লখনউ, 16 অক্টোবর: জাদুদণ্ড ছুঁইয়ে রাতারাতি কংগ্রেসকে চাঙ্গা করা সম্ভব নয় বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি । এ বার কংগ্রেসের হাঁড়ির খবর সামেন এনে কার্যত বিস্ফোরণ ঘটালেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর । তাঁর দাবি, কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দেওওয়ার পক্ষে এক্কেবারে উপযুক্ত প্রিয়ঙ্কা গান্ধি বঢরা । নেত্রী হওয়ার সবরকম ক্ষমতা রয়েছে তাঁর । আর বোনের এই নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নিয়েই কিছুটা হলেও শঙ্কিত তাঁর সাংসদ দাদা রাহুল গান্ধি ।
একের পর এক দলকে নির্বাচনী বৈতরণী পার করিয়ে দেওয়া প্রশান্তকে রাজা মিডাস-এর তকমা দিয়ে ফেলেছেন অনেকেই । এর পিছনে যুক্তি হল, তিনি যা ছুঁয়ে দেখেন, তা-ই সোনা হয়ে যায় । কংগ্রেসও সেই সোনার ফলন ছুঁয়ে দেখতে চাইলেও, যত দিন যাচ্ছে দু’পক্ষের মধ্যে বৈরিতা ক্রমশ প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে ৷ তা নিয়ে কংগ্রেস খানিকটা নমনীয় হলেও, কোনও রাখঢাক করছেন না প্রশান্ত ৷
কিন্তু এ বার কংগ্রেসের অস্বস্তি বহু গুণ বাড়িয়ে দিলেন ভোটকুশলী ৷ কারণ একটি টিভি চ্যানেল-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করলেন, প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে তাঁর ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধির যথেষ্ট মিল রয়েছে ৷ শুধু চেহারার মিলই নয়, ইন্দিরার মতোই প্রিয়ঙ্কার মধ্যে যোগ্য নেত্রী হয়ে ওঠার ঝলক দেখতে পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ ৷ কিন্তু প্রিয়ঙ্কার এই ক্ষমতাই কোথাও না কোথাও ভয় ধরাচ্ছে রাহুলের মনে ৷ তার জন্যই সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও 2017 সালে উত্তরপ্রদেশে প্রিয়ঙ্কাকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে দেননি তিনি ৷
কংগ্রেসকে পুনরুজ্জীবিত করতে রাহুলের সঙ্গে নিজের সাক্ষাতের কথাও তুলে ধরেন প্রশান্ত ৷ তিনি জানান, রাজনৈতিক দলের হয়ে রণকৌশল তৈরি করাই তাঁর কাজ ৷ কিন্তু পটনায় সাক্ষাতের সময় রাহুল তাঁকে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন ৷ তাতে ধন্দে পড়ে যান তিনি ৷ সেকথা উল্লেখ করে প্রশান্ত বলেন, "তাই সহযোগীদের পরামর্শ নিই ৷ সেই সময় উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের জমি একেবারেই মজবুত ছিল না ৷ তিন মাস ধরে তাই কংগ্রেসকে চাঙ্গা করার নীল নকশা তৈরি করি ৷ তাতে প্রিয়ঙ্কাকে দলের মুখ করার প্রস্তাব দিই ৷ সোনিয়া গান্ধির হাতে নির্বাচনী প্রচারের রাশ তুলে দিতে চেয়েছিলাম ৷ কিন্তু আমার সেই প্রস্তাব কংগ্রেসের মনঃপুত হয়নি ৷"
প্রশান্ত জানিয়েছেন, তাঁর প্রস্তাব নিয়ে টানা তিন মাস ধরে আলাপ আলোচনা সারে কংগ্রেস ৷ তার পর যখন প্রস্তাবে সায় দিল, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে ৷ সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের জোটও ফলদায়ক হয়নি ৷
প্রশান্তর এই মন্তব্যে কার্যতই অস্বস্তি বাড়ল কংগ্রেসের ৷ কারণ দলের সভাপতি পদ নিয়ে এমনিতেই টানাপড়েন চলছে শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে ৷ কারণ লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের দায় নিয়ে রাহুল পদত্যাগ করলে, 2019-এর অগস্টে সোনিয়াকে অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি নির্বাচিত করা হয় । তার পর দু’বছর কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত পূর্ণমেয়াদি সভাপতি নিয়োগ করতে পারেনি কংগ্রেস । এ নিয়ে অসন্তোষের মুখে পড়ে শনিবার যদিও কংগ্রেস নেতৃত্বকে সোনিয়া জানিয়েছেন, তিনিই দলের পূর্ণ সময়ের সভাপতি, কিন্তু তাতেও ক্ষোভ প্রশমিত হচ্ছে না ।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশান্তর মন্তব্য আগুনে ঘি পড়ার কাজ করতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল । কারণ প্রিয়ঙ্কাকে দলের নেত্রী হিসেবে সামনে আনার পক্ষে দীর্ঘ দিন ধরে সওয়াল করে আসছেন কংগ্রেসের একটা বড় অংশের নেতানেত্রী থেকে নীচুস্তরের কর্মীরাও । রাহুলের বিরুদ্ধে যেখানে লাগাতার গা ছাড়া মনোভাবের অভিযোগ উঠেছে, সেখানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া লখিমপুর খেরি কাণ্ড হোক বা হাথরস ধর্ষণ কাণ্ড, বিজেপি-র বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রচারের আলো কার্যত শুষে নিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা ।
লখিমপুর খেরিতে নিহত কৃষকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে সম্প্রতি যোগী আদিত্যনাথের পুলিশের হাতে বন্দিও হন প্রিয়ঙ্কা । কিন্তু তাঁর নাছোড়বান্দা মনোভাবই যোগী সরকারকে বাধ্য করে তাঁকে পীড়িতদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দিতে । একই ভাবে হাথরস কাণ্ডে প্রিয়ঙ্কার জামা ধরে টানায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল বিজেপি-কে । সেই তুলনায় দু’ক্ষেত্রেই রাহুলকে তুলনায় ম্রিয়মান ভমিকায় দেখা গিয়েছে । তাই বোনকে নিয়ে রাহুল হীনম্মন্যতায় ভোগেন বলে দাবি করে, প্রশান্ত কংগ্রেসের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিলেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ।