হায়দরাবাদ, 23 মার্চ: মোদি পদবি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছিল রাহুল গান্ধির (Rahul Gandhi) বিরুদ্ধে ৷ 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Elections 2019) প্রচারের সময় তিনি ওই মন্তব্য করেন ৷ সেই নিয়ে গুজরাতের বিজেপি (BJP) বিধায়ক পূর্ণেশ মোদি তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মানহানির মামলা (Criminal Defamation Case) করেছিলেন ৷ আরও একটা লোকসভা নির্বাচনের প্রায় বছর খানেক আগে সেই মামলার রায় বের হল বৃহস্পতিবার ৷ যে রায় রাহুল গান্ধির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল ৷
সুরাতের আদালত বুধবারই কেরালার ওয়েনাড়ের কংগ্রেস সাংসদকে এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছিল ৷ বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছে আদালত ৷ সেই রায়ে রাহুলের দু’বছরের কারাদণ্ড হয়েছে (Rahul Gandhi conviction) ৷ সঙ্গে 50 হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে ৷ তবে আদালত তাঁকে জামিনও দিয়েছে ৷
কিন্তু আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে আদালতের এই রায়ের জন্য সাংসদ পদ খোয়াতে পারেন রাহুল গান্ধি (Disqualification from Parliament) ৷ 1951 সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারেই তাঁর সাংসদ পদ বাতিল হতে পারে ৷ কারণ, ওই আইনের 8(3) ধারা অনুযায়ী, যদি কোনও সাংসদ বা বিধায়ক কোনও অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন ও তাঁর দু’বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ড হয়, তাহলে আইনসভা থেকে তাঁর সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে ৷ যদি এমনটা হয়, তাহলে শূন্য হয়ে যাবে কেরালার ওয়েনাড় লোকসভা আসন ৷ সেখানে উপ নির্বাচনের প্রয়োজন পড়বে ৷
তবে, রাহুল গান্ধির আইনি দলের তরফে জানানো হয়েছে যে তারা এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আবেদন করার পরিকল্পনা করছে । তারা শাস্তি স্থগিত করার আবেদন করবেন ৷ উচ্চ আদালতে সুরাহা না হলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে তারা ৷ কিন্তু উচ্চ আদালতে যদি রাহুলের আবেদন খারিজ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আগামী আট বছর তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না ৷
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে কী এমন বলেছিলেন যে তাঁকে দু’বছরের কারাদণ্ড দিল আদালত ? জানা গিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছিল 2019 সালের 13 এপ্রিল ৷ সেদিন কর্নাটকের কোলারে একটি নির্বাচনী সমাবেশে অংশ নেন রাহুল ৷ সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ শানাতে গিয়ে টেনে আনেন ললিত মোদি ও নীরব মোদির প্রসঙ্গ ৷ বলেন, "নীরব মোদি, ললিত মোদি, নরেন্দ্র মোদি... তাঁদের সবারই কীভাবে একই মোদি পদবি হয় ? সব চোরের কীভাবে একই মোদি পদবি হয় ?’’
রাহুলের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে মামলা দায়ের করেছিলেন বিজেপি বিধায়ক পূর্ণেশ মোদি ৷ তাঁর অভিযোগ ছিল, রাহুলের এই মন্তব্য মানহানিকর ও মোদি পরিবারের সুনামকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে । রাহুল যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেন ৷ তিনি যুক্তি দেন যে তিনি তাঁর মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগ করছেন। তবে, আদালত তাঁকে ফৌজদারি মানহানির জন্য দোষী সাব্যস্ত করে এবং সেই অনুযায়ী তাকে সাজা দেয় । যদিও আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে ভারতীয় দণ্ডবিধির 499 ধারার অধীনে একটি ফৌজদারি মানহানির মামলায় দুই বছরের শাস্তি অত্যন্ত বিরল ।
এই নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে ৷ বিজেপি বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা প্রকাশ করেছে ৷ আর কংগ্রেস এই রায়ের পিছনে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব দেখতে পাচ্ছে ৷ আর এর মধ্য়েই জল্পনা শুরু হয়েছে যে সংসদের তরফে তড়িঘড়ি কি রাহুলের সাংসদপদ বাতিল করে দেওয়া হবে ? কারণ, এদিন লোকসভা সন্ধ্য়া 6টা পর্যন্ত মুলতুবি হয়েছে ৷ সাধারণত দুপুরের পর অধিবেশন পরদিন পর্যন্ত মুলতুবি হয় ৷ কিন্তু এক্ষেত্রে সন্ধ্যায় আবার অধিবেশন বসার কথা ঘোষণা হওয়ায় এই নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে ৷
আরও পড়ুন: সাজা শুনে রাহুলের মুখে অহিংসার কথা, ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব কংগ্রেস-কেজরিওয়ালের