বারদোলি (গুজরাত), 9 এপ্রিল: প্রবাসী ভারতীয় তথা এনআরআই (নন রেসিডেন্ট ইন্ডিয়ান) রা কেমন জায়গায় থাকেন ? এই প্রশ্ন করলে উত্তর আসতেই পারে, এমন জায়গা যা শহরের সঙ্গে যুক্ত, যেখানে ঝকঝকে তকতকে রাস্তা, দারুণ সুযোগ সুবিধা, ইন্টারনেট পরিষেবা, ইলেকট্রিসিটি এই সব কিছু রয়েছে হাতের নাগালে । কিন্তু গুজরাতের সুরাত শহর থেকে 40 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এমন একটি গ্রাম রয়েছে যা এই এনআরআই- শব্দের মানে বদলে দিয়েছে অন্যরকমভাবে । সুরাত জেলার বারদোলি তালুকের আফওয়া গ্রামটি এনআরআই গ্রাম হিসাবে পরিচিত । কারণ এখানকার বাসিন্দার 80 শতাংশ এখন বিদেশে বসবাস করেন ।
আসলে, গ্রামটির উন্নয়নের একটা ইতিহাস রয়েছে । সালটা 1975 । সেই সময়ে আফওয়াতে একটি ভূগর্ভস্থ নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিল । সেই সময়ের শহরের সুযোগ সুবিধা কিছুই ছিল না । কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আফওয়া সবরকম সুযোগ সুবিধার কাঠামো তৈরি করে অগ্রগতির পথে এগিয়ে গিয়েছে । প্রথমবার আফওয়ায় প্রবেশ করলে এটিকে একটি ছোট শহর বলে ভুল হতে পারে । কেননা, আফওয়াতে ওভারহেড কেবলের জঞ্জাল নেই, চারিদিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ড্রেনেজ সিস্টেম খুব পরিষ্কার, ঘন ঘন লোডশেডিং হয় না । তবে মজার বিষয় হল, এখানে শহরের মতো সেই কোলাহল নেই । নেই হই-হট্টগোল, চিৎকার-চেঁচামেচি । বরং বাতাসে ভেসে বেড়ায় মনোরম ভজনের সুর । ভেসে আসে কোনও দূর ঘর থেকে যা শান্তি ও প্রশান্তির পরিবেশ তৈরি করে ।
আরও পড়ুন: পণে মেলেনি বিএমডব্লিউ, নববধূকে বিমানবন্দরে রেখে চলে গেল পাত্রপক্ষ
গ্রামের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান লাল্লু ভাই প্যাটেল তাঁর বাড়ির ছোট পরিপাটি উঠানে বসে বলেন, "আফওয়াতে 1975 সাল থেকে একটি ভূগর্ভস্থ নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিল । এর পাশাপাশি আমরা নিশ্চিত করেছিলাম যে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট এবং কেবল টিভি সবকিছুর তার উপর দিয়ে যাবে না, যাবে মাটির নিচ দিয়ে ।"
তিনি আরও বলেন, "দেশের অনেক বড় বড় শহর পরিবেশ দূষণ বা বায়ু দূষণের মতো সমস্যার সম্মুখীন হয়ে লড়াই চালাচ্ছে । কিন্তু আমাদের গ্রামের চারপাশে একটা রিং রোড করা হয়েছে যাতে বায়ু দূষণের শিকার না-হতে হয় এবং ভারী যানবাহন চালানোর ফলে যেন রাস্তাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় ।"
গ্রামের জনসংখ্যার অধিকাংশই হালাপতি সম্প্রদায়ের । এছাড়াও গ্রামে পাটিদার সমাজ এবং মহাবংশী সমাজের লোকও রয়েছেন । গ্রামবাসীদের মধ্যে যারা শহরে আছেন তারা পাটিদার সম্প্রদায়ের । তবে, বিদেশে স্থায়ী হওয়া সত্ত্বেও এই গ্রামের এনআরআই বাসিন্দারা ভুলে যাননি নিজের গ্রামকে । নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে তারা বিদেশ থেকে গ্রামে আসেন এবং আফওয়াতে কী কী উন্নয়নমূলক কাজ করা দরকার তা নিয়ে আলোচনা করেন । এনআরআইরা তাদের জমি, আফওয়াতে বসবাসকারীদের হস্তান্তর করে দিয়েছে । গ্রামবাসীরা সমবায় সমিতির মাধ্যমে কৃষিকাজ করে ভালো আয়ও করে থাকেন এর থেকে । বর্তমানে গ্রামে তিনটি সমবায় সমিতি কাজ করছে । অনান্য শহরগুলির থেকে একদম আলাদা থেকে আফওয়া গ্রামীণ প্রকৃতিকে অক্ষত রেখে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে ।