সুপ্রিম কোর্টের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি উচ্চ আদালত বিরল রোগ নির্ণয় এবং তার চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে জরুরি পর্যবেক্ষণ করেছে । আদালত গুলি রোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে ।
বিরল রোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় এবং অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ পেতে অনেক সমস্যা হয় ৷ বছরের পর বছর বিষয়টি নিয়ে রোগী এবং তাঁর পরিবারকে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় ৷ আবার উপলব্ধ ওষুধগুলির দাম অত্যন্ত বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় ৷ 2013 সালে জাতীয় পরিকল্পনা অনুসারে বিষয়টির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় ৷ বেশ কিছু সংশোধনমূলক পদক্ষেপও করা হয়েছে, যাতে সাধারণের ক্রয় ক্ষমতায় মধ্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যায় ৷
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড. হর্ষবর্ধন বলেন, বিরল রোগের বিষয়টি নিয়ে 2021 সাল পর্যন্ত অনুমোদন করা হয়েছে ৷ এই ঘোষণা করার সময় তিনি একথাও জানিয়েছিলেন, বিরল রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেওষুধের জোগান নিশ্চিত করার জন্য ওষুধের স্থানীয় উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ জানিয়েছিলেন চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয় কম করার কথা ৷ যাতে দেশি প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ওষুধ তৈরি করা যায় ৷ সেবিষয় গুরুত্ব দেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ৷ পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছিল, এই প্রকল্প শুধুমাত্র বিপিএল (অর্থাৎ যাঁরা দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করেন) এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না ৷ প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনার সুবিধা 80 শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে ৷
কর্নাটক বাদে ভারতের আর কোনও রাজ্যে এমন কোনও নীতি-পরিকল্পনা নেই, যা বিরল রোগে আক্রান্তদের পক্ষে উপকারী হতে পারে ৷ নতুন নীতিতে কেন্দ্রের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, বিরল রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে 20 লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা বাড়ানো হয়েছে ৷ একথা স্বীকার করতেই হবে, এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে ।
আরও পড়ুন :ভোট মরশুমে করোনায় রাশ টানতে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপের আবেদন
বিশ্বব্যাপী জেনেটিক ওষুধের মোট বাজারের মাত্র 20 শতাংশ ভারতের দখলে । ভ্যাকসিনের মোট বাজারের 62 শতাংশ অংশীদারিত্বের সঙ্গে ভারত বিশ্বের ফার্মাসি বাজারে নিজেদের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিয়েছে । এখন প্রশ্ন, তাহলে বিরল রোগের ক্ষেত্রে ওষুধের এত অভাব কেন ? এই বিলম্বের কারণ, ভারতে ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে অক্ষমতা নয় । এমনকি, ভারতের ফার্মেসি শিল্প এবং বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলি দ্বিধা করছে না এই জাতীয় ওষুধ তৈরিতে দ্রুত পদক্ষেপ করার বিষয়ে । সাধারণ রেগের ওষুধের থেকে এই জাতীয় রোগের ওষুধের সীমাবদ্ধতা তাদের অগ্রগতির প্রধান বাঁধা । ফল স্বরূপ ভারত কেবল মাত্র আমদানির উপর নির্ভরশাীল । এর হাত থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়, বিদেশি সংস্থাগুলির উপর থেকে নির্ভরতা পুরোপুরি কমিয়ে দেশিয় সংস্থার গবেষণার উপর বেশি করে জোর দেওয়া-গবেষণার কাজে বেশি করে উৎসাহ দেওয়া ।
এককালীন চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ 20 লাখ টাকার আর্থিক সাহায্যের সিদ্ধান্তের সময় সরকারি সূত্রগুলি নিশ্চিত ভাবেই সত্যতা যাচাই করেনি ।
আরও পড়ুন : রাস্তার নির্মাণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, রোজ 30 কিলোমিটার জাতীয় সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে
উদাহরণ স্বরূপ বলা চলে, 10 কেজি ওজনের কোনও শিশু যদি বিরল রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে তার বার্ষিক চিকিৎসা খরচ এক কোটি টাকা । শিশুটির বয়স এবং ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনও বাড়তে শুরু করবে । একটি সাধারণ পরিবার কি এত টাকা ব্যয় করতে পারে? জাতীয় নীতি আবার আমৃত্যু- চলতে থাকা রোগগুলির ক্ষেত্রে নীরব থেকেছে । সরকার কর্পোরেট সংস্থা এবং ব্যক্তিদের অনুদান সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছে । কেস ভিত্তিতে সাহায্যের ক্ষেত্রে সরকারের উচিত একটু নমনীয় হওয়া ।
পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্ব জুড়ে বিরল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মোট সংখ্যা আমেরিকার মোট জনসংখ্যার থেকে বেশি । ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তবাজ্য, কানাডা, বুলগেরিয়া এবং আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলি ইতিমধ্যেই বিরল রোগ আটকে রাখার কৌশল কার্যকর করেছে । নিজস্ব যোগ্যতায় ভারতের উচিত এই দেশগুলি থেকে শিক্ষা গ্রহন, এবং একটি নিখুঁত কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে আরও এগিয়ে যাওয়া ।