ETV Bharat / bharat

চিনের সামগ্রী বাদ দিন, কিন্তু মনে রাখবেন লড়াইটা সে দেশের সরকারের সঙ্গে : ওয়াংচুক

ভারতের ভূখণ্ডে চিনা আগ্রাসন ইশুতে ETV ভারতের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সোনম ওয়াংচুক ।

author img

By

Published : Jun 10, 2020, 10:44 PM IST

মুখোমুখি সোনম ওয়াংচুক
মুখোমুখি সোনম ওয়াংচুক

প্রশ্ন : ওয়ালেট বনাম বুলেটের ভাবনা আমার মনে কীভাবে এল ?

উত্তর : লাদাখে বসবাস করার জন্য আমি চিনের কার্যকলাপ দেখতে পাচ্ছি ৷ আগ্রাসন বা অনুপ্রবেশ, আপনি যাই বলুন না কেন ! এটা প্রায় সবসময়ই ঘটে ৷ লাদাখের বাসিন্দারা এটা প্রতিদিন সহ্য করেন ৷ বিশেষ করে মেষপালকদের সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয় ৷ তাঁরা রোজ তাঁদের ছাগল নিয়ে চরাতে যান ৷ কিন্তু সেই কাজের জন্য ব্যবহৃত জমি ক্রমশ কমে যাচ্ছে (চিনের আগ্রাসনের কারণেই এটা হচ্ছে) ৷ আমি ভাবছিলাম যে এর বিরুদ্ধে কিছু তো একটা করা উচিত ৷ কয়েকদিন আগে যখন তারা ফের অনুপ্রবেশ করল, তখন আমি বুঝতে পারলাম এইবার তাঁদের অভিসন্ধি এবং পরিকল্পনা একেবারে ভিন্ন ৷ শুধুমাত্র সীমান্ত লঙ্ঘন এবার তাঁদের লক্ষ্য ছিল না ৷ কোনও দেশই এমনটা করবে না, যাঁরা কোরোনার মতো প্যানডেমিকের সঙ্গে লড়াই করছে ৷ আমি বুঝতে পারলাম শুধু ভারত নয়, দক্ষিণ চিন সাগরে ভিয়েতনাম, তাইওয়ান থেকে অ্যামেরিকার নৌবাহিনী, প্রত্যেককেই উসকানোর চেষ্টা চলছে ৷ এটাই প্রমাণ করছে যে চিনের এই কার্যকলাপের কারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন ৷ কারণ, সবকিছুই একমাসের মধ্যে ঘটেছে ৷ আমরা এ নিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতেই পারি যে চিন সরকার সাফল্যের সঙ্গে এই প্যানডেমিকের মোকাবিলা করতে পারেনি ৷ ফলে তাদের অর্থনীতির উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে ৷ এর জেরে সেই দেশের মানুষ চিনের সরকারের উপর ক্ষুব্ধ ৷ সেই অভ্যন্তরীণ সমস্যা মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে চিন ৷ তাই তাঁরা তাঁদের দেশের মানুষের মনযোগ অন্যদিকে ঘোরাতে চাইছেন ৷ সেই কারণেই তাঁরা এই সব করছেন ৷ এবার আমাদের এটা বুঝতে হবে যে চিন যদি এই কাজ শুধুমাত্র তাঁদের অর্থনীতি বাঁচানোর জন্য করে, তাহলে আমাদেরও তাঁদের অর্থনীতির উপর আঘাত হানতে হবে ৷ আমাদের তাঁদের ফাঁদে পা দিয়ে বন্দুক ও গুলির মাধ্যমে জবাব দেওয়া উচিত নয় ৷ যদি তাঁরা তাঁদের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে যাওয়ার ভয় পায়, তাহলে কেন তাঁদের অর্থনীতির উপর আঘাত করা হবে না? সেই কারণেই আমি বলেছি যে এটা ভারতবাসীকেই করতে হবে এবং ওয়ালেটের মাধ্যমে এটা করতে হবে ৷ একটি অ্যাপ আন-ইনস্টল করে আপনি আপনার ওয়ালেট আপনার বাড়িতে, শহরে কিংবা গ্রামে বসে ব্যবহার করতে পারেন ৷ এটা শুনতে খুব ছোট মনে হয় ৷ কিন্তু এটাই যদি প্রচুর পরিমাণে হয়, লাখ লাখ কিংবা কোটি কোটি অ্যাপ আন-ইনস্টল হয়ে যায়, তখন তাঁরা সেটারই মুখোমুখি হবে, এখন যার ভয় পাচ্ছে ৷ অর্থনীতি দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে চিনের মানুষের হতাশা আরও বৃদ্ধি পাবে ৷

