ETV Bharat / bharat

AD Controversy : বিজ্ঞাপনী সৃজনশীলতা কি ধর্মের লক্ষ্মণরেখায় আটকে যাচ্ছে ? - তানিস্ক বিজ্ঞাপন বিতর্ক

উৎসবের আবহে দেশে একাধিক নামজাদা সংস্থার সৃজনশীল বিজ্ঞাপনকে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির কোপের মুখে পড়তে হয়েছে ৷ চাপের মুখে তাঁদের বিজ্ঞাপন সম্প্রচার বন্ধ করতেও হয়েছে ৷ তানিস্ক, ফ্যাব ইন্ডিয়া এবং ডাবরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনেছে এই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি ৷ স্বাভাবিকভাবেই তার সমালোচনাও হয়েছে ৷ বিশিষ্টদের মতে, ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে এমন ঘটনা সংবিধানবিরোধী ৷

AD Controversy
AD ControversyAD Controversy
author img

By

Published : Oct 27, 2021, 10:18 PM IST

Updated : Oct 28, 2021, 9:48 AM IST

কলকাতা, 27 অক্টোবর : প্রথমে তানিস্ক, তারপর ফ্যাব ইন্ডিয়া এবং সবশেষে ডাবর । বিজ্ঞাপনী সৃজনশীলতা কোথায় যেন আটকে যাচ্ছে ধর্মের লক্ষ্মণরেখায় । পরিস্থিতি এমন তৈরি করা হচ্ছে, চাপের মুখে বারবার বিজ্ঞাপন বদলাতে হচ্ছে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে ।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রখ্যাত গয়না বিপণন সংস্থা তানিস্ক-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তারা নাকি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে 'লাভ জিহাদ'-এর প্রচার চালাচ্ছে । উক্ত বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে বিরোধিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, প্রবল চাপের মুখে পড়ে সংস্থা ওই বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় । টুইটারে হ্যাশট্যাগ দিয়ে শুরু হয়েছিল #বয়কটতানিস্ক-এর ডাক । তার জেরেই বিজ্ঞাপন সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সংস্থার তরফে ।

শুধু গয়না প্রস্তুতকারী সংস্থা তানিস্কই নয়, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির তোপের মুখে ‘জশন-ই-রিওয়াজ’ কালেকশনের বিজ্ঞাপন তুলে দিতে বাধ্য হল ফ্যাব ইন্ডিয়াও । বস্ত্র বিপনী এই সংস্থার তরফে দীপাবলির আগে ‘জশন-ই-রিওয়াজ’ কালেকশন চালু করা হয়েছিল । তা নিয়ে বিজেপি নেতা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার একাংশ ক্ষোভ উগড়ে দেয় । তারপর সেই বিজ্ঞাপন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি অংশ রীতিমতো বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে । ঊর্দু শব্দ ‘জশন-ই-রিওয়াজ’ নিয়ে আপত্তি তোলা হয় । সেই ঊর্দু শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে দীপাবলিকে অপমান করা হয়েছে বলে দাবি তোলেন একাংশ । বাধ্য হয়ে পিছু হটে এই বস্ত্র বিপণন সংস্থা ।

এরপর করবা চৌথ উৎসব আবহে ডাবরের একটি বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের সূত্রপাত হয় । এই বিজ্ঞাপন হিন্দু রীতিনীতির বিরোধী বলে অভিযোগ ওঠে ৷ সরগরম হয় নেটদুনিয়া । মূলত সমকামিতার প্রশ্ন উস্কে দেওয়ার অভিযোগে বিদ্ধ হয় ডাবরের এই বিজ্ঞাপন । বিজ্ঞাপনটি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় । ভাইরাল হতেই নানা তির্যক মন্তব্যের সম্মুখীন হতে হয় সংস্থাকে । এরপরই দ্রুত ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে হয় তাদের ৷

এর মধ্যে কোনও ঘটনাই সমর্থনযোগ্য নয়, নির্দ্বিধায় সে কথা বলছেন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞরা । তাঁরা মনে করছেন, ভারতবর্ষের একটা বহুমুখী সংস্কৃতি রয়েছে । বিভেদের মধ্যে ঐক্য আমাদের বাকিদের থেকে আলাদা করে । এরকম একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশে যখন সৃজনশীলতাকে ধর্মীয় লক্ষণ রেখার মধ্যে আটকে দেওয়া হয় তা অবশ্যই সমালোচনার যোগ্য ।

সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত মনে করেন, বাংলাদেশের ঘটনা ঠিক যেভাবে সমর্থনযোগ্য নয়, একইভাবে সমর্থনযোগ্য নয় এই ধরনের ঘটনাগুলিও । বলেন, "তবে অন্যান্য হিন্দুত্ববাদীদের ঘটনার সঙ্গে এই ঘটনাগুলির একটা মৌলিক ফারাক রয়েছে । ভুলে গেলে চলবে না, এরা কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বা সমকামিতা এগুলিকে প্রমোট করছে না । এগুলিকে তারা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করছে । সে ক্ষেত্রে এই যে ঘটনাগুলো ঘটছে তার বিরুদ্ধে অন্যায় বুঝতে পেরেও এরা কিন্তু আদালতে যাচ্ছে না । দু'টি ঘটনাই সমালোচনার যোগ্য । মনে রাখতে হবে, শুধু সমালোচনা করলেই হবে না । এই ধরনের ঘটনাগুলিকে আদালতের নজরে আনতে হবে । তবেই তার সঠিক মূল্যায়ন হবে ৷"

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলছেন, "ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে এমন ঘটনা অন্যায় । সকলের এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত । শিল্পীর স্বাধীনতা ধর্মীয় গণ্ডিতে বাধা থাকা উচিত নয় । সমকামিতা এই মুহূর্তে আমাদের রাষ্ট্রে আইনসিদ্ধ, তা প্রচারে কেন কাউকে হিন্দুত্ববাদীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হবে । আমি মনে করি এই ঘটনার সংবিধানবিরোধী ৷"

প্রাক্তন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী জানান, বর্তমান সমাজে অসহিষ্ণুতা ঘটনা বাড়ছে । "জানি প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন হওয়া উচিত । আমি কোনও আলাদা ঘটনার কথা বলতে চাই না । ধর্মনিরপেক্ষতার পথকে রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য," তিনি বলেন ।

একইভাবে তৃণমূল মুখপাত্র তথা বিধায়ক তাপস রায় বলেন, "বর্তমানে সর্বত্রই হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীরা আমাদের কী খাব, কীভাবে চলব, কী পড়ব- সব ঠিক করে দিতে চাইছে । এটা প্রকৃত হিন্দুত্ব নয় । প্রকৃত হিন্দুত্ব সহিষ্ণুতার কথা বলে । স্বামী বিবেকানন্দের হিন্দুত্ব প্রকৃত মানবসেবার কথা বলেন । সেখানে অসহিষ্ণুতার কোনও জায়গা নেই । এই ধরনের বয়কট, সমর্থন করে না সেই হিন্দু ধর্ম ।"

আরও পড়ুন : Sameer Wankhede : জন্মসূত্রে হিন্দু সমীর কোনও দিনই ধর্ম পরিবর্তন করেননি, দাবি স্ত্রী ক্রান্তির

কলকাতা, 27 অক্টোবর : প্রথমে তানিস্ক, তারপর ফ্যাব ইন্ডিয়া এবং সবশেষে ডাবর । বিজ্ঞাপনী সৃজনশীলতা কোথায় যেন আটকে যাচ্ছে ধর্মের লক্ষ্মণরেখায় । পরিস্থিতি এমন তৈরি করা হচ্ছে, চাপের মুখে বারবার বিজ্ঞাপন বদলাতে হচ্ছে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে ।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রখ্যাত গয়না বিপণন সংস্থা তানিস্ক-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তারা নাকি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে 'লাভ জিহাদ'-এর প্রচার চালাচ্ছে । উক্ত বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে বিরোধিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, প্রবল চাপের মুখে পড়ে সংস্থা ওই বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় । টুইটারে হ্যাশট্যাগ দিয়ে শুরু হয়েছিল #বয়কটতানিস্ক-এর ডাক । তার জেরেই বিজ্ঞাপন সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সংস্থার তরফে ।

শুধু গয়না প্রস্তুতকারী সংস্থা তানিস্কই নয়, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির তোপের মুখে ‘জশন-ই-রিওয়াজ’ কালেকশনের বিজ্ঞাপন তুলে দিতে বাধ্য হল ফ্যাব ইন্ডিয়াও । বস্ত্র বিপনী এই সংস্থার তরফে দীপাবলির আগে ‘জশন-ই-রিওয়াজ’ কালেকশন চালু করা হয়েছিল । তা নিয়ে বিজেপি নেতা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার একাংশ ক্ষোভ উগড়ে দেয় । তারপর সেই বিজ্ঞাপন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি অংশ রীতিমতো বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে । ঊর্দু শব্দ ‘জশন-ই-রিওয়াজ’ নিয়ে আপত্তি তোলা হয় । সেই ঊর্দু শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে দীপাবলিকে অপমান করা হয়েছে বলে দাবি তোলেন একাংশ । বাধ্য হয়ে পিছু হটে এই বস্ত্র বিপণন সংস্থা ।

