কোরোনা ঠিক কতটা প্রভাব ফেলতে পারে ? ঠিক কতটা ভয়াবহ এই ভাইরাস, তা বুঝে উঠতে পারেনি অ্যামেরিকা । বলা যেতে পারে, একপ্রকার ব্যর্থ হয়েছে । তাই সঠিক সময়ে উপযুক্ত সতর্কতাও অবলম্বন করে উঠতে পারেনি । আর তারই মূল্য হিসেবে কোরোনায় অ্যামেরিকায় প্রাণ হারিয়েছে 55 হাজারের বেশি মানুষ । আক্রান্ত প্রায় 10 লাখ । কিন্তু ভারত এই বিপর্যয়ের মূল্যায়ন সঠিক সময়ে করতে সক্ষম হয়েছে । তাই সতর্কতা হিসেবে 40 দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে । 130 কোটি মানুষকে সুস্থ থাকতে ঘরবন্দী করে রেখেছে । ফলস্বরূপ এখনও পর্যন্ত কোরোনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে ভারত ।
জরুরি পরিষেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । কিন্তু এই সবকিছুর ফলে বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা দিনমজুরদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে । নিজেদের গ্রাম, কাছের মানুষদের ছেড়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য যাঁরা ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন তাঁরা বর্তমানে কাজ হারিয়েছেন । লকডাউনের জন্য হেঁটেও বাড়ি ফিরতে পারছেন না তাঁরা ।
লকডাউনের শুরুতে উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও রাজস্থান সরকারের তরফে অন্য রাজ্যে আটকে থাকা তাদের শ্রমিকদের বাসে করে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয় । একই ব্যবস্থা করা হয় যেসব রাজ্যের শ্রমিকরা উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও রাজস্থানে আটকে ছিল তাঁদের ক্ষেত্রেও । তবে, বেশ কিছু রাজ্য কেন্দ্রের বিধিনিষেধ মেনে শ্রমিকদের ফেরানোর ব্যবস্থা বাতিল করে । কিন্তু যেহেতু এখন লকডাউন শেষ হওয়ার পথে তাই ওই রাজ্যগুলি তাদের শ্রমিকদের ফেরাতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছে ।
কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি নন্দেদে আটকে থাকা 3 হাজার 800 পুণ্যার্থীকে বাড়ি ফেরার অনুমতি দিয়েছে । মহারাষ্ট্র সরকারের তরফেও ঘোষণা করা হয়েছে, তারা উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, ছত্তিশগড়ের আটকে থাকা প্রায় 3 লাখ 50 হাজার শ্রমিককে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সীমান্তে পৌঁছে দিতে প্রস্তুত । নিজেদের শ্রমিকদের ফেরাতে যাতে সবরকম ব্যবস্থা তৈরি থাকে তা নিশ্চিত করছে উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ সরকার । তবে, ভিন রাজ্যে আটকে থাকা এই লাখ লাখ শ্রমিকদের বেশিরভাগ কোরোনায় আক্রান্ত বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে । সেক্ষেত্রে, তাঁদের এক জায়গা থেকে অপর জায়গায় যাতায়াত করায় ভারতে সংক্রমণ বাড়তে পারে । তার ফলে যে সংকট দেখা দেবে তাকে অগ্রাহ্য করা সহজ নয় । তাই বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের নিয়ে এই মুহূর্তে আশঙ্কা রয়েছে । যার উপযুক্ত সমাধান খুঁজে বের করা আবশ্যক ।
চার দিন আগে বিশ্বব্যাঙ্কের তরফে রিপোর্টে বলা হয়, ভারতে চার কোটির বেশি শ্রমিক রয়েছেন যাঁরা ভিন রাজ্য কাজের সূত্রে আছেন । আর তাঁদের উপর এই লকডাউনের অত্যন্ত প্রভাব পড়েছে । 2016-17 অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, এই শ্রমিকরা তাঁদের বাড়িতে বার্ষিক 1.5 লাখ টাকা পাঠান । যদিও রাজ্য সরকারগুলি ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের সাহায্যের চেষ্টা করছে, তবুও যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে তাঁরা কোরোনায় নয়, অনাহারে মারা যেতে পারেন ।
নগদ ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে যে সমস্ত শ্রমিক অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করেন তাঁদের সমস্ত তথ্য অনলাইনে সংগ্রহ করার প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার । এর মাধ্যমে 22 মিলিয়ন ভিন রাজ্যের শ্রমিকের দক্ষতা চিহ্নিত করে তাঁদের কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করতে চেয়েছিল কেন্দ্র । কিন্তু অনলাইনে শ্রমিকদের যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল তাতে তাঁদের দক্ষতার সম্পর্কে কোনও কিছু উল্লেখ করা ছিল না । ফলে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য কিছুই করতে পারেনি সরকার । এই পরিস্থিতিতে ওড়িশা সরকার ঘোষণা করে, যেসমস্ত শ্রমিক রাজ্যে ফিরতে চাইছে তাঁদের একটি ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে সমস্ত তথ্য রেজিস্টার করতে হবে । একবার এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ওড়িশা সরকার সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে । উত্তরপ্রদেশ সরকার ইতিমধ্যে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে 15 মিলিয়ন শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।
রাজ্যগুলির এই মুহূর্তে উদ্দেশ্য, ভিন রাজ্য থেকে শ্রমিকরা ফিরলেই তাঁদের নমুনা পরীক্ষা করা । তারপর 14 দিন কোয়ারানটিনে থাকার পরই তাঁদের বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে । এই উদ্দেশ্য সফল হতে এক জাতীয় কৌশল আবশ্যক ।