নয়াদিল্লি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ এআই প্রযুক্তিকে বিশ্বের ভবিষ্যৎ মনে করেছেন AI বিশেষজ্ঞরা । উন্নতশীল দেশগুলির মধ্যে ভারত ক্রমশ এগিয়ে চলেছে ৷ বিদেশী প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা কমাতে চলেছে । তাই ভারত নিজস্ব এআই চিপ এবং লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) তৈরি করেছে । এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল বিশ্বব্যাপী AI-এর দৌড়ে ভারতের অবস্থানকে শক্তিশালী করা। পাশাপাশি, ভারত NVIDIA-এর মতো কোম্পানিগুলির কাছ থেকে উন্নত AI হার্ডওয়্যার কেনার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে ।
ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক (MeitY) সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অফ অ্যাডভান্সড কম্পিউটিং (C-DAC) এর সহযোগিতায় ভারতের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা AI চিপ তৈরির একটি প্রকল্প চালু করেছে। আশা করা হচ্ছে, যে এই সমস্ত চিপগুলি জেনারেটিভ AI মডেলগুলিকে সাপোর্ট করতে পারে ৷
এটি ভারতের AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে ৷ AI প্রযুক্তির উপর স্বাধীনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে ভারত । AI চিপ তৈরি সংক্রান্ত প্রকল্পটি চালু করা ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে ৷ এআই প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করতে প্রয়োজনীয় বিদেশী চিপসেট সরবরাহের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে ৷
চ্যাট জিপিটি, জেমিনি নয় বিশ্ব কাঁপাচ্ছে চাইনিজ AI মডেল ডিপসিক !
এআই ব্যবহারে সাইবার অপরাধ বাড়বে: বিশেষজ্ঞ
দেশীয় এআই চিপ এবং লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল তৈরি হলে ভারত বেশ কিছু নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে । এই প্রসঙ্গেই সাইবার বিশেষজ্ঞ AI এবং ডেটা প্রাইভেসি বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অনুজ আগরওয়াল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, "যে এআই প্রযুক্তির উন্নয়নের পাশিপাশি সাইবার অপরাধও বাড়তে পারে ।"
তিনি ইটিভি ভারতকে বলেন যে, "এআই প্রযুক্তির ব্যাবহার বৃদ্ধিপর পাশাপাশি কাজের গতিও কৃত্রিম বুদ্ধি মত্তার মতো হবে ৷ ফলে কাজের পরিমাণ 100 গুণ বেড়ে যেতে পারে। কাজও হবে নির্ভুল ৷ যাঁরা প্রযুক্তি ব্যবহারে খুব বেশি দক্ষ নন এবং সাইবার অপরাধ করার কিভাবে করতে হয় সেই সম্পের্কে সম্যক ধারণা নেই, তাঁরাও এআই-এর সাহায্যে সাইবার অপরাধ করতে পারেন । এর জন্য, এআই-কে জানাতে হবে সেই ব্যক্তি কি চান । সামগ্রিকভাবে AI এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি সাইবার অপরাধ বাড়িয়ে তুলতে পারে । ডেটা গোপনীয়তা বজায় রাখতে বেশ কয়েকটি দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে AI ।"
তিনি আরও বলেন, "সারা দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে AI। 100 কোটি মানুষের মধ্যে কিছু সংখ্যক মানুষ এটি ব্যবহার না করলেও এটি খুব বেশি পার্থক্য করবে না। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিষয় হল AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিনামূল্যে পাওয়া যায় ৷ যে কেউ এটি ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে, এটি কীভাবে বন্ধ করা অসম্ভব।"
এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে, সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ এবং অ্যাডভোকেট কর্ণিকা এ শেঠ দেশীয় AI মডেল ব্যবহারে ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, "এই ক্ষেত্রে প্রধান উদ্বেগের বিষয় হল ডেটা গোপনীয়তার লঙ্ঘন ৷ ফলে নাগরিকদের সংবেদনশীল তথ্য চুরি হতে পারে ।" এটি রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংও আরেকটি হুমকি, যার মাধ্যমে AI-এর কাঠামো এবং পরামিতি চুরি করা যে বলতে পারে।" দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে বিদেশী প্রসেসরের উপর নির্ভরতা কমানো এবং শক্তিশালী পরিকাঠামো নিরাপদ এআই প্রযুক্তি এবং সিস্টেম বিকাশে সহায়তা করবে।
ভারতে ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ
এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারতে সাইবার অপরাধের প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ সেইসঙ্গে বং জালিয়াতির ঘটনাও বেড়েছে । সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে 33,165 কোটি টাকা প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। শুধুমাত্র 2024 সালেই 22,812 কোটি টাকার জালিয়াতি ঘটেছে । 2021 সালে এই সংখ্যা ছিল 1.37 লক্ষ ৷ 2024 সালে 17 লক্ষেরও বেশি হয়েছে অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে । 2021 সালে 551 কোটি টাকা জালিয়াতি হয়েছিল, যেখানে 2023 সালে 7,496 কোটি টাকার জালিয়াতি করা হয়েছিল।
সাইবার অপরাধ বাড়তে থাকায়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে NCRP (ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল) এর মাধ্যমে একটি ই-এফআইআর সিস্টেম তৈরি কথা উল্লেখ করেছেন ৷ নাগরিকরা যাতে সাইবার অপরাধ বা জালিয়াতির চেষ্টা বিরুদ্ধে অনলাইনে অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারে সেই প্রক্রিয়া চালু হয়েছে । সেইসঙ্গে ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (I4C) দেশে সাইবার অপরাধের অভিযোগ সমাধানে রাজ্য পুলিশ বাহিনী সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে।