মহারাষ্ট্রের ভাণ্ডারা জেলা হাসপাতাল এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী। গত শনিবার ভোরবেলায় হাসপাতালের নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত 10 শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যাদের বয়স তিন মাসেরও কম। তিনটি শিশু অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে, সাতজন ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে। চিকিৎসার জন্য আগে থেকেই হাসপাতালে ভর্তি থাকা শিশুদের এই মৃত্যুর থেকে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে! এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় কোলাপুরের সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অগ্নিকাণ্ডে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনাকে। একইরকমভাবে, আটজন মানুষ মারা গিয়েছিলেন, যখন অগাস্টে আমেদাবাদের শ্রেয়া হাসপাতালের কোরোনা আইসিইউ ওয়ার্ডে আগুন লেগেছিল । কাছাকাছি সময়ে বিজয়ওয়াড়ার স্বর্ণ প্যালেসে অগ্নিকাণ্ড দশজনের প্রাণ কেড়ে নেয় । নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে গুজরাতের একটি কোভিড কেয়ার সেন্টারে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচজনের মৃত্যু হয় ।
দেশের হাসপাতালগুলোর দুরবস্থায় উদ্বেগপ্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত হাসপাতালে নিরাপত্তা বিষয়ক অডিট করার কথা বলেছিল। কোভিড কেয়ার সেন্টারগুলোর অগ্নিসুরক্ষা অডিটের জন্য আদালত একটি বিশেষ জেলা কমিটি ও প্রত্যেক হাসপাতালের জন্য একজন করে নোডাল অফিসার নিয়োগ করতে বলে। সংবাদমাধ্যমের নানা রিপোর্টে ইঙ্গিত, যে দেশের শয়ে শয়ে হাসপাতাল দমকলের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে। হাসপাতালগুলোর দায়বদ্ধতার অভাব এবং নিরাপত্তার বিষয়ে চরম উদাসীনতার বলি হচ্ছে অসহায় জীবন। এনসিআরবির তথ্য বলছে, 2019 সালে দেশে 11,037 টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যাতে মৃত্যু হয়েছে 10,915 জন মানুষের। উন্নত দেশগুলি সচেতনতার প্রসার এবং প্রযুক্তির সাহায্যে আগুনের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের দেশে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কার্যক্ষেত্রে শোচনীয়। হাসপাতালগুলি সতর্কতা বিধি কঠোরভাবে পালন করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট দায়বদ্ধ না হওয়ায়, তারা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হচ্ছে। গত দশ বছরে, 2010 থেকে 2019 সালের মধ্যে দেশজুড়ে ৩৩টি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। 2011 সালে দক্ষিণ কলকাতার আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের বলি হয়েছিলেন 95 জন মানুষ। 2016 সালে ভুবনেশ্বরের শ্যাম হাসপাতালে শর্ট সার্কিট থেকে লাগা আগুনে 23 জন মানুষ মারা গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন : মহারাষ্ট্রে হাসপাতালে আগুন, মৃত 10 সদ্যোজাত
2014 সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি বিশদ গাইডলাইন প্রকাশ করে, যেখানে হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড কীভাবে এড়ানো যাবে তা বলা হয়েছিল। সংস্থার তরফে জোর দেওয়া হয়, যে একমাত্র জরুরি পরিস্থিতিতেই রোগীদের বার করে আনা হবে, এবং আগুনকে আগে থেকে প্রতিরোধ করাতেই বেশি জোর দেওয়া উচিত। স্মোক ডিটেক্টর এবং ওয়াটার স্প্রিঙ্কলার হল আগুনজনিত দুর্ঘটনা এড়াতে ন্যূনতম প্রয়োজন। ভাণ্ডারা জেলা হাসপাতালে এর কিছুই ছিল না। যদি এধরণের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে হয়, তাহলে সমস্ত হাসপাতালকে একটা সার্বিক অগ্নিনির্বাপণ পদ্ধতি তৈরি করার অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। হাসপাতালে অগ্নি নিরাপত্তা তখনই সম্ভব, যদি তারা সাম্প্রতিক প্রযুক্তির যন্ত্রের সাহায্য নেয়, এবং কর্মীদের সেব্যাপারে প্রশিক্ষিত করে।