ETV Bharat / state

10 বছর আগে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ! স্মৃতি ফিরলেও অশান্ত বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন না 'হিনা' - BANGLADESHI WOMAN IN INDIA

ভারতীয় চিকিৎসকদের সেবায় স্মৃতি ফিরে পেলেন 'হিনা' ৷ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে হচ্ছে না দেশে ফেরা ৷

Bangladeshi Woman in India
দেশে ফেরার অপেক্ষায় বাংলাদেশের 'হিনা' (বাঁ-দিক থেকে দ্বিতীয়) ৷ (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 1, 2025, 6:13 PM IST

জলপাইগুড়ি, 1 জানুয়ারি: মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন বাংলাদেশের নাগরিক হিনা খাতুন (নাম পরিবর্তিত) ৷ শুধু বাড়ি ছাড়েননি ৷ একেবারে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন ৷ মাঝে দশটা বছর পেরিয়ে গিয়েছে ৷ আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়ার একটি হোমে তাঁর চিকিৎসা হয়েছে ৷ বর্তমানে অতীতের সব স্মৃতি ফিরে এসেছে হিনার ৷ কিন্তু, বাংলাদেশের পরিস্থিতির কারণে দেশে ফিরতে চেয়েও পারছেন না তিনি ৷ জেলা প্রশাসনের তরফে চেষ্টা চলছে তাঁকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ৷

জানা গিয়েছে, হিনা 10 বছর আগে ভারতে এলেও, প্রথম তিন বছর ভবঘুরের মতো থেকেছেন ৷ আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়ার কয়েকজন মহিলা তাঁকে রাস্তায় দেখে স্থানীয় এক হোমে নিয়ে যান ৷ সেখানেই গত 7 বছর ধরে তাঁর চিকিৎসা চলে ৷ চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে হারানো স্মৃতি ফিরে পেয়েছেন তিনি ৷ তারপরেই হোমের মালিক সাজু তালুকদারকে হিনা জানান, তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার হুসেনপুরে ৷

সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে (ইটিভি ভারত)

সাজু তালুকদার ইটিভি ভারতকে জানিয়েছেন, "সাত বছর আগে মাদারিহাটের কিছু মহিলা হিনা খাতুনকে রাস্তায় পেয়ে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন ৷ এরপর তাঁর চিকিৎসা চলে ৷ চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে হিনা নিজের নাম বলতে পারেন ৷ আমাদের জানান তাঁর বাড়ি বাংলাদেশে ৷ আমি এরপর চিন্তায় পড়ে যাই ৷ বাংলাদেশের এক মহিলাকে কীভাবে রাখব ৷ তাই পুরো বিষয়টি আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানাই ৷"

হোমের মালিক বলেন, "পুলিশ ও জেলা প্রশাসন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৷ খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, হিনারা ছয় ভাই, তিন বোন ও বাবা রয়েছেন ৷ হিনার মা কয়েকবছর আগে মারা গিয়েছেন ৷ পরিবারের লোকেরা ভেবেছিলেন, তাঁদের মেয়ে হয়তো মারা গিয়েছেন ৷ এরপর পুলিশ তাঁর বাড়ির নম্বর জোগাড় করলে, যোগাযোগ করা হয় ৷ তারপর পুলিশকে লিখিত দেওয়া হয় বাংলাদেশের নাগরিককে তাঁর দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করার জন্য ৷"

এ নিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ প্রশাসনের তরফে বলা হয়, "বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থির হওয়ার আগে হিনার পরিবারের ঠিকানা জোগড় করা হয় ৷ যেহেতু অনুপ্রবেশ ইস্যু রয়েছে, তাই আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে বিষয়টি জানাই ৷ সেই মতো দুই দেশের প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা করে হিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ৷ কিন্তু, বাংলাদেশে গণ্ডগোলের জন্য সেই প্রক্রিয়া আটকে গিয়েছে ৷ তবুও, আমরা চেষ্টা করছি তাঁকে যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে বাংলাদেশে ফেরানো যায় ৷"

