হায়দরাবাদ:প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মাথাচারা দিয়ে উঠেছে সাইবার জালিয়াতরা ৷ চলতি বছরে ব্যপকভাবে বৃ্দ্ধি পেয়ছে সাইবার স্ক্যামের হার ৷ ক্রিকেটরদের ডিপফেক থেকে ডিজিটাল গ্রেফতারির ঘটনাও নেহাত কম নয় ৷ চলতি বছরের 1 জানুয়ারি থেকে 11 নভেম্বর পর্যন্ত ভারতে 14 লাখের বেশি সাইবার ক্রাইম মামলা নথিভুক্ত হয়েছে । 2024 সালে ভারতে প্রকাশিত সবচেয়ে শিরোনাম দখলকারী প্রযুক্তি স্ক্যামগুলির একটি বিশদ বিবরণ রয়েছে ৷
শচীন তেন্ডুলকারে ডিপ ফেক: 2024 এর 15 জানুয়ারি সাইবার জালিয়াতদের কবলে পড়ে ছিলেন ক্রিকেটর শচীন তেল্ডুলকর ৷ ভারতীয় দলের এই ক্রিকেটরের ডিপ-ফেক ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছিল সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে ৷ দেখা গিয়েছিল, স্কাইওয়ার্ড অ্যাভিয়েটর কোয়েস্ট নামে একটি সংস্থার প্রমোশনেপ ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র ৷ পড়ে তিনি সোশাল মিডিয়া সাইটে পোস্ট করেন ভিডিয়োটি তাঁর নয় ৷ তিনি এই নামে কোনও সংস্থার প্রমোশন করছেন না ৷ এটি ডিপ ফেক করা ৷ জালিয়াতদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেন ৷
ক্যুরিয়ার সংস্থার স্ক্যাম: চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি সাইবার জালিয়াতদের পাতা ফাঁদে পা-দিয়ে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর একটি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার সিইও ৷ মুম্বই থেকে একটি ফোন করে প্রতারকরা ৷ নিজেকে ক্যুরিয়র সংস্থা ফেডেক্সের কর্মীর পরিচয় দেয় ৷ এরপর পুলিশ পরিচয়ে তাঁর কাছে একটি ফোন আছে ৷ আটক হওয়া সামগ্রী উদ্ধার করতে বিপুল পরিমাণ টাকা চাওয়া হয় ৷ 8 দফায় ওই ব্যক্তি প্রতারকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ব্যপক টাকা দেন ৷ পরে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার ৷ এরপর পুলিশের দ্বারস্থ হন ৷
ভুয়ো বিনিয়োগ প্রকল্প:চলতি বছরেরজুলাই মাসে তেলেঙ্গানার বাসিন্দা 75 বছর বয়সী এক ব্যক্তি প্রতারণার শিকার হন ৷ বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত ম্যানেজার ৷ হোয়াটসঅ্যাপে একটি বিনিয়োগ সম্পর্কিত মেসেজ পাঠিয়েছিলেন প্রতারকরা ৷ তাঁকে অল্প সময়ে আকর্ষনীয় রিটার্নের প্রতিশ্রুতি দেন ৷ দশ দিনের প্রতারকদের অ্যাকাউন্টে ৪ কোটি টাকা পাঠিয়েছিলেন ৷ এরপর তাঁর বিশ্বাস অর্জন করতে প্রতারকরা ওই ব্যক্তির অ্যাকাউন্ডে 10 কোটি টাকা পাঠান কয়েক দিনের মধ্যে ৷ এখানেই শেষ নয়, আরও লাভের আশায় দফায় দফায় আরও 9 কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন ওই ব্যক্তি ৷ প্রায় 13 কোটি টাকা জালিয়াতদের অ্যাকাউন্টে পাঠান ৷ তারপর থেকে রিটার্ন না মেলায় প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে পুলিশের দ্বারস্থ হন ওই ব্যক্তি ৷ তদন্তে নেমে পুলিশ 20 লক্ষ টাকা উদ্ধার করে ৷
সাইবার ব্ল্যাকমেইল:2024 সালের অগস্টে, পুনের ঘটনা ৷ 74 বছর বয়সী ব্যক্তি সাইবার ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়েছিলেন । সাইবার জালিয়াতরা পুলিশ অফিসার সেজে শিকারকে ফাঁদে ফেলেছিল ৷ প্রতারকরা তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি লেনদেন, আশালীন মেসেজ পাঠানো ও জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘন সংক্রান্ত বার্তা পাঠানোর অভিযোগ এনেছিল ৷ এরপরই ওই ব্যক্তি অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে দফায় দফায় 97 লক্ষ টাকা পাঠান অপরাধীদের ব্যংক অ্যাকাউন্টে ৷
