চণ্ডীগড়, 25 জুন : 1975 সালের 25 জুন রাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি জরুরি অবস্থা জারি করেন ৷ ওই সময়কে ভারতীয় গণতন্ত্রের অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করা হয় ৷ ওই সময়ে হরিয়ানায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছিল ৷ সেখানে অস্থায়ী জেল তৈরি করা হয় ৷ আর কংগ্রেস বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও যাঁরা জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁদের রাখা হয় সেখানে ৷ এখনও যখন সেই সময়ের কথা বলেন রাজনৈতিক নেতারা, তখন সেই স্বৈরতন্ত্রের ভয়াবহতা সামনে চলে আসে ৷
হরিয়ানায় সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বংশীলাল ৷ তাঁর জন্যই সেখানে জরুরি অবস্থার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছিল ৷ ইন্দিরা গান্ধি তাঁকে দিল্লিতে ডেকে নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করেন ৷ তিনি সঞ্জয় গান্ধির ঘনিষ্ঠ ছিলেন ৷ তাঁকে ইন্দিরা গান্ধিও খুব বিশ্বাস করতেন ৷ বিকে নেহরু তাঁর আত্মজীবনী ‘নাইস গাই’জ ফিনিশ সেকেন্ড’ বইতে লিখেছেন যে বংশীলাল ইন্দিরা গান্ধির জন্য কী স্বপ্ন দেখতেন ৷ বংশীলাল বলেছিলেন, ‘‘যদি আপনি আমার কাছে জিজ্ঞাসা করেন, আমাদের দিদিকে সারাজীবনের জন্য প্রেসিডেন্ট বানিয়ে দিন এবং এরপর আর কিছু করা দরকার নেই ৷’’
আরও পড়ুন : জম্মু-কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফেরানো ও বিধানসভা নির্বাচনের দাবি তুলল কংগ্রেস
সেই সময়ের স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে মানুষের মনে পড়ে যে গোটা হরিয়ানা কার্যত একটা বড় জেলে পরিণত হয়েছিল ৷ এছাড়া মানুষকে জোর করে ধরা হয়েছিল এবং গণ নির্জীবকরণ করা হয় ৷ চৌধুরী দেবীলাল ছিলেন সেই সময় সরকারের অন্যতম বড় সমালোচক ৷ তাঁকে মহেন্দ্রগড় জেলে রাখা হয় ৷ সেখানে অথবা হিসার জেলে আরও অনেককে রাখা হয়েছিল ৷ হিসার জেলে রাখা হয়েছিল তাঁর ছেলে ওমপ্রকাশ চৌতালাকে ৷ তাঁর আরও এক ছেলেকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল ৷
ড. চন্দ্র তিরকা তাঁর বই, ‘হাউ টু ফরগেট দ্য স্টিং অফ এমারজেন্সি ?’-তে লিখেছেন, ‘‘জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্যতম ছিলেন চৌধুরী দেবীলাল ৷ ইন্দিরা গান্ধির নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা হওয়ার পর দিল্লিতে বিরোধী দলগুলির যে বৈঠক হয়েছিল, সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিনি ৷ 1977 সালে তিনি হরিয়ানার অ-কংগ্রেসী সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন ৷ জরুরি অবস্থার পর কংগ্রেস ছেড়ে আসা ভজনলালও সেই সরকারে মন্ত্রী হয়েছিলেন ৷’’
আরও পড়ুন : মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুতে দেশজুড়ে দশদিন ব্যাপী প্রতিবাদের ডাক কংগ্রেসের
জরুরি অবস্থার সময় অনেক মহিলা নেত্রীকেও জেলে পাঠানো হয়েছিল ৷ সেই তালিকায় ছিলেন ড. কমলা বর্মা ৷ তিনি বিজেপির প্রথম সভাপতি ছিলেন ৷ অটলবিহারী বাজপেয়ী ও লালকৃষ্ণ আডবাণীর গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি গা ঢাকা দেন ৷ তাঁর বাড়ির চারপাশে ঘুরতে থাকা সিআইডি অফিসাররা তাঁকে গ্রেফতার করেন ৷ এমনকী, ইন্দিরার এই সিদ্ধান্তে যে কংগ্রেস নেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন, তাঁদেরও হেনস্তা করা হয় ৷ সেই কারণে হরিয়ানার প্রথম মহিলা সাংসদ চন্দ্রাবতী পালিয়ে বেড়াতে শুরু করেন ৷ কারণ, তিনি বংশীলালের পক্ষ নেননি ৷
এছাড়া জরুরি অবস্থার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক ছিল যে রাজ্যজুড়ে পুরুষদের বন্ধ্যাত্বকরণ অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল ৷ জনসংখ্যার সীমা যাতে ছাড়িয়ে না যায়, তাই 1976 সালের সেপ্টেম্বর মাসে সঞ্জয় গান্ধি নির্বীজকরণের কাজ বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিলেন ৷ শুধু হরিয়ানাতেই এক বছরে 74 হাজার 300 মানুষের নির্বীজকরণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয় ৷ পরে তা কমে 45 হাজার হয় ৷ আর শেষপর্যন্ত 57 হাজার 492 জনকে নির্বীজকরণ করা হয় ৷ এর জেরে 1976-77 সালে হরিয়ানায় 2.22 লক্ষ মানুষকে নির্বীজকরণ করা হয় ৷
আরও পড়ুন : Jammu and Kashmir : কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠক শেষে জম্মু ও কাশ্মীরের পূর্ণ রাজ্যের অধিকারের দাবি ওমরের
জরুরি অবস্থা আসলে কী ?
দেশের অভ্যন্তর থেকে, বাইরে থেকে বা অর্থনৈতিক ভাবে কোনও আশঙ্কা তৈরি হয়, তখন জরুরি অবস্থা জারির নিয়ম করা রয়েছে ভারতীয় সংবিধানে ৷ এর ফলে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও বাধা ছাড়াই যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে ৷ আমাদের দেশে একবার নয়, তিনবার জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল ৷ 1968 সালে যখন ভারত-চিন যুদ্ধ হয়, তখন একবার জরুরি অবস্থা জারি হয় ৷ আর দ্বিতীয়বার জারি হয় 1971 সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ৷ আর তৃতীয়বার 1975 সালে ইন্দিরা গান্ধি জারি করেছিলেন ৷
আরও পড়ুন : কাশ্মীর ভারতের একান্ত নিজস্ব বিষয়, পাকিস্তানকে জানাল বিদেশমন্ত্রক