাংলার ভাস্কর কৃষ্ণ সিং জানান, গত কয়েক দশক ধরে তিনি এরকম প্রতিমা তৈরি করছেন ৷ গত 15 বছর ধরে আন্তর্জাতিক গীতা মহোৎসবে আসছেন এবং তাঁর শিল্প প্রদর্শন করছেন । আগে লোহা, পাথর, মাটি ও কাঠ দিয়ে মূর্তি তৈরি করতেন ৷ কিন্তু সেগুলো অনেক পুরনো হয়ে গিয়েছে বলে ক্রেতাদের জন্য নতুন কিছু মূর্তি তৈরির কথা ভাবছেন । ধানের তৈরি দেবীমূর্তি 500 টাকা থেকে 700 টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে ৷ তবে তিনি মানুষের জন্য বাজারে আলাদা কিছু নিয়ে এসেছেন, যা লোকেরা খুব পছন্দ করছে ।
তাঁর কথায়,"মাটি বা অন্যান্য জিনিস দিয়ে প্রতিমা বানাতে সময় কম লাগে ৷ কিন্তু ধান দিয়ে প্রতিমা বানাতে সময় লাগে । দিনে মাত্র দুটি মূর্তি তৈরি করা যায় । প্রায় 6 থেকে 7 ঘণ্টায় একটি প্রতিমা তৈরি হয় । তাই একজন মানুষ দিনে মাত্র দুটি মূর্তি তৈরি করতে পারে । পোড়ামাটির প্রতিটি ধান ব্যবহার করে এই মূর্তিটিকে আকার দেওয়া হয়েছে । প্রতিমার সাজসজ্জাও করা হয়েছে ধান দিয়ে ।"
তিনি আরও জানান, এতে তাঁর পরিবারের সকল সদস্য তাঁকে সহযোগিতা করেন । প্রথমদিকে শুধু পোড়ামাটির প্রতিমা তৈরি করলেও এখন আরও অনেক কিছু থেকে প্রতিমা তৈরি করা শুরু করেছেন । তাঁর পরিবারে 10 জনেরও বেশি সদস্য রয়েছে ৷ তাঁরা সবাই বহু বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন । এটা তাঁদের পূর্বপুরুষের কাজ ।
গুরুত্বপূর্ণ দিক হল হরে রাম, হরে কৃষ্ণ, রাধে রাধে, চৈতন্য মহাপ্রভু এবং কৃষ্ণের খেলনা বিশেষভাবে পোড়ামাটির তৈরি । এই সমস্ত খেলনা আন্তর্জাতিক গীতা মহোৎসবের জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৈরি করে আনা হয়েছে । সেই কারণে গীতা জয়ন্তীতে আসা পর্যটকরা তাঁর স্টলে এসেই তিমা দেখছেন ও কেনাকাটা করছেন ।
তিনি আরও জানান, পোড়ামাটির পাশাপাশি একক কাঠ থেকেও দেবীমূর্তি তৈরি করেন । একক কাঠকে খুব শুভ বলে মনে করা হয় । এই কারণেই বেশিরভাগ বাড়িতে কাঠের তৈরি এই ছবি তোলা হয় এবং মাতৃদেবীর পূজা করা হয় । তাঁর বাবা গুরান সিং পশ্চিমবঙ্গ সরকার 1992 সালে রাজ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন । পুরস্কার পাওয়ার পরে তিনি সমগ্র রাজ্যে প্রচুর প্রশংসা করেছিলেন ৷ যার জন্য পরিবারের মনোবল বেড়ে যায় এবং পরিবারের সকল সদস্য মিলে এই কাজটিকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যায় ৷
এবারের উৎসবে পোড়ামাটির কৃষ্ণের খেলনা, হরে রাম হরে কৃষ্ণ, রাধে-রাধে, গণেশ ও চৈতন্য মহাপ্রভুর দল তৈরি করে আনা হয়েছে । এছাড়াও খেলনার মাধ্যমে সমাজ থেকে হারিয়ে যাওয়া গ্রামের কারুকাজ দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে । তিনি এই উৎসবে আসার জন্য অপেক্ষা করেন কারণ এখানকার পর্যটকরা তার শিল্পকে অনেক পছন্দ করেন ।
গত কয়েক দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের সমস্ত বড় মেলায় কারুশিল্প প্রদর্শন করছেন । যাই হোক, তিনি করোনার পরে এই বছর আন্তর্জাতিক গীতা মহোৎসবে এসেছেন ৷ এক পর্যটক অনুরাধা জানান, প্রথম দর্শনেই তিনি এটি পছন্দ করেন ৷ তাই তিনি ধানের তৈরি এই মূর্তিটি কেনেন । আরেক পর্যটক ভারতীর কথায়,"উনি খুব ভালো প্রতিমা এনেছেন । দেব-দেবীর মূর্তি খুব ভালোভাবে তৈরি ৷ যার কারণে মানুষও তাঁর তৈরি মূর্তি কিনছেন ৷"
আরও পড়ুন :
1 পিতৃপক্ষে গয়ায় ভিড় বাড়ছে বিদেশিদের, পিণ্ডদানে যোগ দিলেন জার্মানিরা
2 নতুন প্রজন্মকে শাস্ত্রের জ্ঞান দিতে ডিসেম্বরে এক লক্ষ সাধুর গীতা পাঠ