সমাজ বদলে দিয়েছেন ৷ একা ৷ একলা মানুষ ৷ রাজস্থানের পিপলান্ত্রি গ্রামের প্রাক্তন সরপঞ্চ ৷ "বিপ্লবী" গ্রামপ্রধানের নাম শ্যাম সুন্দর পালিওয়াল ৷ যে দেশ কন্যাভ্রুণ হত্যায় জেরবার, যে মাটিতে কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে কোথাও কোথাও কান্নার রোল ওঠে আজও , আর কন্যার পিতা হল গিয়ে "কন্যাদায়গ্রস্ত" ! সেই সমাজেই মেয়ে জন্মালে হয় হইহই উৎসব ! উৎসবের অন্যতম অংশ 111 টি গাছ লাগানো ৷ মেয়েরা বড় হয়ে রাখি পরায় ভাই-গাছকে যাদের রোপণ করা হয়েছিল তাদের জন্মের দিনটিতে ৷
এই পথেই রুখাসুখা রাজস্থানে আস্ত ব্যতিক্রম হয়ে উঠেছে রাজসমান্দ জেলার পিপলান্ত্রি ৷ বালি-পাথরের দেশের সবুজদ্বীপ ! প্রতিদিন সেই সবুজ বেড়েই চলেছে ৷ ফুটফুটে নতুন কন্যা মানেই যে আরও 111 টি বৃক্ষরোপণ ৷ 2006 সালে শুরু এই আশ্চর্য সবুজবিপ্লবের ৷ কীভাবে?
অকালে মৃত্যু হয় তৎকালীন গ্রামপ্রধানের কিশোরী মেয়ের ৷ ভয়ংকর শোক থেকে মুক্তি পেতে "অদ্ভুত" সিদ্ধান্ত নেন সরপঞ্চ শ্যাম সুন্দর পালিওয়াল ৷ মেয়ের স্মৃতিতে 111 টি গাছ লাগান ৷ ওই গাছেদের ফুল-ফল-ছায়ায় বেঁচে থাকবে মেয়ে ! বিশ্বাস পিতার ৷ প্রথমে ব্যক্তিগতভাবে এই কাজ করলেও ঘটনার প্রভাব পড়ে গ্রামে ৷ এইসঙ্গে গ্রামের বাসিন্দাদের বোঝান সরপঞ্চ, কন্যা দায় নয়, সম্পদ ৷ ঠিক যেমন সবুজ গাছ ৷ অতএব, সকলেই শুরু করুন বৃক্ষরোপণ ৷ যাতে করে আখেরে লাভ হবে পিপলান্ত্রির মতো প্রতিকূল প্রকৃতির গ্রামের ৷ একাজ তিনি যে শুধু তাঁর মেয়ের জন্য করছেন না, তাও স্পষ্ট করেন পালিওয়াল ৷ শেষ পর্যন্ত সরপঞ্চের কথা মনে ধরে পিপলান্ত্রির ৷ সেই শুরু নতুন দিনের ৷ সেই থেকে গ্রামের যে ঘরে কন্যা জন্মায় তাঁদের উদ্যোগে লাগানো হয় 111 টি গাছ ৷ গ্রামবাসী মেতে ওঠে আনন্দে ৷
111 সাফল্যের সূচক ৷ নেহাত বিশ্বাস ৷ আসল কথা, 2006 থেকে বহুবার 111 টি করে গাছ লাগাতে লাগাতে পিপলান্ত্রি এখন প্রকৃতির পাঠশালা ৷ হিসেব বলছে, আজ অবধি সাড়ে 3 লাখ গাছ লাগানো হয়েছে গ্রামে ৷ ইতিমধ্যে সবুজায়নে পিপলান্ত্রিকে মডেল গ্রাম ঘোষণা করেছে রাজস্থান সরকার ৷ কন্যা সন্তানের গুরুত্বও বোঝানো হয় এগ্রামের উদাহরণ টেনে ৷ এরপরেও ক্ষান্ত দেননি এখানকার মানুষ ৷
মেয়ে জন্মানোর আনন্দে যেমন গাছ লাগানো হয়, তেমন সেদিনই চালু হয় একটি কন্যা-তহবিল ৷ সংগ্রহিত হয় অনুদান ৷ 31 হাজার টাকার তহবিল ৷ মেয়ের 18 বয়স হলে সেই টাকা তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে ৷ যাতে করে আর কোনও পিতা নিজেকে কখনওই কন্যাদায়গ্রস্ত ভাবতে না পারেন ৷