ETV Bharat / bharat

জরুরি অবস্থা : ভারতের অন্ধকারতম সময় - জরুরি অবস্থা

1975 সালের 25 জুন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ইন্দিরা গান্ধি সরকার । ভারতের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে যা অন্ধকারতম সময় বলে উল্লেখ করা হয় ।

Emergency period during indira gandhi era
ইন্দিরা গান্ধির সময় জরুরি অবস্থা
author img

By

Published : Jun 25, 2020, 7:59 PM IST

45 বছর আগে 1975 সালে ভারত সবথেকে অন্ধকারময় সময়ে চলে গেছিল। জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি । তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ সংবিধানের 352(1) ধারায় জরুরি অবস্থার নির্দেশ দেন । দীর্ঘ 21 মাস দেশে জরুরি অবস্থা জারি ছিল । 1975 সালের 25 জুন থেকে 1977 সালের 21 মার্চ পর্যন্ত চলেছিল জরুরি অবস্থা ।

জয়প্রকাশ নারায়ণ 1975 সালের 25 জুন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির পদত্যাগের দাবিতে আইন অমান্য কর্মসূচির ডাক দেন । ওইদিন জরুরি অবস্থার ঘোষণা করে ইন্দিরা গান্ধি সরকার । পরের দিন অর্থাৎ 26 জুন অন্তর্বর্তী নিরাপত্তা আইনের অধীনে প্রধানমন্ত্রীর বিরোধীদের গ্রেপ্তার করা হয় । জয়প্রকাশ নারায়ণ, রাজ নরাইন, জ্যোতি বসু (কমিউনিস্ট পার্টি, মার্ক্সিস্ট), সমর গুহ (জনসংঘের সভাপতি) সহ 100-র বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ।

জরুরি অবস্থা চলাকালীন উল্লেখযোগ্য ঘটনা

1975, 1 জুলাই : অসামরিক কার্যকলাপ বন্ধ করা হয় । জন্মনিয়ন্ত্রণের উপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন বাধ্যতামূলক করা হয় । জরুরি অবস্থা চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন শ্রমিক, ছোটো কৃষক এবং গ্রামীণ শিল্পীদের ঋণ পরিশোধ করার বিষয়ে 20টি উদ্যোগ নিয়েছিলেন । তাঁর পরিকল্পনা ছিল, এই সমস্ত শ্রমজীবী মানুষকে অন্য উপায়ে ঋণ দেওয়া । পাশাপাশি বিনা মজুরিতে শ্রম বন্ধ করা ও কৃষি জমি বিক্রি আইন প্রয়োগ করা । এই কর্মসূচির দ্বারা হস্তশিল্পকে বিশেষ সাহায্যের ঘোষণা করা হয় ।

দ্রব্যমূল্য কমানো থেকে কর ফাঁকি দেওয়া, চোরাচালান বন্ধ, জরুরি জিনিসের সরবরাহ জারি রাখা হয় । আয়কর ছাড় বেড়ে 8 হাজার টাকা হয় এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদারনীতি গৃহীত হয় ।

1975, 4 জুলাই : দেশের চার জাতীয়তাবাদী দল ও তাদের 12 সহযোগী দল নিষিদ্ধ ঘোষিত করে কেন্দ্রীয় সরকার । এরমধ্যে আনন্দমার্গ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক নকশাল এবং জামাত-এ-ইসলামি-এ-হিন্দ ছিল ।

1975, 3 অগাস্ট : এলাহাবাদ হাইকোর্টে ইন্দিরা গান্ধিকে ক্লিনচিট দিতে তৈরি হয় নতুন আইন ।

1975, অগাস্ট 4: কম করে 50 হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয় ।

1975, 15 অগাস্ট : বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মুজিবুর রহমানকে খুন করে বাংলাদেশি জঙ্গি নেতারা । এই ঘটনা ভারতের বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন সমস্যা তৈরি করে ।

1975, 15 সেপ্টেম্বর : দিল্লি হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, জরুরি অবস্থা চলাকালীন কেউ গ্রেপ্তার হলে তার বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী নিরাপত্তা আইনের অধীনে চার্জশিট গঠন করা হবে ।

1975, 26 সেপ্টেম্বর : প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচনের জন্য নতুন সংশোধনী আইন গৃহীত হয় ।

1976, 9 জানুয়ারি : ভারতীয় সংবিধানের 19 নম্বর ধারায় যে সাতটি স্বাধীনতা দেওয়া হত তা রোধ করে ইন্দিরা গান্ধির সরকার ।