তবে, হিনা খাতুন দেশে ফিরতে চেয়ে জেদ ধরেছেন ৷ পরিবারের কাছে যাওয়ার জন্য বায়না ধরেছেন ৷ কিন্তু, পরিস্থিতি অনুকূল না-হওয়ায়, তাঁর যে এখনই দেশে ফেরা সম্ভব নয়, তা জানানো হয়েছে হিনাকে ৷ তবে, মায়ের মৃত্যু এবং বাবার শয্যাশায়ী থাকার বিষয়টি এখনও হিনাকে জানানো হয়নি ৷ সাজু তালুকদার বলেন, "ওঁর মা মারা গিয়েছেন ৷ এক দাদাও মারা গিয়েছেন ৷ বাবা শয্যাশায়ী ৷ এসব কিছু তাঁকে জানানো হয়নি ৷ এখানে কীভাবে চলে এসেছে জানি না ৷ বাড়ি যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করে ৷ তাঁকে বুঝিয়ে রাখা হয়েছে ৷ তিনি মেয়েকে দেখতে চাইছেন ৷"

ফোনে হিনার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ৷ তিনি বলেন, "আমরা ভাবতেই পারিনি দিদি বেঁচে আছে ৷ দিদি ভারতে সাজু তালুকদারের কাছে ভালো আছেন ৷ আমরাও চেষ্টা করছি দিদিকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ৷ ভারতের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে ৷ আমরা কাগজপত্র ভারতে পাঠিয়েছি ৷ আসলে বাংলাদেশের আইনি জটিলতার কারণে আমরা সমস্যায় পড়েছি ৷ ভারত সহজ উপায়ে দিদিকে ফিরিয়ে দিতে পারে কি না, সেটাই চেষ্টা হচ্ছে ৷ সাজু তালুকদার আমাদের সহযোগিতা করছেন ৷"

তবে, ঠিক কবে হিনা আবার কবে দেশে ফিরতে পারবেন ! পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চলা অস্থির পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তার উপর ৷ কিন্তু, সেটাও দুই দেশের কূটনৈতিক বিষয় ৷ তবে, সেই কূটনীতির প্রভাব কতটা পড়বে হিনার বাংলাদেশে ফেরার উপর, তা সময় বলবে ৷

জলপাইগুড়ি, 1 জানুয়ারি: মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন বাংলাদেশের নাগরিক হিনা খাতুন (নাম পরিবর্তিত) ৷ শুধু বাড়ি ছাড়েননি ৷ একেবারে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন ৷ মাঝে দশটা বছর পেরিয়ে গিয়েছে ৷ আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়ার একটি হোমে তাঁর চিকিৎসা হয়েছে ৷ বর্তমানে অতীতের সব স্মৃতি ফিরে এসেছে হিনার ৷ কিন্তু, বাংলাদেশের পরিস্থিতির কারণে দেশে ফিরতে চেয়েও পারছেন না তিনি ৷ জেলা প্রশাসনের তরফে চেষ্টা চলছে তাঁকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ৷

জানা গিয়েছে, হিনা 10 বছর আগে ভারতে এলেও, প্রথম তিন বছর ভবঘুরের মতো থেকেছেন ৷ আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়ার কয়েকজন মহিলা তাঁকে রাস্তায় দেখে স্থানীয় এক হোমে নিয়ে যান ৷ সেখানেই গত 7 বছর ধরে তাঁর চিকিৎসা চলে ৷ চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে হারানো স্মৃতি ফিরে পেয়েছেন তিনি ৷ তারপরেই হোমের মালিক সাজু তালুকদারকে হিনা জানান, তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার হুসেনপুরে ৷

সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে (ইটিভি ভারত)