প্রশ্ন : কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন আছে ৷ চিনের সামগ্রী এবং অ্যাপ বয়কট করার সিদ্ধান্ত কি বাস্তবসম্মত ? কারণ, চিনের সামগ্রী এখন শুধু ভারতেই নয় গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে ৷ এটা অসম্ভব কোনও কাজ নয় ৷ কিন্তু কঠিন তো বটেই ৷

উত্তর : হ্যাঁ, এটা কঠিন ৷ কিন্তু অসম্ভবও নয় ৷ আমি সবসময় বলি এই পৃথিবীতে এমন অনেক কিছু আছে যা করা খুব কঠিন ৷ জৈন সম্প্রদায়ের মানুষেরা পেঁয়াজ, আদা ও গাজর খান না ৷ কিন্তু তাও তাঁরা বেঁচে রয়েছেন ৷ ফলে কোনও কিছুই কঠিন নয় ৷ যদি কোনও মানুষ দৃঢ়তার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয় ৷ তাহলে পরিস্থিতি তাঁকে সেই দিকে এগোতে সাহায্য করবে ৷ জৈন সম্প্রদায় যেখানেই যাক না কোনও, তারা ঠিক খাবার জোগাড় করে নেয় ৷ আমিষ যাঁরা খান, তাঁরা আমিষ যোগাড় করে নেন ৷ যাঁরা নিরামিষ খান, তাঁরা নিরামিষ যোগাড় করে নেন ৷ আমাদের জওয়ানেরা কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে যেভাবে ভারত-চিন সীমান্তে পাহারা দিচ্ছেন, সেই সমস্যার সঙ্গে এই সমস্যাগুলিকে যদি একসঙ্গে বিচার করি, তাহলে একটি চিনা অ্যাপ আন-ইনস্টল করা একেবারেই কঠিন নয় ৷ একটা অ্যাপ আন-ইনস্টল করার জন্য আপনারা যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, তা এর সঙ্গে তুলনায় আসে না ৷ যদি আপনারা একটা অ্যাপ আন-ইনস্টল করতে না পারেন, তাহলে আর কী বলতে পারি !

প্রশ্ন : গড়পড়তা ভারতীয়র এই ‘চলতা হ্যায়’ মনোভাব আপনার উপর কী প্রভাব ফেলে ?