1976, 4 ফেব্রুয়ারি : লোকসভার সময়-সীমা বৃদ্ধি করা হয় ।

1976, 2 নভেম্বর : 42 তম সংবিধান সংশোধনী বিল লোকসভায় পাশ হয় । দেশকে সামাজিক, গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ করে গড়ে তুলতে এই বিল পাস করে ভারত সরকার ।

1977, 18 জানুয়ারি : লোকসভা ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি ।

1977, 21 মার্চ : জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয় ।

1977, 22 মার্চ : জনতা পার্টির পক্ষে বিপুল ভোট যায় ।

ভারতীয় সংবিধান তিন ধরনের জরুরি অবস্থা ঘোষণার অধিকার দেয় রাষ্ট্রপতিকে । তিন ধরনের জরুরি অবস্থা হল- জাতীয় জরুরি অবস্থা, রাজ্যের জরুরি অবস্থা এবং অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা । এই জরুরি অবস্থার চিন্তাভাবনা জার্মানির সংবিধান থেকে গৃহীত । 352 ধারায় জাতীয় জরুরি অবস্থা, 356 ধারায় রাজ্যে জরুরি অবস্থা (রাষ্ট্রপতি শাসন) ও 360 ধারায় অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইন্দিরা গান্ধির অন্ধকারতম সময়

ইন্দিরা গান্ধির বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন রাজ নারাইন । 1971 সালে সংসদীয় নির্বাচনে তিনি ইন্দিরা গান্ধির কাছে পরাজিত হন । এই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রী আদালতের দ্বারা প্রশ্নের মুখে পড়েন । এলাহাবাদ হাইকোর্টে ইন্দিরা গান্ধি দোষী প্রমাণিত হন । 1971-এর নির্বাচন বাতিল করা হয় । এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ইন্দিরা গান্ধি । বিচারপতি ভি আর কৃষ্ণা আইয়ার 1975 সালে 24 জুন এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেন । এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার একটি সংশোধনী আইন পাশ করে । যেখানে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচনকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানো যাবে না । এর পাশাপাশি ইন্দিরা গান্ধির ছেলে সঞ্জয় গান্ধি যিনি সে সময় কোনও সরকারি পদে ছিলেন না, তিনি সরকারের সমস্ত নিয়ন্ত্রণ হাতে পান ।

21 মাস ধরে জরুরি অবস্থা চালানোর উদ্দেশ্য ছিল, ‘অন্তর্বতী উত্তেজনা’ নিয়ন্ত্রণ করা । ওই সময় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয় । গোটা ঘটনাকে জাতীয় স্বার্থ বলে উল্লেখ করেন ইন্দিরা গান্ধি । এই বিষয়ে তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন তিনি । প্রথম, জয়প্রকাশ নারায়ণের ডাকে আইন অমান্যের ফলে দেশের নিরাপত্তা বিপদের মুখে পড়ে । দ্বিতীয়, তিনি মনে করেছিলেন অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করা প্রয়োজন । তৃতীয়, তাঁঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বিদেশি শক্তি সক্রিয় ছিল ।

জরুরী অবস্থার পরবর্তী সময়

1977 সালের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করে, ওই বছরের মার্চ মাসে নির্বাচন হবে । বিরোধীরা জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে নতুন দল গঠনের উদ্যোগ নেয় । স্বাধীনতার পর প্রথমবার কোনও অ-কংগ্রেসি দল কেন্দ্রে ক্ষমতা আসে । ওই বছর লোকসভা নির্বাচনে 330টি আসনের মধ্যে 154টি আসন পায় কংগ্রেস । অন্যদিকে 295 আসনে জয়ী হয় জনতা পার্টি । রায়বেরিলি থেকে হেরে যান ইন্দিরা গান্ধি । আমেঠি থেকে হেরে যান সঞ্জয় গান্ধি । এরপর ইন্দিরা গান্ধি এবং সঞ্জয় গান্ধিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন জনতা পার্টির সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরি চরণ সিং । এর অর্থ সংসদ থেকে ইন্দিরা গান্ধিকে বিচ্যুত করা ।

কিন্তু জনতা পার্টির এই সিদ্ধান্ত তাদের বিরুদ্ধে যায় । সাধারণ মানুষের সহানুভূতি পান ইন্দিরা । তাঁঁর বিরুদ্ধে ওঠা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ক্লিনচিট পান ইন্দিরা গান্ধি । এরপর জনসমক্ষে জরুরি অবস্থায় করা ভুল নিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেন তিনি । 1980 সালের নির্বাচনে আরও একবার ক্ষমতায় আসেন গান্ধি । জরুরি অবস্থা থেকে যে শিক্ষা নেওয়া যায়- ইতিহাসবিদ জ্ঞান প্রকাশের এমারজেন্সি বই থেকে বলা যেতে পারে “ভারতীয় গণতন্ত্রের গর্বিত ইতিহাসে জরুরি অবস্থা একটি অন্ধকারময় অধ্যায় ।”

