অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তোর জেলার কনিপাকামের মন্দির ৷ এখানে গণপতি পরিচিত শ্রী ভরসিদ্ধি বিনায়ক নামে ৷ কথিত আছে এখানকার গণেশ প্রতিমার পোশাকের মাপ না কি প্রতিদিন বাড়ছে ৷ কিন্তু কেন ? একবার পড়ে নেওয়া যাক কনিপাকাম মন্দিরের ইতিহাস ৷
ইতিহাস বলছে : প্রায় এক হাজার বছর আগে বিহারীপুর গ্রামে তিন বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন ভাই ছিলেন ৷ তাঁদের তিনজনের মধ্যে কেউ অন্ধ, কেউ বোবা কেউ বা বধির ছিলেন ৷ তবে তাঁরা তিনজনই ছিলেন ধার্মিক ও সত্যবাদী ৷ চাষ-বাস করেই জীবন কাটাতেন এই তিন ভাই ৷ একবার ওই গ্রামে খরা দেখা দিল ৷ যার কারণে পুরো গ্রামে দুর্ভিক্ষ দেখা যায় ৷ অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে পর্যাপ্ত পরিষ্কার জল পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছিল না ৷ তখন জলের জন্য ওই তিন ভাই জমিতে কুয়ো খননের পরিকল্পনা করেন ৷ সেই অনুযায়ী কুয়ো খুঁড়তেও শুরু করেন তাঁরা ৷ কিন্তু খননের সময় তাঁরা একটি বড় পাথর খুঁজে পান ৷ সেই পাথর বেলচা দিয়ে সরাতে তাঁরা পাথরটিতে আঘাত করে ৷ তখন দেখা যায় পাথরটি থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে ৷ এই ঘটনা লক্ষ্য করেন গ্রামবাসীরা ৷ বিষয়টি বোঝার জন্য তাঁরা আরও গভীরে কূপ খনন করতে শুরু করেন ৷ তাঁরা দেখতে পান কুয়োতে পড়ে রয়েছে একটি গণেশ মূর্তি ৷ গ্রামবাসীরা নারকেল জল জোগাড় করে ওই জমিতে ছড়িয়ে দেন ৷ তখন থেকে বিহারীপুরি গ্রামের নাম হয় কানিপারকারম ৷ যার অর্থ কানি মানে জমি ৷ পারকারম মানে ভেজা জমি ৷
কী বিশেষত্ব রয়েছে মন্দিরটির ?
কানিপাকাম ভরসিদ্ধি বিনায়ক যিনি পরিচিত সত্যের দেবতা হিসেবে ৷ এই মন্দিরের বিশ্বাস, যদি কেউ এই ভগবানের নামে মিথ্যা কথা বলেন তাহলে তাঁকে শাস্তি পেতে হয় ৷ পাশাপাশি আরও বিশ্বাস রয়েছে, নেশামুক্তির জন্যও যদি কেউ মানত করেন, সেও তার ফল পাবে ৷
ভরসিদ্ধি গণেশের আকৃতি বৃদ্ধি
এই মূতিটি নিয়ে একটি প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে ৷ এখানকার মানুষজন বিশ্বাস করেন ভরসিদ্ধি গণেশের আকৃতি প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ 1945 সালে বিজয়ওয়ার এক ভক্ত এই গণপতির জন্য একটি রুপোর পোশাক তৈরি করে নিয়ে আসেন ৷ কয়েক বছর বাদে যখন তিনি আবার যখন একই মাপের পোশাক নিয়ে আসেন তার আকৃতি তখন বড় দেখায় ৷ এরপর 2000, 2003 সালেও একই ঘটনা ঘটে ৷ তারপর থেকে এখনও অবধি মন্দিরের একটি মিউজ়িয়াম সংরক্ষিত আছে গণপতির সমস্ত পোষাক ৷
শুধু গণপতি নয় , কানিপারকাম মন্দিরটিতে শিব ও বিষ্ণুরও উপাসনা করা হয় ৷ গণেশ মন্দির সংলগ্ন আরও অনেক মন্দির আছে ৷ আর তাদের রয়েছে আলাদা আলাদা পরিকাঠামো ৷ পাশাপাশি গণপতি এখানে বিভিন্ন রূপে পুজিত হন ৷ যেমন মহাগণপতি, দক্ষিণামূর্তি, সুরয়ুদু শানমুকদু, দুর্গাদেবী, প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা মন্দির রয়েছে ৷ প্রতিটি মন্দির ভাস্কর্য, ও স্থাপত্যে ঘেরা ৷ এখানে রাহু ও কেতু পুজো করা হয় ৷
21 দিনের ব্রহ্মোৎসব
কানিপাকাম মন্দিরে 21 দিন যাবৎ গণপতি উৎসব পালন করা ৷ বছরে একবার এই মহোৎসবটি পালিত হয় ৷ আশেপাশের মোট 14 গ্রামের মানুষজন মিলে এই উৎসব করেন ৷ প্রতিদিন সকালে শ্রদ্ধার সঙ্গে গণেশকে স্নান করানো হয় ৷ পাশাপাশি 21 দিন যাবৎ গণেশকে রাজহাঁস, ময়ূর, ইঁদুর , ষাঁড়, হাতি মতো সাজানো গাড়িতে করে তাকে মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয় ৷