নয়াদিল্লি,11 সেপ্টেম্বর: জি20 শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়েছে রবিবার। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও তাঁদের সঙ্গে আসা প্রতিনিধি দলের সদস্যরা একে একে দিল্লি ছাড়ছেন। এমনই আবহে দেখে নেওয়া যাক এই সম্মেলন থেকে কী কী পেল ভারত।
ছিল জি20 হল জি21: দিল্লির সম্মেলন শুরুর আগে পর্যন্ত জি20 ছিল 19টি দেশ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সমাহার। আর এই সম্মেলনের পর বাড়ল সদস্য দেশের সংখ্যা। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মতো আফ্রিকান ইউনিয়নও সদস্য হল এই গোষ্ঠির। সেই সিদ্ধান্ত হয়েছে শনিবার। তবে সরকারিভাবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি এখনও বাকি আছে। ভারতে পর আগামী বছর ব্রাজিলে বসবে এই গোষ্ঠির সম্মেলন। সেখানেই হবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
আফ্রিকার 55টি দেশ নিয়ে তৈরি আফ্রিকান ইউনিয়নকে একছাতার তলায় নিয়ে আসা অবশ্যই ভারতের কৃতিত্ব। ভারতের হাতে সভাপতিত্বের ভার আসার পর থেকেই এই ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জি20-র সদস্য দেশের প্রধানদের চিঠি লিখে আফ্রিকান ইউনিয়নকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা করতে অনুরোধ জানান তিনি। পাশাপাশি, জানুয়ারি মাসে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত একটি বৈঠকে 120টি দেশের প্রতিনিধিদের সামনেও বিষয়টি তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: মোদিকে ধন্যবাদ বাইডেনের, জানালেন 'সন্তোষজনক আলোচনা'র কথা
নিউ দিল্লি ডিক্লারেশন: রাশিয়া জি20-র সদস্য দেশ। যদিও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই সম্মেলনে অংশ নেননি । এসেছিলেন বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। রাশিয়ার উপস্থিতিতে ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলা ডিক্লারেশন পাস করিয়েছে ভারত। এটাকেও প্রাপ্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে কূটনৈতিক মহলে।
সম্মেলনের ঘোষণাপত্রের এই অংশে ইউক্রেন যুদ্ধের কথা থাকলেও রাশিয়ার নাম নেই। পাশপাশি এটাও বলা হয়েছে, জি20 যুদ্ধ বন্ধ করা বা সেই সংক্রান্ত উদ্যোগ নেওয়ার মঞ্চ নয়। কিন্তু যুদ্ধের মতো বিষয় অর্থনীতির উপর দারুণ প্রভাব ফেলে। খাদ্য সংকট দেখা দেয়। পরিকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়টি ধাক্কা খায়। করোনার সময় যে প্রবল ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছিল তার থেকে অনেক দেশই এখনও সম্পূর্ণ বেরিয়ে আসতে পারেনি। তাদের জন্য ইউক্রেনের যুদ্ধ সমস্যা আরও অনেকটাই বাড়িয়েছে। ঠিক এই প্রসঙ্গেই নিউ দিল্লি ডিক্লারেশনকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভূ-রাজনৈতিক ও আর্থিক প্রভাব: সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। সেখানে বিনিয়োগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন দেশকে সঙ্গে নিয়ে বিনিয়োগের একটি সম্মিলিত মঞ্চ গড়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি, ভারত-মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপকে নিয়ে একটি করিডর গঠনের সিদ্ধান্তও হয়েছে। আর এভাবেই সম্মেলনের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
জৈব জ্বালানি জোট: গোটা পৃথিবী এখন পরিবেশ দূষণ নিয়ে চিন্তিত। জ্বালানি দূষণের অন্যতম প্রধান উৎস। সেদিক থেকে জৈব জ্বালানি ব্যবহারের উপর জোর দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। এই সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা 'গ্লোবাল বায়োফুয়েল অ্যালেয়েন্স' তৈরি করেছেন। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এই বিষয়ে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে,সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষ নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রেখে তথ্য ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে জৈব জ্বালানির ব্যবহার বাড়াবে। এটাকেও ভারতের সাফল্য বলেই মনে করা হচ্ছে।