এরপর করবা চৌথ উৎসব আবহে ডাবরের একটি বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের সূত্রপাত হয় । এই বিজ্ঞাপন হিন্দু রীতিনীতির বিরোধী বলে অভিযোগ ওঠে ৷ সরগরম হয় নেটদুনিয়া । মূলত সমকামিতার প্রশ্ন উস্কে দেওয়ার অভিযোগে বিদ্ধ হয় ডাবরের এই বিজ্ঞাপন । বিজ্ঞাপনটি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় । ভাইরাল হতেই নানা তির্যক মন্তব্যের সম্মুখীন হতে হয় সংস্থাকে । এরপরই দ্রুত ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে হয় তাদের ৷

এর মধ্যে কোনও ঘটনাই সমর্থনযোগ্য নয়, নির্দ্বিধায় সে কথা বলছেন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞরা । তাঁরা মনে করছেন, ভারতবর্ষের একটা বহুমুখী সংস্কৃতি রয়েছে । বিভেদের মধ্যে ঐক্য আমাদের বাকিদের থেকে আলাদা করে । এরকম একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশে যখন সৃজনশীলতাকে ধর্মীয় লক্ষণ রেখার মধ্যে আটকে দেওয়া হয় তা অবশ্যই সমালোচনার যোগ্য ।

সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত মনে করেন, বাংলাদেশের ঘটনা ঠিক যেভাবে সমর্থনযোগ্য নয়, একইভাবে সমর্থনযোগ্য নয় এই ধরনের ঘটনাগুলিও । বলেন, "তবে অন্যান্য হিন্দুত্ববাদীদের ঘটনার সঙ্গে এই ঘটনাগুলির একটা মৌলিক ফারাক রয়েছে । ভুলে গেলে চলবে না, এরা কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বা সমকামিতা এগুলিকে প্রমোট করছে না । এগুলিকে তারা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করছে । সে ক্ষেত্রে এই যে ঘটনাগুলো ঘটছে তার বিরুদ্ধে অন্যায় বুঝতে পেরেও এরা কিন্তু আদালতে যাচ্ছে না । দু'টি ঘটনাই সমালোচনার যোগ্য । মনে রাখতে হবে, শুধু সমালোচনা করলেই হবে না । এই ধরনের ঘটনাগুলিকে আদালতের নজরে আনতে হবে । তবেই তার সঠিক মূল্যায়ন হবে ৷"

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলছেন, "ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে এমন ঘটনা অন্যায় । সকলের এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত । শিল্পীর স্বাধীনতা ধর্মীয় গণ্ডিতে বাধা থাকা উচিত নয় । সমকামিতা এই মুহূর্তে আমাদের রাষ্ট্রে আইনসিদ্ধ, তা প্রচারে কেন কাউকে হিন্দুত্ববাদীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হবে । আমি মনে করি এই ঘটনার সংবিধানবিরোধী ৷"

প্রাক্তন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী জানান, বর্তমান সমাজে অসহিষ্ণুতা ঘটনা বাড়ছে । "জানি প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন হওয়া উচিত । আমি কোনও আলাদা ঘটনার কথা বলতে চাই না । ধর্মনিরপেক্ষতার পথকে রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য," তিনি বলেন ।

একইভাবে তৃণমূল মুখপাত্র তথা বিধায়ক তাপস রায় বলেন, "বর্তমানে সর্বত্রই হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীরা আমাদের কী খাব, কীভাবে চলব, কী পড়ব- সব ঠিক করে দিতে চাইছে । এটা প্রকৃত হিন্দুত্ব নয় । প্রকৃত হিন্দুত্ব সহিষ্ণুতার কথা বলে । স্বামী বিবেকানন্দের হিন্দুত্ব প্রকৃত মানবসেবার কথা বলেন । সেখানে অসহিষ্ণুতার কোনও জায়গা নেই । এই ধরনের বয়কট, সমর্থন করে না সেই হিন্দু ধর্ম ।"

আরও পড়ুন : Sameer Wankhede : জন্মসূত্রে হিন্দু সমীর কোনও দিনই ধর্ম পরিবর্তন করেননি, দাবি স্ত্রী ক্রান্তির

Last Updated : Oct 28, 2021, 9:48 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.