গুরুগ্রাম (হরিয়ানা), 23 এপ্রিল: দেশে রোজ বেড়ে চলেছে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা । সংক্রমিতদের চিকিৎসা করার সময় কোরোনার কবলে পড়ছেন বহু চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও । এই অবস্থায় সংক্রমিত রোগীদের পর্যবেক্ষণে ও সংক্রমণের হার কমাতে মানবাকৃতি বা হিউমানয়েড রোবট চালু করা হচ্ছে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সে (AIIMS) । এই রোবটটি হাসপাতালে কোরোনা আক্রান্ত রোগীর সরাসরি সংস্পর্শে না এসে, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে তাঁকে দেখাশোনার কাজ করতে পারবে । এছাড়াও মানুষের সাহায্য ছাড়াই হাসপাতালের COVID-19 ওয়ার্ডে জীবাণুমুক্তকরণের কাজও করতে পারবে ।
এই রোবট বানানোর পিছনে অবদান রয়েছে মিলাগ্র হিউমান টেক সংস্থার । বর্তমান কোরোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংস্থার তরফে এই হিউমানয়েড রোবট মিলাগ্র 'ELF', হাসপাতালের COVID-19 ওয়ার্ডের জন্যই উৎসর্গ করা হয়েছে । প্রথমে এই রোবট তৈরি করা হয় আতিথেয়তার কাজ সামলানোর জন্য । পরে স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রের সমস্ত কাজ সামলানোর জন্য রোবটটির ফিচারে কিছু পরিবর্তন করা হয় । মিলাগ্রর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান রাজীব কারওয়াল জানিয়েছেন, "আতিথেয়তার সমস্তরকম কাজ যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করতে পারে সেই উদ্দেশেই এই রোবটটি প্রথমে তৈরি করা হয়েছিল । কিন্তু ইতালিতে যখন সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য 28-30% চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের কোরোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে আসে তখনই আমরা এই রোবটটি নিয়ে অন্যরকম চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিই । আমরা ভাবছিলাম কীভাবে এই রোবটটি দিয়ে হাসপাতালের কোরোনা আক্রান্ত ওয়ার্ডে কাজ করানো যায় , যাতে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমণের ভয় অনেকটাই কমে যেতে পারে । এরপরেই রোবটটির ফাংশনিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনি । চারটি নতুন ফাংশন দেওয়া হয় রোবটটিতে । এর ফলে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের খুবই সুবিধা হবে । "
COVID-19 ওয়ার্ডে এই রোবটটির বৈশিষ্ট্য নিয়ে কারওয়াল বলেন, " এই রোবটটিকে না ছুঁইয়ে কাজ করানো যাবে । রোবটটি তার মাস্টারকে চিনে নিতে সক্ষম । অনুসরণ করতে সক্ষম । বিশ্বের যে কোনও প্রান্ত থেকে চিকিৎসকরা এই রোবটটির সঙ্গে টেলিকনসালটেশন করতে পারবেন । এছাড়াও রোবটটি রোগীর সঙ্গে কথা বলতেও সক্ষম । যখন ডাক্তার উপস্থিত থাকবেন না তখনও যে কোনও কেউ এই রোবটটিকে নির্দিষ্ট কিছু টেমপ্লেটের সাহায্যে চালনা করতে পারবেন । হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোবটটি বিচরণ, পর্যবেক্ষণ, নজরদারি চালাতে পারবে ।" তিনি আরও জানিয়েছেন, "24 মার্চ লকডাউন ঘোষণা হয় । 5 এপ্রিল AIIMS-এর থেকে আমাদের কাছে ফোন আসে । তখনই আমরা রোবটটির ফিচারে বেশ কিছু পরিবর্তন আনি । এছাড়ও অন্য একটি বেসরকারি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে । তারাও এই রোবটটি আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করেছে।"
মিলাগ্রো রোবটটি হাসপাতালের COVID-19 ওয়ার্ডে সকলের সঙ্গে নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রেখে জীবাণুমুক্তকরণ এবং পরিষ্কারের কাজ করতে সক্ষম বলে জানিয়েছেন কারওয়াল । ফোর্টিস মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট (গুরুগ্রাম) জ়োনাল ডিরেক্টর ডাঃ ঋতু গর্গ জানিয়েছেন, "রোগীদের সংস্পর্শে এসে ডাক্তারদের কাজ করার বিষয়টি অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে এই রোবট । এতে আমাদের কর্মী ও রোগীদের সুরক্ষা অনেকটাই বেড়ে গেল ।"