উত্তর : হ্যাঁ, এই দায়সারা মনোভাবে আমার খুব রাগ হয় ৷ যদি একটি দেশ হিসেবে আমাদের নিচে নেমে যাওয়ার কোনও কারণ থাকে, তাহলে সেটা এই ‘চলতা হ্যায়’ মনোভাবের জন্যই ৷ এটা এমন একটা জিনিস, যা চিনের থেকে আমাদের শিখতে হবে ৷ আমি লক্ষ্য করে দেখেছি যে তারা সব বিষয়েই খুব সতর্ক থাকে ৷ যার ফলেই তারা সাফল্যের রাস্তায় যেতে পারে ৷ কিন্তু যদি আমরা সীমান্তের এই দিকে তাকাই, তাহলে একটা ধারাবাহিক অলসতা দেখতে পাব ৷ সেটা এমন ভাবে তৈরি হয়েছে, যা আমরা এই লকডাউন পরবর্তী সময়ে দেখতে পাচ্ছি ৷ গত কয়েক মাসে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আমরা সারা বিশ্বে প্রশংসা পেয়েছি ৷ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই ‘চলতা হ্যায়’ মনোভাবের জন্য আমাদের এই সুনাম নষ্ট হয়ে যাবে ৷ আমরা যদি প্রয়োজনীয় সতর্কতা না নিই, তাহলে কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই ভারত হেরে যাবে ৷ যদি ভারতীয়রা দ্রুত এই ভাইরাসের কবলে চলে আসে, তাহলে আমরা কীভাবে চিনের বিরুদ্ধে লড়াই করব ৷ অন্যদিকে চিনের নাগরিকদের থেকে আমরা প্রতিমুহূর্তে দায়িত্ববোধের পরিচয় পাচ্ছি ৷ চিনে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে বড় কারণ ছিল ৷ এটা চিনাদের থেকে শিখে নেওয়া উচিত ৷ আর আমাদেরও নিজেদের নিয়মানুবর্তী করে গড়ে তুলতে হবে ৷ তাহলেই কিছুটা লড়াই করার আশা বজায় থাকবে ৷

প্রশ্ন : আমরা চিন থেকে 5 লাখ কোটির সামগ্রী আমদানি করি ৷ বৈদুতিন সামগ্রীর 41 শতাংশ আসে সেখান থেকে ৷ আপনি কি অন্য কোনও দেশের নাম বলতে পারেন, যেখান থেকে আমরা আমদানি করতে পারি ? উৎপাদনের ঘাটতি থাকার কারণে দেশীয় সামগ্রীর মাধ্যমে এর বিকল্প হওয়া যাবে না ৷

উত্তর : ঠিকই ৷ আমাদের চাহিদার ঘাটতি মেটানোর জন্য দেশীয় সামগ্রীর উপরই জোর দিতে হবে ৷ অন্য দেশ থেকে আমদানি করলে বিষয়টা এরকম হবে না ৷ আমাদের এমন একটা দেশ থেকে আমদানি করতে হবে, যাদের মানবাধিকার সংক্রান্ত আইন শক্তিশালী, যারা পরিবেশ সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চলে, ভারতের প্রতি যাদের ব্যবহার ভালো ৷ আর যারা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে না ৷ মানবাধিকার সংক্রান্ত আইন এবং শ্রম আইন লঙ্ঘন করে বলেই চিনের কমদামের ও প্রতিযোগিতামূলক সামগ্রী তৈরি করা সম্ভব হয় ৷ কারণ, আমরা যেটা দেখতে পাই, তা হল সেখানে শ্রমিকরা খুবই সহজলভ্য ৷ তাদের পরিবেশ কিংবা শ্রমিকদের সম্পর্কে কোনও ভাবনা নেই ৷ তারা এই দু’টিকে যতটা সম্ভব ব্যবহার ও শোষণ করার চেষ্টা করে ৷ জাল সামগ্রী তৈরির বিষয়ে তাদের অতীত কিন্তু একেবারেই ভালো নয় ৷ অর্থের হেরফের এবং কম দামে সামগ্রী বিক্রির এটাই অন্যতম বড় কারণ ৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এবং নিজেদের দেশের মানুষের প্রতি চিনের এই আচরণ কি সমর্থন করা উচিত ! এবার এই প্রশ্নই আমাদের উচিত নিজেদের উদ্দেশ্যে করা ৷

এই সামগ্রীগুলি পরিবেশ এবং শ্রমের মারাত্মক পরিমাণে শোষণের ফল ৷ এছাড়াও আরও অনেক অনৈতিক বিষয় রয়েছে ৷ এগুলিও এই সামগ্রীগুলি বয়কট করার অন্যতম কারণ ৷ আমাদের এটাও অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে আমরা চিনের মানুষের বিপক্ষে নই ৷ আমরা চিনের সরকারের বিপক্ষে ৷ যদি চিন সরকার এই শোষণ বন্ধ করে দেয় এবং প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে, তাহলে আমরা আমাদের অবস্থানের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে পারি এবং এই বয়কট তুলে নিয়ে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করতে পারি ৷

প্রশ্ন : এই যে বয়কটের আহ্বান, যা আপনি ভারতবাসীর জন্য করেছেন, তা কি ভারতীয় সংস্থাগুলির জন্যও করবেন ?

