যোগাসনের ভাষায়, ঘুম হল এমন এক ধ্যান, যা সত্তাকে সারিয়ে তোলে এবং প্রতিদিন এই গ্রহের মানুষ তার মধ্যে দিয়ে যায় । শরীরের ঘড়ি এমনভাবে তৈরি, যাতে তাকে চাঙ্গা রাখতে এবং সঠিকভাবে কাজকর্ম চালাতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন । এব্যাপারে আরও চিত্তাকর্ষক তথ্যের জন্য ইটিভি ভারত সুখীভব কথা বলেছিল অল্টারনেটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, যোগ প্রশিক্ষক এবং ফিজিওথেরাপিস্ট, ড. জাহ্নবী কাঠরানির সঙ্গে ।
অনিদ্রা হল এমন এক সমস্যা যাতে ঘুমোনো, ঘুমিয়ে থাকা এবং ঘুম সম্পূর্ণ করতে সমস্যা হয় । এমনকী যথেষ্ট সময় ঘুমের পরও সেই ব্যক্তি ঢুলতে থাকেন । এর সঙ্গে যুক্ত সকালে শরীর আড়ষ্ট হয়ে থাকে এবং ক্লান্তি ও উদ্যমের অভাব। সারাদিন ধরে ঝিমুনি থাকে । মাঝারি ব্ল্যাকআউট হতে থাকে। কখনও কখনও সারা শরীরে আড়ষ্টতা টের পাওয়া যায় ।
অ্যাকিউট: প্রাথমিকভাবে এক্ষেত্রে মাসে বা সপ্তাহে দু-এক রাত ঘুমের অভাব বা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এতে আপনার রোজকার জীবনে প্রভাব পড়তে, অথবা নাও পড়তে পারে ।
ক্রনিক: সপ্তাহে তিন বা তার বেশি রাত এমন হলে, এবং সেটা তিন মাস বা তার বেশি সময় ধরে চললে বুঝতে হবে সমস্যা রয়েছে। এতে স্বাস্থ্য ও দৈনন্দিন জীবন – দুই-ই বিঘ্নিত হয় ।
ঘুম হল শরীর ও মনকে ভালভাবে কাজ করার জন্য বিশ্রাম দেওয়া, যাতে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন এবং মেটাবলিজম ক্ষমতা নিয়ে চাঙ্গা থাকতে পারে । ঘুমের ক্ষেত্রে সামান্য অসুবিধা হলেই সতর্ক হয়ে একজন পেশাদারকে দেখানো উচিত । যোগ সম্পর্কিত সমস্ত প্রাচীন পুঁথিতে ভাল ঘুমের জন্য বিভিন্ন পথ বলা আছে ।
আহার-বিহার: নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া ও পুষ্টি সঞ্চয় করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আপনি যা খান, সেটা আপনার শরীরের অংশ হয়ে যায় । আপনার ভাবনাচিন্তা হল আপনার মনের খাবার, যা সময়ে ঘুমোনোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সদর্থক ভাবনা এবং আবেগকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ।
আরও পড়ুন : চুলপড়া কী ?
যম-নিয়ম: যোগ শুরু হয় আত্মশৃঙ্খলা এবং সামাজিক শৃঙ্খলাপরায়ণতার মধ্যে দিয়ে, যাতে সঠিক রুটিন মেনে এবং জীবনযাত্রার অদল-বদল করে করা যেতে পারে। প্রত্যেক মানুষই অভিনব, তাই সবারই নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন মেনে চলার মধ্যে দিয়ে নিজস্বতা বজায় রাখতে হবে ।
প্রাণায়ম: সঠিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণের মধ্যে দিয়ে শরীরের শক্তিকে নির্দিষ্ট পথে চালিত করা যায়, পাশাপাশি শরীরে সঠিক মাত্রায় অক্সিজেন বজায় রাখা সহ বিভিন্ন সুফল মেলে । ভাল ঘুমের জন্য এগুলো প্রয়োজনীয়। এর মধ্যে রয়েছে ভস্ত্রিকা, অনুলোম-বিলোম, ভ্রামরী এবং শীতলি ।
যোগ-শোধন: বাত-পিত্ত-কফের (প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মতে যে তিনটি উপাদান দিয়ে শরীর তৈরি )ভারসাম্য বজায় রাখতে কপালভাতি, বমনধৌতি (বমির মাধ্যমে শরীরকে পরিচ্ছন্ন রাখা), বিভিন্ন ধরণের নেতি (নাক পরিষ্কার রাখা), শঙ্খ প্রক্ষালন (পাচন নালী পরিষ্কার রাখা) করা যায় । কারণ বাত-পিত্ত-কফের ভারসাম্য নষ্ট হলেই ঘুমের ক্ষতি হয় ।
যোগাসন: যোগাসনে শরীরের ব্যাথা চলে যায় এবং ফিটনেস আসে। এতে ঘুমও ভালো হয় ।
আরও পড়ুন : রুদ্রাক্ষের ওষধিগুণ
প্রত্যাহার: ইন্দ্রিয়ানুভূতিকে প্রত্যাহার করা। আধুনিক পরিভাষায় বললে কম প্রয়োজনীয়তা ও সম্পদের দিকে মন দেওয়ার বদলে জীবনে শান্তির দিকে মনোযোগ দেওয়া । এটা এমনই এক শান্তির পথ, যা আপনাকে ঈর্ষা, হীনমন্যতা, অহঙ্কারের মতো অস্বাস্থ্যকর মনোভাবগুলো থেকে রক্ষা করে ।
ধ্যান: মনের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আবেগকে শক্তিশালী করার অনেক পদ্ধতি রয়েছে। এতে স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ব্যক্তিত্বেরও উন্নতি হয় । আপনি কোনও পেশাদার প্রশিক্ষক বা ওয়াকিবহাল ব্যক্তির থেকে আপনার পছন্দমতো পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন। ধ্যান গভীর ঘুমে সাহায্য করে এবং আস্তে আস্তে অনিদ্রা থেকে মুক্তি দেয় ।
কোনও প্রশ্ন থাকলে ড. জাহ্নবী কাঠরানির সঙ্গে jk.swasthya108@gmail.com -এ যোগাযোগ করুন ৷