নয়াদিল্লি, 31 ডিসেম্বর: লোকসভা নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই কংগ্রেসের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ৷ ইতিমধ্য়ে 'ইন্ডিয়া' সদস্য আঞ্চলিক দলগুলি ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তারা নিজের নিজের রাজ্যে কংগ্রেসকে আসন না-ও ছাড়তে পারে ৷ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ ঘোষণা করেছেন, "বাংলায় বিজেপিকে পরাস্ত করতে পারে একমাত্র তৃণমূল ৷"
এর মধ্যে বিহারে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে কংগ্রেসের অবস্থান নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠল ৷ 29 নভেম্বর বিহারের মহাগঠবন্ধন সরকারের সদস্য দল জেডিইউ-এর ইগজিকিউটিভ কমিটি আচমকা দিল্লিতে বৈঠক ডাকে ৷ শনিবার বৈঠকে জনতা দল ইউনাইটেড বা জেডিইউ-এর সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয় নীতিশ কুমারকে ৷ তাঁর আগে এই পদে ছিলেন প্রবীণ জেডিইউ নেতা লালন সিং ৷
বিহারে এই বদলের সঙ্গে সঙ্গে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে ৷ এমনকী এও রটেছে, লালন সিং দলের একাধিক বিধায়ককে নিয়ে দল ছাড়বেন এবং তিনি মহাগঠনবন্ধনের আরেক শাসকদল আরজেডিতে যোগ দিচ্ছেন ৷ তবে লালন সিং সংবাদমাধ্যমে রটে যাওয়া তথ্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন ৷ আবার এমনটাও শোনা গিয়েছে, জেডিইউ বিজেপির সঙ্গে আবারও জোটে ফিরছে ৷ আর সেই জন্যে দলের মধ্যে ভাঙন ধরেছে ৷ নীতীশ কুমার অবশ্য এই সম্ভাবনার কথা সাফ উড়িয়ে দিয়েছেন ৷ 2019 সালে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোটের সঙ্গে সরকার গড়েন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ৷ তবে 2022 সালের অগস্টে সেই জোট ভেঙে বেরিয়ে আসেন তিনি ৷ বিহারে আরজেডি ও অন্য কয়েকটি দলকে নিয়ে মহাগঠনবন্ধন সরকার গঠন করেন নীতীশ কুমার ৷
এই ঘটনার পর চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ধরাশায়ী করতে 'ইন্ডিয়া' জোট তৈরি হয়েছে ৷ এর প্রস্তুতিতে অন্যতম প্রধান ছিলেন জেডিইউ-এর নীতীশ ৷ তবে জোট গঠনের প্রথম দিকে শোনা গিয়েছিল, সদস্য দলগুলি নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি করে লোকসভা নির্বাচন লড়বে ৷ তবে বাস্তবে 28 টি সদস্য দল আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনও কিছু জানায়নি ৷ বছর শেষের পাঁচটি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে আসন ছাড়া নিয়ে 'ইন্ডিয়া' জোটের মধ্যে মন কষাকষি হয়েছে ৷ এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে কংগ্রেস কী করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ৷ তবে বিহারে লোকসভা নির্বাচনে লড়া নিয়ে আত্মবিশ্বাসী কংগ্রেস ৷
এদিকে বিহার কংগ্রেসের দাবি, নীতীশ কুমারের জেডিইউ সভাপতি হওয়ায় এখানে 'ইন্ডিয়া' জোটে কোনও ফাটলই ধরেনি ৷ বিহার কংগ্রেসের সচিব অজয় কাপুর ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে বলেন, "ইন্ডিয়া ব্লক যেমন ছিল, তেমনই আছে ৷ আমার মনে হয় না, নীতীশ কুমার বিজেপিতে যোগ দেবেন ৷ তিনি হয়তো জেডিইউকে আরও নিরাপদ করতেই এই পরিবর্তন করেছেন ৷ এই আঞ্চলিক দলটি হয়তো ভেঙে যেতে পারে ৷"
আরেক কংগ্রেস নেতা তারিক আনওয়ারের মতে নীতীশ কুমার ওবিসি ইস্যুতে জোর দিচ্ছেন ৷ তিনি বলেন, "লালন সিং উচ্চবর্ণের ৷ তাই তাঁকে সরিয়ে একজন ওবিসিকে দলের প্রধান করতে চান নীতীশ কুমার ৷ তাই লালন কুমারকে সরিয়েছেন ৷ এটা বিরোধীদের জোটের থেকেও বেশি জেডিইউ-এর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ব্যাপার ৷ নীতীশ কুমার আর এনডিএ জোটে ফিরতে পারবেন না ৷ বিজেপি তাঁকে অপমান করেছে ৷ 2019 সালে তো বিজেপি তাঁর দলটাকেই ভাঙন ধরানোর চেষ্টাও করেছিল ৷"
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস সাংসদ শাকিল আহমেদও মনে করেন নীতীশ কুমার বিজেপিতে যোগ দেবেন না ৷ তিনি বলেন, "দলের প্রধানের পরিবর্তনের এই বিষয়টি জেডিইউ-এর একেবার নিজস্ব বিষয় ৷ এর আগেও তো নীতীশ কুমার দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৷ আর যদি তাঁরা বিজেপিতে ফিরেও যান, তাহলে লালন সিং অন্তত বিজেপিকে প্রকাশ্যে আক্রমণ করবেন না ৷"
এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আশঙ্কা, নীতীশ কুমার যদি 'ইন্ডিয়া' জোট ছেড়ে বেরিয়ে যান, তাহলে নির্বাচনের আগে জোটের অপূরণীয় ক্ষতি হবে ৷ সূত্রের খবর, বিহারের 40টি লোকসভা আসনের মধ্যে কংগ্রেস 7-8টি আসনে লড়তে পারবে ৷ যদিও রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব 10টি আসনের দাবি করেছে ৷ বিহারের আরজেডি, জেডিইউ, বাম দল, কংগ্রেসও 'ইন্ডিয়া' জোটের সদস্য দল ৷ জোটের অন্যতম প্রধান মুখ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধি, জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার, আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদব, তাঁর ছেলে বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব ৷
আরও পড়ুন: