ETV Bharat / bharat

এশিয়ার সবচেয়ে বড় ও কম খরচের অপটিক্যাল স্পেকট্রোগ্রাফ তৈরি ভারতীয় বিজ্ঞানীদের

৩.৬ এম দেবস্থল অপটিক্যাল টেলিস্কোপ কার্যকর করার কাজ সফল ভাবে শেষ হয়েছে । ভারতীয় বিজ্ঞানীরা এটার পরিকল্পনা করেছে এবং তৈরি করেছে । এটা শুধু ভারতের নয়, বরং এশিয়ার সবচেয়ে বড় এবং সব থেকে কম খরচে তৈরি অপটিক্যাল স্পেকট্রোগ্রাফ । একেবারে নতুন মহাবিশ্বের দূরবর্তী কোয়ারস এবং ছায়াপথ নিয়ে পড়াশোনা, ছায়াপথের চারপাশে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলগুলির আশপাশের অঞ্চল, সুপারনোভা এবং অনেক বেশি পরিমাণে শক্তিযুক্ত গামা-রে ফেটে যাওয়ার মতো মহাজাগতিক বিস্ফোরণ, তরুণ এবং বিশাল নক্ষত্র এবং অজ্ঞাত বামন ছায়াপথগুলি নিয়ে পড়াশোনা করতে কার্যকরী ভূমিকা নেবে এই স্পেকট্রোগ্রাফ ।

অপটিক্যাল স্পেকট্রোগ্রাফ
অপটিক্যাল স্পেকট্রোগ্রাফ
author img

By

Published : Mar 6, 2021, 7:55 PM IST

নয়াদিল্লি : সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তিগত উন্নতির জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী । সেই আহ্বানকে মাথায় রেখে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা দেশেই সবচেয়ে কম খরচে অপটিক্যাল স্পেকট্রোগ্রাফ তৈরির পরিকল্পনা করেছেন এবং তা তৈরি করেছেন । এটা একেবারে নতুন মহাবিশ্বের দূরবর্তী কোয়ারস এবং ছায়াপথে অদৃশ্য আলোর উৎসগুলি আবিষ্কার করতে পারে, ছায়াপথের চারপাশে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলগুলির আশপাশের অঞ্চল এবং মহাজাগতিক বিস্ফোরণের সন্ধান করতে পারে ।

লক্ষণীয় যে এই স্পেকট্রোগ্রাফকে বাইরে থেকে আমদানি করলে, যা খরচ হত, এই ক্ষেত্রে তার থেকে 2.5 গুণ কম খরচ হয়েছে । আর এক ফোটন প্রতি সেকেন্ডের মতো কম ফোটন রেটে এটা আলোর উৎস সনাক্ত করতে পারে । যন্ত্রটি তৈরির খরচ প্রায় চার কোটি টাকা ।

ভারতে যত স্পেকট্রোগ্রাফ রয়েছে, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় । এটাকে উত্তরাখণ্ডের নৈনিতালের কাছে অবস্থিত কোনও জায়গায় ৩.৬ এম দেবস্থল অপটিক্যাল টেলিস্কোপ (ডিওটি) সফলভাবে কার্যকর করা হয়েছে । তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই স্পেকট্রোগ্রাফটি কেবলমাত্র দেশের মধ্যে নয়, এশিয়াতেও সবচেয়ে বড় ।

সাম্প্রতিক অতীত পর্যন্ত ব্যয়বহুল এই স্পেকট্রোগ্রাফগুলি বিদেশ থেকে আমদানি করা হত । অ্যারি-দেবস্থল ফেন্ট অবজেক্ট স্পেকট্রোগ্রাফ অ্যান্ড ক্যামেরা (এডিএফওএসসি) নামে অভিহিত এই অপটিক্যাল স্পেকট্রোগ্রাফটি নৈনিতালের আর্যভট্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ অবজারভেসনাল সায়েন্সেস (এআরআইইএস)-এ দেশীয় প্রযুক্তিতে পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং তৈরি করা হয়েছে । এআরআইইএস হল ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ (ডিএসটি) এর একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান । এআরআইইএস এর বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও বৈজ্ঞানিক দল ড. অমিতেশ ওমরের নেতৃত্বে কাজ করেন । তাঁরা স্পেকট্রোগ্রাফ এবং ক্যামেরার বিভিন্ন অপটিক্যাল, যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করেন এবং তার বিকাশ ঘটান ।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একেবারে নতুন মহাবিশ্বে দূরবর্তী কোয়ারস এবং ছায়াপথ, গ্যালাক্সির চারপাশে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের আশপাশের অঞ্চল, কসমিক বিস্ফোরণ এবং অত্যন্ত শক্তিশালী গামা-রে বিস্ফোরণ, তরুণ এবং বিশাল নক্ষত্র এবং অজ্ঞাত বামন ছায়াপথ নিয়ে গবেষণা করার জন্য স্পেকট্রোগ্রাফ ব্যবহার করেন ।

এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করে এআরআইইএস এর ডিরেক্টর অধ্যাপক দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভারতে এডিএফওএসসি এর মতো জটিল যন্ত্রপাতি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা আসলে অ্যাসট্রোনমি ও অ্যাসট্রোফিজিক্সের ক্ষেত্রে ‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ।’’

কার্যকর সহযোগিতা

এআরআইইএস ছাড়াও, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এবং কিছু ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি সংস্থাসহ বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠান, সংস্থাগুলির দক্ষতা যন্ত্রাংশের পর্যালোচনা ও নির্মাণে জড়িত ছিল । এটা কার্যকরী সহযোগিতার আদর্শ উদাহরণ । এই দক্ষতার উপর ভরসা করে এআরআইইএস অদূর ভবিষ্যতে 3.6 এম দেবস্থল টেলিস্কোপের উপর আরও স্পেকট্রাল রেজোলিউশনের স্পেকট্রোগ্রাফ এবং আরও জটিল যন্ত্র স্পেকট্রো-পোলারাইমিটার তৈরি করার পরিকল্পনা করছে ।

আরও পড়ুন : ছোট রাক্ষস খোক্কসদের রাজত্বে নেই কোনও মহারাক্ষস

স্পেকট্রোগ্রাফ কীভাবে কাজ করে ?

যন্ত্রটি 3.6 এম ডিওটি এর মেরুদণ্ড । এর মাধ্যমে অত্যন্ত বেহাল মহাজাগতিক উৎসকে একটি জটিল ব্যবস্থার মাধ্যমে দেখা যায় । যেখানে বিশেষ কাঁচ দিয়ে তৈরি একাধিক লেন্স থাকে । মহাজাগতিক আকাশে তীক্ষ্ণ ছবি 5 ন্যানো মিটারের থেকে আরও ভালো ভাবে দেখা যায় ।

দূরবীন থেকে সংগ্রহ করা দূরবর্তী মহাজাগতিক উৎস থেকে আসা ফোটনগুলিকে স্পেকট্রোগ্রাফের সাহায্যে বিভিন্ন রকমের রঙে সাজানো হয় এবং অবশেষে সেগুলিকে বৈদ্যুতিন রেকর্ড করা যায় এমন অবস্থায় বদলে ফেলা হয় । এর জন্য ব্যবহার করা হয় অভ্যন্তরীণ একটি চার্জ-কাপল্ড ডিভাইস (সিসিডি) ক্যামেরা । যা মাইনাস ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস শীতল তাপমাত্রায় রাখা থাকে ।

নয়াদিল্লি : সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তিগত উন্নতির জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী । সেই আহ্বানকে মাথায় রেখে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা দেশেই সবচেয়ে কম খরচে অপটিক্যাল স্পেকট্রোগ্রাফ তৈরির পরিকল্পনা করেছেন এবং তা তৈরি করেছেন । এটা একেবারে নতুন মহাবিশ্বের দূরবর্তী কোয়ারস এবং ছায়াপথে অদৃশ্য আলোর উৎসগুলি আবিষ্কার করতে পারে, ছায়াপথের চারপাশে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলগুলির আশপাশের অঞ্চল এবং মহাজাগতিক বিস্ফোরণের সন্ধান করতে পারে ।

লক্ষণীয় যে এই স্পেকট্রোগ্রাফকে বাইরে থেকে আমদানি করলে, যা খরচ হত, এই ক্ষেত্রে তার থেকে 2.5 গুণ কম খরচ হয়েছে । আর এক ফোটন প্রতি সেকেন্ডের মতো কম ফোটন রেটে এটা আলোর উৎস সনাক্ত করতে পারে । যন্ত্রটি তৈরির খরচ প্রায় চার কোটি টাকা ।

