হায়দরাবাদ, 13 মে: চৌধুরি চরণ সিং তাঁকে গ্রেফতার করাতে পারেন এটা ভালোভাবেই জানতেন ইন্দিরা গান্ধি । একজন তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ভার সামলাচ্ছেন । অন্যজন সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ৷ আশঙ্কা সত্যি হল । ইন্দিরার দুয়ারে গেল সিবিআই । কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্তা এনকে সিং এক বিকেলে ইন্দিরার বাসভবনে সদলবলে গেলেন । দীর্ঘ অপেক্ষার পর দেখা পেলেন ইন্দিরার । দুঁদে গোয়েন্দা কাল বিলম্ব না-করে বলেছিলেন, “ম্যাডাম, আপনাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে । আমাদের সঙ্গে যেতে হবে ।” জবাবে ইন্দিরা জানতে চেয়েছিলেন চৌধুরি চরণ সিং তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য হাতকড়া পাঠিয়েছেন কি না।
এই মেজাজটা ইন্দিরার চরিত্রে দেখা গিয়েছে বারবার । এই দৃঢ়তাই বলে দিত কেন একসময় বলা হত, “ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া ইজ ইন্দিরা”। ছেলে রাজীব-সঞ্জয়রাও রাজনীতি এসেছেন । শীর্ষে আরোহন করেছেন । রাজীব বসেছেন মায়ের ছেড়ে যাওয়া পদেই । কপ্টার দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে না-নিলে সঞ্জয়ও হয়তো কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারতেন। তবে 'আয়রন লেডি' ইন্দিরার নাতি রাহুল বা নাতনি প্রিয়াঙ্কা এখনও গান্ধি পদবির সঙ্গে সুবিচার করতে পারেননি বলে মনে করেন অনেকেই।
2023 কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচন হয়ত খানিকটা ভিন্ন ছবি উপহার দিল । কংগ্রেস জিতল। দলের রাজ্য নেতৃত্বের পাশপাশি রাহুল-প্রিয়াঙ্কাদের কৌশলের জয় হল । কংগ্রেস দাবি করছে, রাহুল যেভাবে ভারত জোড়ো যাত্রা বের করেছিলেন তার ফল পাওয়া গিয়েছে । পাশাপাশি রাজনীতির কারবারিদের মনে পড়ে গেল এক অতীত ইতিহাসের কথা ।
1977 সালে লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর কর্ণাটকের চিকমাগালুর কেন্দ্র থেকে লোকসভার উপনির্বাচনে জিতে আসেন ইন্দিরা । 1978 সালের এই নির্বাচনে কংগ্রেসের একটা স্লোগান ছিল, 'এক শেরনি শ লাঙ্গুর, চিকমাগালুর ভাই চিকমাগালুর'। লাঙ্গুর এক ধরনের বাঁদর। এখানে একশো বাঁদর বলতে ইন্দিরার সমস্ত প্রতিপক্ষের কথা বলা হয়েছিল । আর ইন্দিরাকে বলা হয়েছিল বাঘিনী । নির্বাচনে জিতে আবারও ভারতীয় রাজনীতির রঙ্গমঞ্চের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন ইন্দিরা । আরও দু’বার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথও নেন নেহরু তনয়া ।
এই নির্বাচনে আগে বিহারের বৈঁচি গ্রামে সফরে গিয়েছিলেন ইন্দিরা । সেখানে বেশ কয়েকজন দলিতের উপর অত্যাচার হয়। সেই ঘটনায় তাঁদের পাশে দাঁড়াতে যাওয়ার কথা ছিল তৎকালীন লোকসভার বিরোধী দলনেতা ওয়াই বি চৌহানের । কিন্তু বন্যার জেরে বৈঁচির পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় তিনি সফর বাতিল করেন । তাঁর বদলে ইন্দিরা যান ।
বন্যায় বৈচি তখন রাজ্যের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন । গাড়ির রাস্তা শেষ হওয়ার পর হাতির পিঠে চেপে বৈঁচি পৌঁছেছিলেন ইন্দিরা । অনেকেই মনে করেন তাঁর রাজনৈতিক জীবনে এই সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । এই সফরের আগে পর্যন্ত রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় ছিলেন না ইন্দিরা । এই সফরের পর নতুন করে রাজনীতিতে আগ্রহী হন । দলিত সমাজের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারেন রাজনীতিতে তাঁর প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি । তাঁর আরও অনেক কিছু পাওয়ার আছে, দেওয়ার আছে। এরপরই চিকমাগালুর থেকে ভোটে দাঁড়ান ইন্দিরা। বাকিটা ইতিহাস সেই ঘুরে দাঁড়ানো ইন্দিরার প্রভাব এতটাই প্রবল ছিল যে কলকাতার দেওয়ালে সে সময় লেখা হত, 'রায়বরেলি ভুল করেছে, চিকমাগালুর করেনি। সিপিএম মনে রেখ ইন্দিরা এখনও মরেনি।”
চিকমাগালুর বিধানসভা কেন্দ্র এবার বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস ৷ 2004 সাল থেকে এই কেন্দ্রটি বিজেপি-র দখলে ছিল ৷ কংগ্রেস প্রার্থী এইচডি থাম্মাইয়া এই কেন্দ্রে এবার পেয়েছেন 85 হাজার 54টি ভোট ৷ 4 বারের বিধায়ক তথা বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক সিটি রবিকে তিনি হারিয়েছেন 5 হাজার 926 ভোটের ব্যবধানে ৷
আরও পড়ুন: ট্র্যাজিক হিরো রাহুলই জয়ের নায়ক কর্ণাটকে, দক্ষিণ বিজয়ে উচ্ছ্বসিত কংগ্রেস
কর্ণাটক আবার ‘হাত ভরিয়ে’ দিল । একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কংগ্রেসের সরকার গড়তে চলেছে এই রাজ্যে। চিকমাগালুরের জয় ঠাকুমাকে পরবর্তীকালে যে ‘আচ্ছে দিন’ দেখিয়েছিল সেটা নাতি রাহুল বা নাতনি প্রিয়াঙ্কার সঙ্গেও হোক এমনটা চাইবেন যে কোনও কংগ্রেস সমর্থক । তা হবে কি না, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয় । বরং রাহুল-প্রিয়াঙ্কাদের প্রতিপক্ষ এতটাই প্রবল যে এটুকু বলাই যায় সামনে ‘দুর্গম গিরি, কান্তার মরু, দুস্তর পারাবার’ তাই কাণ্ডারিকে হুঁশিয়ার থাকতেই হবে ।