45 বছর আগে 1975 সালে ভারত সবথেকে অন্ধকারময় সময়ে চলে গেছিল। জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি । তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ সংবিধানের 352(1) ধারায় জরুরি অবস্থার নির্দেশ দেন । দীর্ঘ 21 মাস দেশে জরুরি অবস্থা জারি ছিল । 1975 সালের 25 জুন থেকে 1977 সালের 21 মার্চ পর্যন্ত চলেছিল জরুরি অবস্থা ।

জয়প্রকাশ নারায়ণ 1975 সালের 25 জুন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির পদত্যাগের দাবিতে আইন অমান্য কর্মসূচির ডাক দেন । ওইদিন জরুরি অবস্থার ঘোষণা করে ইন্দিরা গান্ধি সরকার । পরের দিন অর্থাৎ 26 জুন অন্তর্বর্তী নিরাপত্তা আইনের অধীনে প্রধানমন্ত্রীর বিরোধীদের গ্রেপ্তার করা হয় । জয়প্রকাশ নারায়ণ, রাজ নরাইন, জ্যোতি বসু (কমিউনিস্ট পার্টি, মার্ক্সিস্ট), সমর গুহ (জনসংঘের সভাপতি) সহ 100-র বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ।

জরুরি অবস্থা চলাকালীন উল্লেখযোগ্য ঘটনা

1975, 1 জুলাই : অসামরিক কার্যকলাপ বন্ধ করা হয় । জন্মনিয়ন্ত্রণের উপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন বাধ্যতামূলক করা হয় । জরুরি অবস্থা চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন শ্রমিক, ছোটো কৃষক এবং গ্রামীণ শিল্পীদের ঋণ পরিশোধ করার বিষয়ে 20টি উদ্যোগ নিয়েছিলেন । তাঁর পরিকল্পনা ছিল, এই সমস্ত শ্রমজীবী মানুষকে অন্য উপায়ে ঋণ দেওয়া । পাশাপাশি বিনা মজুরিতে শ্রম বন্ধ করা ও কৃষি জমি বিক্রি আইন প্রয়োগ করা । এই কর্মসূচির দ্বারা হস্তশিল্পকে বিশেষ সাহায্যের ঘোষণা করা হয় ।

দ্রব্যমূল্য কমানো থেকে কর ফাঁকি দেওয়া, চোরাচালান বন্ধ, জরুরি জিনিসের সরবরাহ জারি রাখা হয় । আয়কর ছাড় বেড়ে 8 হাজার টাকা হয় এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদারনীতি গৃহীত হয় ।

1975, 4 জুলাই : দেশের চার জাতীয়তাবাদী দল ও তাদের 12 সহযোগী দল নিষিদ্ধ ঘোষিত করে কেন্দ্রীয় সরকার । এরমধ্যে আনন্দমার্গ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক নকশাল এবং জামাত-এ-ইসলামি-এ-হিন্দ ছিল ।

1975, 3 অগাস্ট : এলাহাবাদ হাইকোর্টে ইন্দিরা গান্ধিকে ক্লিনচিট দিতে তৈরি হয় নতুন আইন ।

1975, অগাস্ট 4: কম করে 50 হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয় ।

1975, 15 অগাস্ট : বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মুজিবুর রহমানকে খুন করে বাংলাদেশি জঙ্গি নেতারা । এই ঘটনা ভারতের বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন সমস্যা তৈরি করে ।

1975, 15 সেপ্টেম্বর : দিল্লি হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, জরুরি অবস্থা চলাকালীন কেউ গ্রেপ্তার হলে তার বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী নিরাপত্তা আইনের অধীনে চার্জশিট গঠন করা হবে ।

1975, 26 সেপ্টেম্বর : প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচনের জন্য নতুন সংশোধনী আইন গৃহীত হয় ।

1976, 9 জানুয়ারি : ভারতীয় সংবিধানের 19 নম্বর ধারায় যে সাতটি স্বাধীনতা দেওয়া হত তা রোধ করে ইন্দিরা গান্ধির সরকার ।

1976, 4 ফেব্রুয়ারি : লোকসভার সময়-সীমা বৃদ্ধি করা হয় ।

1976, 2 নভেম্বর : 42 তম সংবিধান সংশোধনী বিল লোকসভায় পাশ হয় । দেশকে সামাজিক, গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ করে গড়ে তুলতে এই বিল পাস করে ভারত সরকার ।