ভুয়ো ট্রেডিং অ্যাপ:এই বছরের অগস্টে, মুম্বইয়ের আরও প্রবীণ নাগরিক প্রতারণার শিকার হন ৷ 75 বছর বয়সী ওই ব্যক্তি জাহাজের অবসর প্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ৷ এটি এই বছরের দ্বিতীয় বৃহত্তম সাইবার জালিয়াতি ৷ 11.16 কোটি টাকা প্রতারণা শিকার হয়েছিলেন তিনি ৷ প্রতারকরা প্রথমে তাঁকে একটি হোয়াটসঅ্যাপে অ্যাড করেছিলেন ৷ সেখানে তাঁকে বিনিয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল ৷ একটি জাল ট্রেডিং অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল ৷ স্ক্যামারদের নির্দেশে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে 22বার লেনদেন করেছে । টাকা তুলতে গিয়ে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার ৷ তিনি ঘটনাটি সাইবার পুলিশকে জানান, তদন্ত শুরু হয় ।
ভুয়া সুপ্রিম কোর্টের শুনানি:চলতি বছরের অগস্টে, টেক্সট টাইল কোম্পানি বর্ধমান গ্রুপের চেয়ারপার্সন এবং পদ্মভূষণ পুরস্কারপ্রাপ্ত এসপি ওসওয়াল সাইবার জালিয়াতের কবলে পড়েন ৷ 7 কোটি টাকার খুইয়ে ছিলেন তিনি ৷ ফেডারেল তদন্তকারী পরিচয়ে প্রতারকরা ওসওয়ালের বিরুদ্ধে বেআইনি লেনদেনের অভিযোগ আনেন ৷ অনলাইনে আদালতে শুনানি (ভুয়ো) একটি কপি পাঠান ৷ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নাম করে প্রতারকরা তাঁর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন ৷ আইনি প্রতিক্রিয়া রেহাই পেতে ওই ব্যক্তি বিপুল পরিমাণ টাকা পাঠান ৷ পরে বুঝতে পেরে পুলিশে জানালে তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ ৷ সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে ৷ 5.2 কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়।
ডিজিটাল গেফতার:এই বছর সাইবার অপরাধগুলির মধ্য়ে সব থেকে বেশি সারা ফেলেছে এটি ৷ 39 বছর বয়সি বেঙ্গালুরুর এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এই সাইবার অপরাধের শিকার ৷ ডিজিটাল গ্রেফতারির নাম করে 18 দিনের মধ্যে প্রতারকরা 11.8 কোটি টাকা হাতিয়েছেন ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ৷ পুলিশের মতে, 11 নভেম্বর টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ট্রাই) এর পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি ভিডিয়ো কল করেন ৷ প্রতারকরা ম মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসায় ৷ শিকারের আধার কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক থাকা একটি সিম কার্ড অবৈধ ভাবে ব্যবহার করার অভিযোগ তোলেন ৷ মুম্বইয়ের কোলাবা সাইবার থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানায় প্রতারকরা ৷
এর কিছুক্ষণ পরে, আরও এক ব্যক্তি পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে শিকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ৷ দাবি করেন, তাঁর আধার কার্ডের সঙ্গে যুক্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বেআইনি লেনদেন হয়েছে ৷ তাঁকে জানানো হয় "ভার্চুয়াল তদন্তের" কথা ৷ তাকে শারীরিক গ্রেফতারের হুমকিও দেওয়া হয়।
25 নভেম্বর, একজন স্ক্যামার একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার পরিচয়ে স্কাইপের মাধ্যমে শিকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৷ জানায়, মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলছে। গ্রেফতার এড়াতে ওই ব্যক্তি একটি অ্যাকাউন্টে 75 লাখ টাকা স্থানান্তর করেন ৷ অন্য একটি অ্যাকাউন্টে 3.41 কোটি টাকা স্থানান্তর করেন । 12 ডিসেম্বরের মধ্যে, তিনি প্রতারকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে মোট 11.8 কোটি টাকা পাঠান দফায় দফায় ।