গুয়াহাটি ও আগরতলা, 11 ডিসেম্বর : নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে অসম ও ত্রিপুরায় অ-জনজাতি লোকজনের উপর হামলা শুরু হয়েছে । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই রাজ্যে আধা-সেনা নামিয়েছে প্রশাসন । গুয়াহাটি ও ডিব্রুগড়ে জারি হয়েছে কার্ফু । গত কয়েকদিন ধরে অ-জনজাতি লোকজনকে রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল । এবার ওই দুই রাজ্যে জনজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে অ-জনজাতি লোকজনের উপর হামলা শুরু হয়েছে । গত 24 ঘণ্টায় এমন বেশ কিছু ঘটনা সামনে এসেছে । অনেক এলাকায় অ-জনজাতি লোকজন প্রাণভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে থানায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ।
কলোনেল আমন আনন্দ জানিয়েছেন, অসমের বঙ্গাইগাঁও ডিব্রুগড় এবং ত্রিপুরার কাঞ্চনপুর ও মানু এলাকায় দুই কলাম করে আধা-সেনা নামানো হয়েছে । এছাড়া বঙ্গাইগাঁও-এর অদূরে আরও এক কলাম সেনা এনে রাখা হয়েছে । পরিস্থিতি যদি আরও ঘোরালো হয়, তবে তাদেরও নামানো হবে । উল্লেখ্য, প্রতি কলামে 70 জন করে সেনা থাকে এবং তাদের নেতৃত্ব দেন দুইজন আধিকারিক । আমন আনন্দ আরও জানিয়েছেন, দুই রাজ্যেই পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে সেনার সদর দপ্তর ও ফিল্ড কমান্ডার । এছাড়া আগামী কয়েকদিনের মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রায় 5000 আধা-সেনা পাঠানো হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের তরফে ত্রিপুরায় মঙ্গলবার থেকে 48 ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে । বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করে রাখায় সেখানে হাসপাতালে যাওয়ার পথে একটি দুইমাসের শিশুর মৃত্যু হয় । ধলাই জেলায় বিক্ষোভকারীরা অ-জনজাতির একাধিক দোকান গতকাল পুড়িয়ে দেয় ।
অসমে এই বিলের প্রতিবাদে ছাত্র সংগঠনগুলি মূলত মুখ্য ভূমিকা নিয়েছে । তাদের বিক্ষোভের জেরে রেল চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে । বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ দোকানপাট ও অফিস । উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের তরফে জানানো হয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একাধিক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে । গুয়াহাটি সহ অসমের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে আজও বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আজ গুয়াহাটিতে কার্ফু জারি করা হয়েছে । আজ রাত 7টা থেকে অসমের 10টি জেলায় 24 ঘণ্টার জন্য মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে । পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল আজ বিকেলে গুয়াহাটি বিমানবন্দরে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে আটকে পড়েন । রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবর মিলেছে । গত শতাব্দীর আটের দশকে অসমে 'অনুপ্রবেশ' ইশুতে আন্দোলন শুরু করেছিল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন । সেই সময় রাজ্যজুড়ে যে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তার সঙ্গে আজকের পরিস্থিতির তুলনা করছে ওয়াকিবহাল মহল ।
উল্লেখ্য, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল 2019 - এ বলা হয়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে আগত সেই সমস্ত দেশের সংখ্যালঘু শরণার্থীদের ভারতে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে । বিলটি লোকসভায় পাস হওয়ার পরেই অসম, ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্যে এই বিলের প্রতিবাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সরব হয় । রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে । অ-জনজাতি লোকজনকে রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয় । এবার সেখানে তাদের উপর হামলা শুরু হয়েছে । ওই রাজ্যের আন্দোলনকারীদের দাবি, বাইরে থেকে লোকজন তাদের রাজ্যে এসে বসবাস করলে সেখানের ভূমিপুত্রদের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়বে । যদিও অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজ়োরামের জনজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলিকে বিলের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে । পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের যে রাজ্যগুলিতে ইনার-লাইন পারমিট ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলিও এই বিলের আওতার বাইরে ।