সাজু তালুকদার ইটিভি ভারতকে জানিয়েছেন, "সাত বছর আগে মাদারিহাটের কিছু মহিলা হিনা খাতুনকে রাস্তায় পেয়ে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন ৷ এরপর তাঁর চিকিৎসা চলে ৷ চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে হিনা নিজের নাম বলতে পারেন ৷ আমাদের জানান তাঁর বাড়ি বাংলাদেশে ৷ আমি এরপর চিন্তায় পড়ে যাই ৷ বাংলাদেশের এক মহিলাকে কীভাবে রাখব ৷ তাই পুরো বিষয়টি আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানাই ৷"

হোমের মালিক বলেন, "পুলিশ ও জেলা প্রশাসন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৷ খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, হিনারা ছয় ভাই, তিন বোন ও বাবা রয়েছেন ৷ হিনার মা কয়েকবছর আগে মারা গিয়েছেন ৷ পরিবারের লোকেরা ভেবেছিলেন, তাঁদের মেয়ে হয়তো মারা গিয়েছেন ৷ এরপর পুলিশ তাঁর বাড়ির নম্বর জোগাড় করলে, যোগাযোগ করা হয় ৷ তারপর পুলিশকে লিখিত দেওয়া হয় বাংলাদেশের নাগরিককে তাঁর দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করার জন্য ৷"

এ নিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ প্রশাসনের তরফে বলা হয়, "বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থির হওয়ার আগে হিনার পরিবারের ঠিকানা জোগড় করা হয় ৷ যেহেতু অনুপ্রবেশ ইস্যু রয়েছে, তাই আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে বিষয়টি জানাই ৷ সেই মতো দুই দেশের প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা করে হিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ৷ কিন্তু, বাংলাদেশে গণ্ডগোলের জন্য সেই প্রক্রিয়া আটকে গিয়েছে ৷ তবুও, আমরা চেষ্টা করছি তাঁকে যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে বাংলাদেশে ফেরানো যায় ৷"

তবে, হিনা খাতুন দেশে ফিরতে চেয়ে জেদ ধরেছেন ৷ পরিবারের কাছে যাওয়ার জন্য বায়না ধরেছেন ৷ কিন্তু, পরিস্থিতি অনুকূল না-হওয়ায়, তাঁর যে এখনই দেশে ফেরা সম্ভব নয়, তা জানানো হয়েছে হিনাকে ৷ তবে, মায়ের মৃত্যু এবং বাবার শয্যাশায়ী থাকার বিষয়টি এখনও হিনাকে জানানো হয়নি ৷ সাজু তালুকদার বলেন, "ওঁর মা মারা গিয়েছেন ৷ এক দাদাও মারা গিয়েছেন ৷ বাবা শয্যাশায়ী ৷ এসব কিছু তাঁকে জানানো হয়নি ৷ এখানে কীভাবে চলে এসেছে জানি না ৷ বাড়ি যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করে ৷ তাঁকে বুঝিয়ে রাখা হয়েছে ৷ তিনি মেয়েকে দেখতে চাইছেন ৷"

ফোনে হিনার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ৷ তিনি বলেন, "আমরা ভাবতেই পারিনি দিদি বেঁচে আছে ৷ দিদি ভারতে সাজু তালুকদারের কাছে ভালো আছেন ৷ আমরাও চেষ্টা করছি দিদিকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ৷ ভারতের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে ৷ আমরা কাগজপত্র ভারতে পাঠিয়েছি ৷ আসলে বাংলাদেশের আইনি জটিলতার কারণে আমরা সমস্যায় পড়েছি ৷ ভারত সহজ উপায়ে দিদিকে ফিরিয়ে দিতে পারে কি না, সেটাই চেষ্টা হচ্ছে ৷ সাজু তালুকদার আমাদের সহযোগিতা করছেন ৷"

তবে, ঠিক কবে হিনা আবার কবে দেশে ফিরতে পারবেন ! পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চলা অস্থির পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তার উপর ৷ কিন্তু, সেটাও দুই দেশের কূটনৈতিক বিষয় ৷ তবে, সেই কূটনীতির প্রভাব কতটা পড়বে হিনার বাংলাদেশে ফেরার উপর, তা সময় বলবে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.