উত্তর : আমার প্রথম আহ্বান ভারতবাসীর জন্য, যাতে তারা এই লড়াই জিততে পারেন ৷ আর এই ছোট্ট অসুবিধা সহ্য করার পর আমি ভারত সরকার, বড় ব্যবসায়ীদের কাছে আবেদন করব ৷ যাতে তারা ভারতে তৈরি সামগ্রীর প্রচার করেন ৷

প্রশ্ন : চিন আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করতে চাইছে ৷ সম্প্রতি সরকার কিছু পদক্ষেপ করেছে যাতে চিন থেকে সরাসরি বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় ৷ আপনি যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন, সেই বিষয়ে সরকার আগেই পদক্ষেপ করেছে ৷ আপনি কি এমনটা বলতে চাইবেন ?

উত্তর : যদি দেশীয় ব্যবসাকে সুরক্ষিত করার জন্য সরকারি তরফে এমন কোনও পদক্ষেপ করা হয়ে থাকে, তাহলে আমি তার প্রশংসা করব ৷ আমার আহ্বান কোনও পূর্বপরিকল্পনামাফিক ছিল না ৷ যখন চিনের দ্বারা ভারতের সম্মান ও সার্বভৌমত্ব নষ্ট হতে দেখলাম, তখন মন থেকেই এই আহ্বানের বিষয়টি উঠে এল ৷

প্রশ্ন : ওই অঞ্চলে জলের সংকট এবং প্যাংগং সো হ্রদ থেকে জল নেওয়ার জন্যই চিন সরকার এই পদক্ষেপ করেছে ৷ আপনি কি এটা বিশ্বাস করেন ?

উত্তর : তাদের লক্ষ্য ওই হ্রদের জলের দিকে নেই ৷ বরং রয়েছে জলের উৎসের দিকে ৷ আমাদের নজরদারি বজায় রাখতে হবে এবং আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে চলতে হবে ৷ যদি তারা পিছিয়ে যায় ৷ তাহলে তারা (চিনা সেনা) আগামী এক বছরের মধ্যে ফিরে আসতেও পারে ৷ আবার নাও আসতে পারে ৷ ১৯৬২ সালে আমাদের থেকে যে জমি তারা নিয়ে নিয়েছিল, তা আমরা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাতে পারি ৷ ১৯৬২ সালের আগে যে অবস্থা ছিল, সেই অবস্থায় ফিরে যাওয়ার দাবিও জানাতে পারি ৷

প্রশ্ন : ETV Bharat-এর দর্শকদের জন্য আপনি কী বলতে চাইবেন ?

উত্তর : যে কোনও গর্বিত নাগরিকই চাইবে যে তাঁর দেশের অর্থনীতি উচ্চস্তরে থাক ৷ বিশ্বায়নের নামে আমরা অন্য দেশ থেকে চামচ, পাঁউরুটি, মাখনের মতো সাধারণ সামগ্রী আমদানি করি ৷ আমাদের দেশীয় সামগ্রী এবং পরিবেশের উপর নজর দেওয়া উচিত ৷ পরিবেশ বান্ধব বিশ্বায়নের পৃথিবী তৈরির দিকেই নজর রাখা জরুরি ৷

আমি এই আহ্বান শুধু ভারতীয়দের নয়, সমস্ত দেশের নাগরিকদের কাছেই করতে চাই ৷ আমি আপনাদের সমস্ত দর্শকের কাছে অনুরোধ করব যে আমার ওই ভিডিয়োটি শেয়ার করুন, যাতে আমি ‘চিনকে বদলাতে সাহায্য করুন’-এর কথা বলেছি ৷ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা চিনের নাগরিকদের কাছে এই ভিডিয়ো পাঠিয়েদিন ৷ যাতে চিনের উপর আরও আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হয় ৷ আপনারা সকলে ‘ওয়ালেট সৈনিক’ ৷ আপনার কর্তব্যের জন্য পদক্ষেপ করুন ৷

প্রশ্ন : ওয়ালেট বনাম বুলেটের ভাবনা আমার মনে কীভাবে এল ?