ভারতে যত স্পেকট্রোগ্রাফ রয়েছে, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় । এটাকে উত্তরাখণ্ডের নৈনিতালের কাছে অবস্থিত কোনও জায়গায় ৩.৬ এম দেবস্থল অপটিক্যাল টেলিস্কোপ (ডিওটি) সফলভাবে কার্যকর করা হয়েছে । তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই স্পেকট্রোগ্রাফটি কেবলমাত্র দেশের মধ্যে নয়, এশিয়াতেও সবচেয়ে বড় ।

সাম্প্রতিক অতীত পর্যন্ত ব্যয়বহুল এই স্পেকট্রোগ্রাফগুলি বিদেশ থেকে আমদানি করা হত । অ্যারি-দেবস্থল ফেন্ট অবজেক্ট স্পেকট্রোগ্রাফ অ্যান্ড ক্যামেরা (এডিএফওএসসি) নামে অভিহিত এই অপটিক্যাল স্পেকট্রোগ্রাফটি নৈনিতালের আর্যভট্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ অবজারভেসনাল সায়েন্সেস (এআরআইইএস)-এ দেশীয় প্রযুক্তিতে পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং তৈরি করা হয়েছে । এআরআইইএস হল ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ (ডিএসটি) এর একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান । এআরআইইএস এর বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও বৈজ্ঞানিক দল ড. অমিতেশ ওমরের নেতৃত্বে কাজ করেন । তাঁরা স্পেকট্রোগ্রাফ এবং ক্যামেরার বিভিন্ন অপটিক্যাল, যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করেন এবং তার বিকাশ ঘটান ।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একেবারে নতুন মহাবিশ্বে দূরবর্তী কোয়ারস এবং ছায়াপথ, গ্যালাক্সির চারপাশে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের আশপাশের অঞ্চল, কসমিক বিস্ফোরণ এবং অত্যন্ত শক্তিশালী গামা-রে বিস্ফোরণ, তরুণ এবং বিশাল নক্ষত্র এবং অজ্ঞাত বামন ছায়াপথ নিয়ে গবেষণা করার জন্য স্পেকট্রোগ্রাফ ব্যবহার করেন ।

এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করে এআরআইইএস এর ডিরেক্টর অধ্যাপক দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভারতে এডিএফওএসসি এর মতো জটিল যন্ত্রপাতি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা আসলে অ্যাসট্রোনমি ও অ্যাসট্রোফিজিক্সের ক্ষেত্রে ‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ।’’

কার্যকর সহযোগিতা

এআরআইইএস ছাড়াও, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এবং কিছু ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি সংস্থাসহ বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠান, সংস্থাগুলির দক্ষতা যন্ত্রাংশের পর্যালোচনা ও নির্মাণে জড়িত ছিল । এটা কার্যকরী সহযোগিতার আদর্শ উদাহরণ । এই দক্ষতার উপর ভরসা করে এআরআইইএস অদূর ভবিষ্যতে 3.6 এম দেবস্থল টেলিস্কোপের উপর আরও স্পেকট্রাল রেজোলিউশনের স্পেকট্রোগ্রাফ এবং আরও জটিল যন্ত্র স্পেকট্রো-পোলারাইমিটার তৈরি করার পরিকল্পনা করছে ।

আরও পড়ুন : ছোট রাক্ষস খোক্কসদের রাজত্বে নেই কোনও মহারাক্ষস

স্পেকট্রোগ্রাফ কীভাবে কাজ করে ?

যন্ত্রটি 3.6 এম ডিওটি এর মেরুদণ্ড । এর মাধ্যমে অত্যন্ত বেহাল মহাজাগতিক উৎসকে একটি জটিল ব্যবস্থার মাধ্যমে দেখা যায় । যেখানে বিশেষ কাঁচ দিয়ে তৈরি একাধিক লেন্স থাকে । মহাজাগতিক আকাশে তীক্ষ্ণ ছবি 5 ন্যানো মিটারের থেকে আরও ভালো ভাবে দেখা যায় ।

দূরবীন থেকে সংগ্রহ করা দূরবর্তী মহাজাগতিক উৎস থেকে আসা ফোটনগুলিকে স্পেকট্রোগ্রাফের সাহায্যে বিভিন্ন রকমের রঙে সাজানো হয় এবং অবশেষে সেগুলিকে বৈদ্যুতিন রেকর্ড করা যায় এমন অবস্থায় বদলে ফেলা হয় । এর জন্য ব্যবহার করা হয় অভ্যন্তরীণ একটি চার্জ-কাপল্ড ডিভাইস (সিসিডি) ক্যামেরা । যা মাইনাস ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস শীতল তাপমাত্রায় রাখা থাকে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.