নয়াদিল্লি, 22 জুলাই: হিসেবটা কষাই ছিল ৷ প্রত্যাশিত ভাবেই রাম নাথ কোবিন্দের উত্তরসূরী হলেন দ্রৌপদী মুর্মু (Madam President Murmu)৷ ওডিশার কাউন্সিলর হিসেবে শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক কেরিয়ার (President Election 2022)৷ সেখান থেকে দেশের পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন দ্রৌপদী মুর্মু ৷ তিনিই দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি এবং প্রতিভা পাতিলের পর দেশের আইনবিভাগ, শাসনবিভাগ ও বিচারবিভাগের আনুষ্ঠানিক প্রধানের পদে বসলেন দ্বিতীয় কোনও মহিলা ৷ তবে একসময়ে তীব্র শোক বিদ্ধ করেছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে (President Droupadi Murmu)৷
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর দেখা যায় অক্লেশেই বিরোধী পদপ্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে অনেকটা পেছনে ফেলে দেশের কনিষ্ঠতম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন 64 বছরের দ্রৌপদী মুর্মু ৷ তিনি দেশের স্বাধীনতার পর জন্মানো প্রথম রাষ্ট্রপতি ৷ 25 জুলাই তিনি শপথ নিতে চলেছেন ৷
রাজনীতির আঙিনায় লো-প্রোফাইল এই নেত্রী গভীর ভাবে ধার্মিক এবং ব্রাহ্ম কুমারী ধ্যান পদ্ধতির একনিষ্ঠ অনুগামী ৷ 2009-2015 সাল - মাত্র 6 বছরের মধ্যে স্বামী, দুই পুত্রসন্তান, মা ও বাবাকে হারানোর পর তিনি নিজেকে বেঁধে ফেলেন ধর্মাচরণে ৷ কালাহান্ডির বিজেপি সাংসদ বসন্ত কুমার পাণ্ডা মুর্মুর সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, "তিনি খুবই ধার্মিক ও মৃদুভাষী ৷"
2016 সালে দূরদর্শনে একটি সাক্ষাৎকারে তাঁর জীবনের ট্র্যাজেডির কথা তুলে ধরেছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু ৷ 2009 সালে তাঁর পুত্রকে হারানোর পর কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন তা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, "হতাশায় ভেঙে পড়েছিলাম ৷ ছেলের মৃত্যুর পর রাতের পর রাত জেগে কাটিয়েছি ৷ সেই সময় ব্রাহ্ম কুমারীতে গিয়ে বুঝতে পারি থেমে থাকলে চলবে না ৷ আমায় জীবনে এগিয়ে যেতে হবে ৷ আমার আরও দুই পুত্র ও এক কন্যার জন্য আমায় বেঁচে থাকতে হবে ৷" তাঁর কন্যা ইতিশ্রী বর্তমানে ব্যাংককর্মী ৷ ওডিশা বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি মনমোহন সামাল বলেছিলেন, "তিনি কঠিন যন্ত্রণা ও সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, কিন্তু প্রতিকূলতায় কখনও ভেঙে পড়েননি ৷"
আরও পড়ুন: রাইসিনায় দ্রৌপদী মুর্মু, অভিনন্দন মোদি-মমতার
21 জুন তিনি এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর থেকে জনসমক্ষে কোনও মন্তব্য করতে দেখা যায়নি তাঁকে ৷ তাঁর জয় একপ্রকার নিশ্চিতই ছিল ৷ বিজেডি, শিব সেনা, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, বিএসপি, টিডিপি-সহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি বিরোধী শিবিরে থাকা দলেরও সমর্থন গিয়েছে আদিবাসী প্রার্থীর দিকে ৷
1997 সালে শুরু হয় দ্রৌপদী মুর্মুর রাজনৈতিক কেরিয়ার ৷ রাইরাংপুর নোটিফায়েড এরিয়া কাউন্সিলের নির্বাচনে বিজেপি কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন ৷ 2000 সাল থেকে 2004 সাল পর্যন্ত ওডিশার বিজেডি-বিজেপি জোট সরকারের মন্ত্রী ছিলেন তিনি ৷ এরপর 2015 সালে ঝাড়খণ্ডে রাজ্যপাল হিসেবে তাঁকে নিয়োগ করা হয় ৷ 2021 সাল পর্যন্ত তিনি সেই পদে ছিলেন ৷ সড়ক ও বন্দরের মতো পরিকাঠামো উন্নয়নে বেশ কিছু কাজ রয়েছে সাঁওতালি ও ওড়িয়া ভাষায় বাগ্মী দ্রৌপদী মুর্মুর ৷ রাজ্যপালের মেয়াদ ফুরোনোর পর মেডিটেশন ও সমাজসেবায় মনোনিবেশ করেন তিনি ৷
ময়ূরভঞ্জের প্রত্যন্ত জেলার বাসিন্দা দ্রৌপদী ভুবনেশ্বরের রমাদেবী মহিলা কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন ৷ ওডিশা সরকারের সেচ ও শক্তি দফতরে জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন ৷ রাইরাংপুরের শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন সেন্টারে সাম্মানিক সহকারী শিক্ষিকা হিসেবেও বেশ কিছুদিন পড়িয়েছেন তিনি ৷ 2007 সালে ওডিশা বিধানসভা তাঁকে সেরা বিধায়ক হওয়ার জন্য নীলকান্ত পুরস্কারে ভূষিত করে ৷ বিজেপিতে তিনি ওডিশার তফশালি জাতি মোর্চার সভানেত্রী ছিলেন ৷ বিজেপির এসটি মোর্চার জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন 2013 সালে ৷