উত্তর : লাদাখে বসবাস করার জন্য আমি চিনের কার্যকলাপ দেখতে পাচ্ছি ৷ আগ্রাসন বা অনুপ্রবেশ, আপনি যাই বলুন না কেন ! এটা প্রায় সবসময়ই ঘটে ৷ লাদাখের বাসিন্দারা এটা প্রতিদিন সহ্য করেন ৷ বিশেষ করে মেষপালকদের সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয় ৷ তাঁরা রোজ তাঁদের ছাগল নিয়ে চরাতে যান ৷ কিন্তু সেই কাজের জন্য ব্যবহৃত জমি ক্রমশ কমে যাচ্ছে (চিনের আগ্রাসনের কারণেই এটা হচ্ছে) ৷ আমি ভাবছিলাম যে এর বিরুদ্ধে কিছু তো একটা করা উচিত ৷ কয়েকদিন আগে যখন তারা ফের অনুপ্রবেশ করল, তখন আমি বুঝতে পারলাম এইবার তাঁদের অভিসন্ধি এবং পরিকল্পনা একেবারে ভিন্ন ৷ শুধুমাত্র সীমান্ত লঙ্ঘন এবার তাঁদের লক্ষ্য ছিল না ৷ কোনও দেশই এমনটা করবে না, যাঁরা কোরোনার মতো প্যানডেমিকের সঙ্গে লড়াই করছে ৷ আমি বুঝতে পারলাম শুধু ভারত নয়, দক্ষিণ চিন সাগরে ভিয়েতনাম, তাইওয়ান থেকে অ্যামেরিকার নৌবাহিনী, প্রত্যেককেই উসকানোর চেষ্টা চলছে ৷ এটাই প্রমাণ করছে যে চিনের এই কার্যকলাপের কারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন ৷ কারণ, সবকিছুই একমাসের মধ্যে ঘটেছে ৷ আমরা এ নিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতেই পারি যে চিন সরকার সাফল্যের সঙ্গে এই প্যানডেমিকের মোকাবিলা করতে পারেনি ৷ ফলে তাদের অর্থনীতির উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে ৷ এর জেরে সেই দেশের মানুষ চিনের সরকারের উপর ক্ষুব্ধ ৷ সেই অভ্যন্তরীণ সমস্যা মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে চিন ৷ তাই তাঁরা তাঁদের দেশের মানুষের মনযোগ অন্যদিকে ঘোরাতে চাইছেন ৷ সেই কারণেই তাঁরা এই সব করছেন ৷ এবার আমাদের এটা বুঝতে হবে যে চিন যদি এই কাজ শুধুমাত্র তাঁদের অর্থনীতি বাঁচানোর জন্য করে, তাহলে আমাদেরও তাঁদের অর্থনীতির উপর আঘাত হানতে হবে ৷ আমাদের তাঁদের ফাঁদে পা দিয়ে বন্দুক ও গুলির মাধ্যমে জবাব দেওয়া উচিত নয় ৷ যদি তাঁরা তাঁদের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে যাওয়ার ভয় পায়, তাহলে কেন তাঁদের অর্থনীতির উপর আঘাত করা হবে না? সেই কারণেই আমি বলেছি যে এটা ভারতবাসীকেই করতে হবে এবং ওয়ালেটের মাধ্যমে এটা করতে হবে ৷ একটি অ্যাপ আন-ইনস্টল করে আপনি আপনার ওয়ালেট আপনার বাড়িতে, শহরে কিংবা গ্রামে বসে ব্যবহার করতে পারেন ৷ এটা শুনতে খুব ছোট মনে হয় ৷ কিন্তু এটাই যদি প্রচুর পরিমাণে হয়, লাখ লাখ কিংবা কোটি কোটি অ্যাপ আন-ইনস্টল হয়ে যায়, তখন তাঁরা সেটারই মুখোমুখি হবে, এখন যার ভয় পাচ্ছে ৷ অর্থনীতি দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে চিনের মানুষের হতাশা আরও বৃদ্ধি পাবে ৷