1977, 18 জানুয়ারি : লোকসভা ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি ।

1977, 21 মার্চ : জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয় ।

1977, 22 মার্চ : জনতা পার্টির পক্ষে বিপুল ভোট যায় ।

ভারতীয় সংবিধান তিন ধরনের জরুরি অবস্থা ঘোষণার অধিকার দেয় রাষ্ট্রপতিকে । তিন ধরনের জরুরি অবস্থা হল- জাতীয় জরুরি অবস্থা, রাজ্যের জরুরি অবস্থা এবং অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা । এই জরুরি অবস্থার চিন্তাভাবনা জার্মানির সংবিধান থেকে গৃহীত । 352 ধারায় জাতীয় জরুরি অবস্থা, 356 ধারায় রাজ্যে জরুরি অবস্থা (রাষ্ট্রপতি শাসন) ও 360 ধারায় অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইন্দিরা গান্ধির অন্ধকারতম সময়

ইন্দিরা গান্ধির বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন রাজ নারাইন । 1971 সালে সংসদীয় নির্বাচনে তিনি ইন্দিরা গান্ধির কাছে পরাজিত হন । এই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রী আদালতের দ্বারা প্রশ্নের মুখে পড়েন । এলাহাবাদ হাইকোর্টে ইন্দিরা গান্ধি দোষী প্রমাণিত হন । 1971-এর নির্বাচন বাতিল করা হয় । এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ইন্দিরা গান্ধি । বিচারপতি ভি আর কৃষ্ণা আইয়ার 1975 সালে 24 জুন এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেন । এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার একটি সংশোধনী আইন পাশ করে । যেখানে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচনকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানো যাবে না । এর পাশাপাশি ইন্দিরা গান্ধির ছেলে সঞ্জয় গান্ধি যিনি সে সময় কোনও সরকারি পদে ছিলেন না, তিনি সরকারের সমস্ত নিয়ন্ত্রণ হাতে পান ।

21 মাস ধরে জরুরি অবস্থা চালানোর উদ্দেশ্য ছিল, ‘অন্তর্বতী উত্তেজনা’ নিয়ন্ত্রণ করা । ওই সময় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয় । গোটা ঘটনাকে জাতীয় স্বার্থ বলে উল্লেখ করেন ইন্দিরা গান্ধি । এই বিষয়ে তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন তিনি । প্রথম, জয়প্রকাশ নারায়ণের ডাকে আইন অমান্যের ফলে দেশের নিরাপত্তা বিপদের মুখে পড়ে । দ্বিতীয়, তিনি মনে করেছিলেন অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করা প্রয়োজন । তৃতীয়, তাঁঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বিদেশি শক্তি সক্রিয় ছিল ।

জরুরী অবস্থার পরবর্তী সময়

1977 সালের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করে, ওই বছরের মার্চ মাসে নির্বাচন হবে । বিরোধীরা জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে নতুন দল গঠনের উদ্যোগ নেয় । স্বাধীনতার পর প্রথমবার কোনও অ-কংগ্রেসি দল কেন্দ্রে ক্ষমতা আসে । ওই বছর লোকসভা নির্বাচনে 330টি আসনের মধ্যে 154টি আসন পায় কংগ্রেস । অন্যদিকে 295 আসনে জয়ী হয় জনতা পার্টি । রায়বেরিলি থেকে হেরে যান ইন্দিরা গান্ধি । আমেঠি থেকে হেরে যান সঞ্জয় গান্ধি । এরপর ইন্দিরা গান্ধি এবং সঞ্জয় গান্ধিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন জনতা পার্টির সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরি চরণ সিং । এর অর্থ সংসদ থেকে ইন্দিরা গান্ধিকে বিচ্যুত করা ।

কিন্তু জনতা পার্টির এই সিদ্ধান্ত তাদের বিরুদ্ধে যায় । সাধারণ মানুষের সহানুভূতি পান ইন্দিরা । তাঁঁর বিরুদ্ধে ওঠা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ক্লিনচিট পান ইন্দিরা গান্ধি । এরপর জনসমক্ষে জরুরি অবস্থায় করা ভুল নিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেন তিনি । 1980 সালের নির্বাচনে আরও একবার ক্ষমতায় আসেন গান্ধি । জরুরি অবস্থা থেকে যে শিক্ষা নেওয়া যায়- ইতিহাসবিদ জ্ঞান প্রকাশের এমারজেন্সি বই থেকে বলা যেতে পারে “ভারতীয় গণতন্ত্রের গর্বিত ইতিহাসে জরুরি অবস্থা একটি অন্ধকারময় অধ্যায় ।”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.