মালদা, 20 জানুয়ারি: ভারতীয় কৃষকদের জমি থেকে ফসল কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে বাংলাদেশিরা ৷ এমনই অভিযোগ তুলেছেন মালদার সুকদেবপুর গ্রামের বাসিন্দারা ৷ এর আগে শনিবার কাঁটাতার টপকে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি ৷ তাদের বাধা দেওয়ায় ভারতীয় নাগরিক ও বিএসএফ জওয়ানদের উপর হামলা চালায় ওই বাংলাদেশিরা ৷ এমনই অভিযোগ ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে বাধ্য হয় বিএসএফ ৷
সেদিনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সুকদেবপুরের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর বিএসএফ জওয়ান ৷ অথচ, তাঁদের নজর এড়িয়েই ফসল কেটে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা ৷ রবিরার থেকে অবশ্য উত্তেজনার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে ৷ সোমবারও সকাল থেকে পরিস্থিতিতে তেমন কোনও পরিবর্তন আসেনি ৷ নতুন করে আর উত্তেজনা ছড়ায়নি সীমান্ত এলাকায় ৷ দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে ৷
সুকদেবপুরের বাসিন্দা কানাই মণ্ডল বলেন, "কাঁটারতারের ওপারে আমার জমি আছে ৷ ওই জমিতে আমরা গম চাষ করি ৷ বাংলাদেশিরা আমাদের জমির গম কেটে নিচ্ছে ৷ গত 10 দিন ধরে এই ঘটনা ঘটেই চলেছে ৷ সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সবকিছু দেখেও চুপ করে রয়েছে ৷ রবিবারও গম কেটে নিয়েছে ৷ বিএসএফ-এর বাধায় আমরা জমিতে যেতে পারছি না ৷ এভাবে কতদিন চলবে জানি না ৷"
শবদলপুরের তপন দত্ত বলেন, "শনিবারের এত বড় ঘটনার পরও বাংলাদেশিরা রবিবার সকালে আমাদের জমির গম কেটে নিয়ে গিয়েছে ৷ ভারত সরকারের তরফে কাঁটাতার দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হতেই, এই অত্যাচার শুরু হয়েছে ৷ প্রতিদিন আমাদের ফসল কেটে নিচ্ছে ৷ বিজিবি সব দেখেও কিছু করছে না ৷ আমারদের কীভাবে চলবে ? আমরা কি এভাবেই নিজেদের ফসল নষ্ট হতে দেখব ? আমরা কি প্রতিরোধ করতে জানি না ?"
এদিকে, শনিবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে হবিবপুর ও বামনগোলা ব্লকের ইন্দো-বাংলা সীমান্ত এলাকায় ৷ মালদার এই দুই ব্লকের প্রায় 13 কিলোমিটার সীমান্ত অসংরক্ষিত ৷ এই পরিস্থিতিতে সুকদেবপুরের মতো এই দুই ব্লকের সীমান্তেও কড়া নিরাপত্তার জন্য বিএসএফ-এর কাছে আর্জি জানিয়েছেন ভারতীয়রা ৷
শিরষি কলাইবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মনোজ রায় বলেন, "এখানে কাঁটারতারের ওপারে আমাদেরও কৃষিজমি রয়েছে ৷ জমিতে ফসল লাগিয়েছি ৷ বাংলাদেশিরা যদি আমাদের জমির ফসল কাটতে শুরু করে তবে কিছু করার থাকবে না ৷ বিএসএফ-এর বাধায় আমরা সবসময় জমিতে যেতে পারি না ৷ তবে বিএসএফ জওয়ানরা আশ্বাস দিয়েছেন, তেমন কিছু হতে দেবেন না ৷ কিন্তু, হবিবপুর ও বামনগোলা ব্লকের প্রায় 13 কিলোমিটার অসংরক্ষিত সীমান্ত ৷ গরু পাচারের জন্য এই এলাকাই ব্যবহার করে পাচারকারীরা ৷ এই এলাকা দিয়ে বাংলাদেশিরা অনুপ্রবেশ শুরু করলে ঝামেলা আরও বাড়বে ৷ আমাদের দাবি, এই এলাকায় শীঘ্রই কাঁটাতারের ব্যবস্থা করো হোক ৷"
সম্প্রতি, বিএসএফ-এর তরফে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে ৷ সেখানে বলা হয়েছে, দু’দেশের কৃষকদের মধ্যে কিছু সমস্যার জেরে সীমান্তে খানিকটা উত্তেজনা ছড়িয়েছিল ৷ বিএসএফ ও বিজিবির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয় ৷ দু’দেশের মানুষকেই সীমান্ত থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ মালদার জেলাশাসক নিতীন সিংহানিয়া বলেন, "সুকদেবপুরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ৷ বিএসএফ ও পুলিশ সতর্ক রয়েছে ৷"