প্রশ্ন : কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন আছে ৷ চিনের সামগ্রী এবং অ্যাপ বয়কট করার সিদ্ধান্ত কি বাস্তবসম্মত ? কারণ, চিনের সামগ্রী এখন শুধু ভারতেই নয় গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে ৷ এটা অসম্ভব কোনও কাজ নয় ৷ কিন্তু কঠিন তো বটেই ৷

উত্তর : হ্যাঁ, এটা কঠিন ৷ কিন্তু অসম্ভবও নয় ৷ আমি সবসময় বলি এই পৃথিবীতে এমন অনেক কিছু আছে যা করা খুব কঠিন ৷ জৈন সম্প্রদায়ের মানুষেরা পেঁয়াজ, আদা ও গাজর খান না ৷ কিন্তু তাও তাঁরা বেঁচে রয়েছেন ৷ ফলে কোনও কিছুই কঠিন নয় ৷ যদি কোনও মানুষ দৃঢ়তার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয় ৷ তাহলে পরিস্থিতি তাঁকে সেই দিকে এগোতে সাহায্য করবে ৷ জৈন সম্প্রদায় যেখানেই যাক না কোনও, তারা ঠিক খাবার জোগাড় করে নেয় ৷ আমিষ যাঁরা খান, তাঁরা আমিষ যোগাড় করে নেন ৷ যাঁরা নিরামিষ খান, তাঁরা নিরামিষ যোগাড় করে নেন ৷ আমাদের জওয়ানেরা কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে যেভাবে ভারত-চিন সীমান্তে পাহারা দিচ্ছেন, সেই সমস্যার সঙ্গে এই সমস্যাগুলিকে যদি একসঙ্গে বিচার করি, তাহলে একটি চিনা অ্যাপ আন-ইনস্টল করা একেবারেই কঠিন নয় ৷ একটা অ্যাপ আন-ইনস্টল করার জন্য আপনারা যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, তা এর সঙ্গে তুলনায় আসে না ৷ যদি আপনারা একটা অ্যাপ আন-ইনস্টল করতে না পারেন, তাহলে আর কী বলতে পারি !

প্রশ্ন : গড়পড়তা ভারতীয়র এই ‘চলতা হ্যায়’ মনোভাব আপনার উপর কী প্রভাব ফেলে ?

উত্তর : হ্যাঁ, এই দায়সারা মনোভাবে আমার খুব রাগ হয় ৷ যদি একটি দেশ হিসেবে আমাদের নিচে নেমে যাওয়ার কোনও কারণ থাকে, তাহলে সেটা এই ‘চলতা হ্যায়’ মনোভাবের জন্যই ৷ এটা এমন একটা জিনিস, যা চিনের থেকে আমাদের শিখতে হবে ৷ আমি লক্ষ্য করে দেখেছি যে তারা সব বিষয়েই খুব সতর্ক থাকে ৷ যার ফলেই তারা সাফল্যের রাস্তায় যেতে পারে ৷ কিন্তু যদি আমরা সীমান্তের এই দিকে তাকাই, তাহলে একটা ধারাবাহিক অলসতা দেখতে পাব ৷ সেটা এমন ভাবে তৈরি হয়েছে, যা আমরা এই লকডাউন পরবর্তী সময়ে দেখতে পাচ্ছি ৷ গত কয়েক মাসে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আমরা সারা বিশ্বে প্রশংসা পেয়েছি ৷ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই ‘চলতা হ্যায়’ মনোভাবের জন্য আমাদের এই সুনাম নষ্ট হয়ে যাবে ৷ আমরা যদি প্রয়োজনীয় সতর্কতা না নিই, তাহলে কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই ভারত হেরে যাবে ৷ যদি ভারতীয়রা দ্রুত এই ভাইরাসের কবলে চলে আসে, তাহলে আমরা কীভাবে চিনের বিরুদ্ধে লড়াই করব ৷ অন্যদিকে চিনের নাগরিকদের থেকে আমরা প্রতিমুহূর্তে দায়িত্ববোধের পরিচয় পাচ্ছি ৷ চিনে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে বড় কারণ ছিল ৷ এটা চিনাদের থেকে শিখে নেওয়া উচিত ৷ আর আমাদেরও নিজেদের নিয়মানুবর্তী করে গড়ে তুলতে হবে ৷ তাহলেই কিছুটা লড়াই করার আশা বজায় থাকবে ৷

