হায়দরাবাদ, 3 জুলাই: সমগ্র বিশ্বে বর্তমানে কোরোনাভাইরাসে আক্রান্ত 11 মিলিয়নেরওবেশি মানুষ ৷ এই মারণ ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের পথ চেয়ে বসে রয়েছেন সকলে ৷প্রতিটি দেশের সরকার, স্বাস্থ্যকর্মীএবং ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে ওষুধ প্রস্তুতির কাজেদিনরাত লেগে রয়েছেন ৷ তবে ICMR শুক্রবারসকলকে চমকে দিয়ে ঘোষণা করেন, হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের সঙ্গেযৌথ প্রচেষ্টায় আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনটি 15 অগাস্টের মধ্যে জনসাধারণের ব্যবহারেরজন্য বাজারে আনার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে ৷
ICMR-রডিরেক্টর জেনারেল বলরাম ভার্গব একটি বিবৃতিতে জানান, ‘‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হওয়ার পরআগামী 15 অগাস্টেরমধ্যে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য ভ্যাকসিনটি বাজারে আনার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে ৷ এইলক্ষ্যপূরণে BBIL নিরন্তরপ্রচেষ্টা চালাচ্ছে তবে সমস্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের উপরই অন্তিম ফলাফল নির্ভরকরছে ৷’’
বুধবারইভারত বায়োটেকের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয় যে, কোরোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসাবেভারতে প্রথম ভ্যাকসিন ‘কো ভ্যাকসিন’ প্রস্তুত করা হয়েছে ৷ ভ্যাকসিনটিমানুষের দেহে প্রয়োগের জন্যও ভারতের ড্রাগ জেনারেলের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়া গিয়েছে৷ এর আগে 52 দিনআগেই প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়ে যাওয়ার পর BBIL জানায়, ভ্যাকসিন প্রস্তুতির জন্য ICMR ও পুনের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অবভাইরোলজির সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করা হবে ৷
ভারতবায়োটেকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডঃ কৃষ্ণা এলা ETV ভারতকে জানান, ‘‘একটি ভ্যাকসিন তৈরি করতে সাধারণত 14-15 বছর সময় লাগে ৷ বর্তমানে তা মাত্র একবছরে তৈরি করা হচ্ছে ৷’’ তারএই বক্তব্যে স্পষ্ট বোঝা যায়, বর্তমান covid পরিস্থিতিতে নিয়ম ও ট্রায়াল পদ্ধতিতেআমূল পরিবর্তন এসেছে ৷ সরকারের তরফ থেকে যাবতীয় ওষুধ ও ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপেররেজিস্ট্রেশনের জন্য সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনকেনিয়োগ করেছে ৷ ফলে পূর্বে কোনও আবেদনের অনুমোদনের জন্য যেখানে 12 মাস সময় লাগত, তা বর্তমানে তিনমাসের মধ্যেই অনুমোদনপাওয়া যাচ্ছে ৷ 30 মার্চCDSCO-রতরফ থেকে জানানো হয়, covid-19 র চিকিৎসার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেরজন্য সকল নিয়ম কানুন মেনে চলা অত্যন্ত কঠিন ৷ তবে সুরক্ষা বিষয়ে কোনও খামতি রাখাহবে না ৷ ভারত সরকারের তরফ থেকেও ড্রাগস ও কসমেটিক্স আইন, 1940-এও বেশ কিছু শিথিলতা আনা হয়েছে যাতেভ্যাকসিন প্রস্তুতিতে দ্রুত তা আনা যায় ৷
বিপুলআকারে ভ্যাকসিন ব্যবহারের জন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনও একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া ৷ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলি তিন ধাপে হয়ে থাকে, এই তিনটি ধাপ সম্পূর্ণ হওয়ার পরনিয়ামকদের কাছ থেকে ভ্যাকসিনের সম্মতি নেওয়ার জন্য পাঠানো হয় ৷ স্যাম্পেল সংখ্য়াবা আকার কমিয়ে দ্রুত ট্রায়াল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলেও ছয়মাসের বেশি সময় লাগেসম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ৷ তবে covid-19 এর ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে সময়সীমাব আরওপরিবর্তন করা হয়েছে ৷ ICMR-রবিবৃতিতে ডঃ ভার্গব জানান, ‘‘covid -19 প্যানডেমিকের ফলে সৃষ্ট বর্তমান জরুরিঅবস্থায় ভ্যাকসিন দ্রুত বাজারে আনার লক্ষ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতিসম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়টিকে অগ্রগণ্য করে 7 জুলাই, 2020-র আগে বিষয়টি নথিভুক্ত করতে হবে ৷
ICMR-রনির্দেশিকা আসার আগেই বৃহস্পতিবার ডঃ কৃষ্ণা এলা ভারত বায়োটেকের কার্যপদ্ধতিতেআলোকপাত করে বলেন, ‘‘প্রথমধাপে 28 দিনেরজন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হবে এবং একজন কোরোনামুক্ত ব্যক্তিকে নিয়োগের জন্যসেরোলজি অ্যানালাইসিস করা হবে ৷ rt-pcr পরীক্ষার পর নির্বাচিত কোনও ব্যক্তিরউপরে ভ্যাকসিনের ডোজ় প্রয়োগ করা হবে এবং 28 দিন সম্পূর্ণ হওয়ার পর ওই ব্যক্তিরস্যাম্পেল সংগ্রহ করা হবে ৷ এরপরে সেরোলজি করা হবে ৷ দেহে উৎপন্ন হওয়া অ্যান্টিবডিভাইরাসকে সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে্ দেবে না ৷ এই পদ্ধতিকে ‘নিউট্রিলাইজেশন’ বলা হয় ৷ সংগৃহীত রক্তের স্যাম্পেলএবং ভাইরাসকে BSL-3 ল্যাবেএনে পরীক্ষা করা হবে এবং লক্ষ্য রাখা হবে যাতে ভাইরাসটি সংখ্যায় বৃদ্ধি না পায় ৷এরপরই আমরা দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে কাজ শুরু করব ৷’’
বর্তমানেসমগ্র বিশ্বে মোট 140টিভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বিভিন্ন ধাপে রয়েছে ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারতথ্য অনুযায়ী 10টিভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগের ধাপে রয়েছে ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, 2021 সালের প্রথম ভাগের মধ্যে বাজারে প্রথমকোরোনার ভ্যাকসিন আসতে চলেছে ৷ যদি ভারত এর আগেই লক্ষ্য করতে পারে, তবে বিশ্বের ড্রাগ রেগুলেটরিব্যবস্থায় ভারতের পরাক্রম আশ্চর্যজনক কোনও বিষয় হবে না ৷