দিল্লি, 22 অগাস্ট : অর্থ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের গুরুদায়িত্ব সামলেছেন বছরের পর বছর । তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা-প্রজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তোলার জায়গা নেই । ধুরন্ধর রাজনৈতিক পি চিদম্বরমের শান্ত স্বভাবই কি তাঁর বিড়ম্বনা বাড়াল? আজ CBI প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বারবার জেরা করার পর অভিযোগ তুলেছিল তিনি তথ্য গোপন করছেন । এমনকী CBI আদালতের বিচারকও চিদাম্বরমের শান্ত, স্থির স্বভাব দেখে খানিকটা অবাক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা । প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে আজ নিজেদের হেপাজতে পাওয়ার জন্য একাধিক বার দরবার করেছে CBI। এখানেই কোথাও যেন একটা খটকা ।
আজ আদালতে পেশ করার সময় বেশ ভাবলেশহীন দেখিয়েছে চিদম্বরমকে। যেভাবে গতকাল 27 ঘণ্টা পর সাংবাদিক বৈঠকে কার্যত ঝড় তুলেছিলেন, নিজের বাড়ি ফিরেছিলেন, আজ যেন তেমনই ভাবলেশহীন দেখাল তাঁকে । CBI দপ্তরে রাত কাটানোর পরও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মুখ থেকে হাসিটুকু বিন্দুমাত্র বিলীন হয়নি । এমনকী আদালতে পেশের আগে হাতজোড় করে আইনজীবীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে দেখা গেছে তাঁকে । তাঁর চোখে-মুখে কোথাও বিন্দুমাত্র ভয়, হতাশা ধরা পড়েনি বলেই দাবি CBI-র একাংশর । তিনঘণ্টা ধরে CBI-র দুঁদে গোয়েন্দারা জেরা করেছেন, একটিবারের জন্যও ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি তাঁকে । দক্ষ রাজনীতিকের মতোই CBI-র অফিসারদের সামলেছেন । সূত্রের খবর, এই বিষয়টাতেই খটকা লেগেছে তাঁদের । একাধিক গুরুত্বপূর্ণ-স্পর্শকাতর আলোড়ন ফেলে দেওয়া মামলার তদন্ত করে আসা CBI অফিসাররা কোথাও যেন একটা খেই হারাচ্ছিলেন চিদম্বরমের সামনে, সূত্র অন্তত এমনটাই বলছে ।
শুরু যদি হয়ে থাকে জিজ্ঞাসা পর্বে, তাহলে তার চূড়ান্ত রূপ বোধহয় আদালত কক্ষেই মিলল । প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে আসামির কাঠগড়ায় দেখেও প্রয়োজনীয় সম্মান দিতে কসুর করেননি বিচারক । প্রাক্তন মন্ত্রীকে বসার জন্য অনুরোধও জানান তিনি । কিন্তু, তিনি যে কতটা দৃঢ়চেতা তা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন চিদম্বরম । চেয়ারে বসতে বলার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে চিদম্বরমের স্পষ্ট জবাব ছিল, "না, না ।....ঠিক আছে ।...আমি দাঁড়িয়েই থাকব ।" শুনানি চলাকালীন একটিবারও বসেননি 73 বছরের এই রাজনীতিবিদ । CBI আইনজীবীদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন নিজের চেনা স্বভাবেই ।
আরও পড়ুন : সোমবার পর্যন্ত চিদম্বরমকে CBI হেপাজতের নির্দেশ আদালতের
শুনানি চলার সময় একটিবারের জন্যও ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি প্রাক্তন মন্ত্রীকে । অন্তত বাইরে দেখে তো বোঝার উপায় ছিল না । ভেতরে নিঃসন্দেহে ঝড়-ঝাপটা চলছিল । যাঁরা চিদম্বরমকে কাছ থেকে চেনেন, তাঁর সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক ময়দানে লড়াই করার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা বলেন, মনের জোর নাকি অসম্ভব বেশি তাঁর । অন্তত পরিস্থিতিতে হার না মানার মানসিকতা নিয়ে লড়তে পারেন । বাইরে থেকে দেখে তাঁকে বোঝার উপায় থাকে না ভেতরে কী চলছে । অন্তত ঠান্ডা মাথার চিদম্বরমকে সংসদেও বিপক্ষের আক্রমণ সামলাতে দেখা গেছে যুক্তি দিয়ে, শান্তভাবে । অতি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক পদক্ষেপের সমালোচনায় রাজ্যসভায় তিনি ছিলেন কংগ্রেসের মুখ । বিরোধীদের বিরোধিতার পরও একটিবারও মেজাজ হারিয়ে হটকারি পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি । বরং শান্তভাবে, যুক্তি দিয়ে নিজের মত প্রকাশেই দৃঢ়তা দেখিয়েছেন তিনি । রাজনৈতিকভাবে বহু ঝড়-ঝাপটা সামলে আসা চিদম্বরমকে গ্রেপ্তারের আগে এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছিলেন CBI-র শীর্ষ কর্তারা ।
সূত্রের খবর, আজ যখন বার বার প্রাক্তন মন্ত্রীকে জেরা করেও তাঁকে টলানো যায়নি, তখনই হেপাজতে নেওয়ার বিষয়টি ভাবনাচিন্তা করেন CBI অফিসাররা । মনে করা হচ্ছে, চিদম্বরমের 'বাঁধ' ভেঙে তাঁর কাছ থেকে INX দুর্নীতির বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে তাঁকে হেপাজতে নেওয়ার পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা । যাতে আগামী সোমবার পর্যন্ত দফায় দফায় জেরা করে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে তারা ।