প্রশ্ন : আমরা চিন থেকে 5 লাখ কোটির সামগ্রী আমদানি করি ৷ বৈদুতিন সামগ্রীর 41 শতাংশ আসে সেখান থেকে ৷ আপনি কি অন্য কোনও দেশের নাম বলতে পারেন, যেখান থেকে আমরা আমদানি করতে পারি ? উৎপাদনের ঘাটতি থাকার কারণে দেশীয় সামগ্রীর মাধ্যমে এর বিকল্প হওয়া যাবে না ৷

উত্তর : ঠিকই ৷ আমাদের চাহিদার ঘাটতি মেটানোর জন্য দেশীয় সামগ্রীর উপরই জোর দিতে হবে ৷ অন্য দেশ থেকে আমদানি করলে বিষয়টা এরকম হবে না ৷ আমাদের এমন একটা দেশ থেকে আমদানি করতে হবে, যাদের মানবাধিকার সংক্রান্ত আইন শক্তিশালী, যারা পরিবেশ সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চলে, ভারতের প্রতি যাদের ব্যবহার ভালো ৷ আর যারা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে না ৷ মানবাধিকার সংক্রান্ত আইন এবং শ্রম আইন লঙ্ঘন করে বলেই চিনের কমদামের ও প্রতিযোগিতামূলক সামগ্রী তৈরি করা সম্ভব হয় ৷ কারণ, আমরা যেটা দেখতে পাই, তা হল সেখানে শ্রমিকরা খুবই সহজলভ্য ৷ তাদের পরিবেশ কিংবা শ্রমিকদের সম্পর্কে কোনও ভাবনা নেই ৷ তারা এই দু’টিকে যতটা সম্ভব ব্যবহার ও শোষণ করার চেষ্টা করে ৷ জাল সামগ্রী তৈরির বিষয়ে তাদের অতীত কিন্তু একেবারেই ভালো নয় ৷ অর্থের হেরফের এবং কম দামে সামগ্রী বিক্রির এটাই অন্যতম বড় কারণ ৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এবং নিজেদের দেশের মানুষের প্রতি চিনের এই আচরণ কি সমর্থন করা উচিত ! এবার এই প্রশ্নই আমাদের উচিত নিজেদের উদ্দেশ্যে করা ৷

এই সামগ্রীগুলি পরিবেশ এবং শ্রমের মারাত্মক পরিমাণে শোষণের ফল ৷ এছাড়াও আরও অনেক অনৈতিক বিষয় রয়েছে ৷ এগুলিও এই সামগ্রীগুলি বয়কট করার অন্যতম কারণ ৷ আমাদের এটাও অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে আমরা চিনের মানুষের বিপক্ষে নই ৷ আমরা চিনের সরকারের বিপক্ষে ৷ যদি চিন সরকার এই শোষণ বন্ধ করে দেয় এবং প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে, তাহলে আমরা আমাদের অবস্থানের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে পারি এবং এই বয়কট তুলে নিয়ে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করতে পারি ৷

প্রশ্ন : এই যে বয়কটের আহ্বান, যা আপনি ভারতবাসীর জন্য করেছেন, তা কি ভারতীয় সংস্থাগুলির জন্যও করবেন ?

উত্তর : আমার প্রথম আহ্বান ভারতবাসীর জন্য, যাতে তারা এই লড়াই জিততে পারেন ৷ আর এই ছোট্ট অসুবিধা সহ্য করার পর আমি ভারত সরকার, বড় ব্যবসায়ীদের কাছে আবেদন করব ৷ যাতে তারা ভারতে তৈরি সামগ্রীর প্রচার করেন ৷

প্রশ্ন : চিন আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করতে চাইছে ৷ সম্প্রতি সরকার কিছু পদক্ষেপ করেছে যাতে চিন থেকে সরাসরি বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় ৷ আপনি যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন, সেই বিষয়ে সরকার আগেই পদক্ষেপ করেছে ৷ আপনি কি এমনটা বলতে চাইবেন ?

উত্তর : যদি দেশীয় ব্যবসাকে সুরক্ষিত করার জন্য সরকারি তরফে এমন কোনও পদক্ষেপ করা হয়ে থাকে, তাহলে আমি তার প্রশংসা করব ৷ আমার আহ্বান কোনও পূর্বপরিকল্পনামাফিক ছিল না ৷ যখন চিনের দ্বারা ভারতের সম্মান ও সার্বভৌমত্ব নষ্ট হতে দেখলাম, তখন মন থেকেই এই আহ্বানের বিষয়টি উঠে এল ৷

প্রশ্ন : ওই অঞ্চলে জলের সংকট এবং প্যাংগং সো হ্রদ থেকে জল নেওয়ার জন্যই চিন সরকার এই পদক্ষেপ করেছে ৷ আপনি কি এটা বিশ্বাস করেন ?

উত্তর : তাদের লক্ষ্য ওই হ্রদের জলের দিকে নেই ৷ বরং রয়েছে জলের উৎসের দিকে ৷ আমাদের নজরদারি বজায় রাখতে হবে এবং আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে চলতে হবে ৷ যদি তারা পিছিয়ে যায় ৷ তাহলে তারা (চিনা সেনা) আগামী এক বছরের মধ্যে ফিরে আসতেও পারে ৷ আবার নাও আসতে পারে ৷ ১৯৬২ সালে আমাদের থেকে যে জমি তারা নিয়ে নিয়েছিল, তা আমরা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাতে পারি ৷ ১৯৬২ সালের আগে যে অবস্থা ছিল, সেই অবস্থায় ফিরে যাওয়ার দাবিও জানাতে পারি ৷

প্রশ্ন : ETV Bharat-এর দর্শকদের জন্য আপনি কী বলতে চাইবেন ?

উত্তর : যে কোনও গর্বিত নাগরিকই চাইবে যে তাঁর দেশের অর্থনীতি উচ্চস্তরে থাক ৷ বিশ্বায়নের নামে আমরা অন্য দেশ থেকে চামচ, পাঁউরুটি, মাখনের মতো সাধারণ সামগ্রী আমদানি করি ৷ আমাদের দেশীয় সামগ্রী এবং পরিবেশের উপর নজর দেওয়া উচিত ৷ পরিবেশ বান্ধব বিশ্বায়নের পৃথিবী তৈরির দিকেই নজর রাখা জরুরি ৷

আমি এই আহ্বান শুধু ভারতীয়দের নয়, সমস্ত দেশের নাগরিকদের কাছেই করতে চাই ৷ আমি আপনাদের সমস্ত দর্শকের কাছে অনুরোধ করব যে আমার ওই ভিডিয়োটি শেয়ার করুন, যাতে আমি ‘চিনকে বদলাতে সাহায্য করুন’-এর কথা বলেছি ৷ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা চিনের নাগরিকদের কাছে এই ভিডিয়ো পাঠিয়েদিন ৷ যাতে চিনের উপর আরও আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হয় ৷ আপনারা সকলে ‘ওয়ালেট সৈনিক’ ৷ আপনার কর্তব্যের জন্য পদক্ষেপ করুন ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.