বহরমপুর, 24 অগস্ট: মধ্যযুগীয় বর্বরতার সাক্ষী থাকল বহরমপুর ৷ কুসংস্কারের শিকার এক পরিবারের খেসারত দিতে হল মহিলাকে ৷ অভিযোগ ভূত ছাড়ানোর নামে মুখে জুতো দিয়ে এলাকায় ঘোরানো হল তাঁকে ৷ ওঝার নিদানে বহরমপুর শহরের রাস্তায় ওই মহিলার মুখে জুতো দিয়ে ঘোরানো হয় ৷ শুক্রবার বিকেলের ঘটনায় পুলিশ আক্রান্ত মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে ৷
সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের চুঁয়াপুর সুকান্তপল্লির বাসিন্দা এক মহিলাকে ভূতে ধরেছে বলে দাবি করে তাঁর পরিবার ৷ নিয়ে যাওয়া হয় ওঝার কাছে ৷ অভিযোগ, সেখানে দীর্ঘক্ষণ মহিলার ঝাড়ফুঁকের নামে চলে অমানসিক অত্যাচার ৷ এরপর ওঝার নিদানে তাঁর মুখে চামড়ার জুতো দিয়ে প্রায় 4 কিলোমিটার রাস্তা ঘুরিয়ে বহরমপুর গোরাবাজার কলেজ ঘাটে নিয়ে আসা হয় ৷ এই পুরো ঘটনার ছবি তুললে গেলে সংবাদ মাধ্যমের উপরেও আক্রমণ করতে আসে বাড়ির লোকজন ৷
ঘটনার খবর পেয়ে বহরমপুর কলেজ ঘাটে পৌঁছায় পুলিশ ৷ এরপর আক্রান্ত মহিলাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ স্থানীয় সূত্রে খবর, মহিলার দুই সন্তান রয়েছে ৷ দীর্ঘদিন ধরে তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন ৷ প্রতিবেশীদের দাবি, তাঁকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বাড়ির লোকজন মারধরও করেন ৷
কিন্তু, কেন ? পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, মহিলা যে ঘরে থাকেন, সেখানে পরিবারের এক সদস্য গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন ৷ আর সেই মৃত সদস্যের আত্মা না কি মহিলার উপর ভর করেছে ৷ তাই তিনি পাগলের মতো আচরণ করছেন ৷ পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, তাঁরা আগে বহু জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছেন ৷ কিন্তু, অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি ৷ এরপরেই তাঁদের বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয়, মহিলাকে ভূতে ধরেছে ৷
এরপরেই শুক্রবার বিকেলে মহিলাকে বহরমপুর থানার হাতাকলোনি এলাকায় এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, ওঝা নিমের ডাল দিয়ে মহিলাকে মারধর করেন ৷ এমনকি তাঁর চোখে লঙ্কা পুড়িয়ে ধোঁয়া দেওয়া হয় ৷ দীর্ঘক্ষণ ঝাড়ফুঁকের নামে তাঁর উপর অত্যাচার চলে ৷ অভিযোগ, তারপরেই আসে ওঝার নিদান ৷ ওঝা নিদান দেন, "চামড়ার জুতো মুখে করে নিয়ে গিয়ে গঙ্গার ধারে ফেলে আসতে হবে ৷ তাহলেই ভূত পালাবে ৷" পরিবারের লোক তাই করেন ৷ মহিলাকে প্রায় 4-5 কিলোমিটার পথ জুতো মুখে করে ঘোরানো হয় ৷
এই দৃশ্য দেখে একাধিক লোকজন প্রতিবাদ করেন ৷ অভিযোগ তাঁদের সঙ্গে বচসায় জড়ায় মহিলার পরিবারের সদস্যরা ৷ পুলিশ এই ঘটনায় অভিযুক্ত ওঝার খোঁজ চালাচ্ছে ৷ পাশাপাশি, নির্যাতিতা মহিলার পরিবারের সদস্যদের বোঝানো হয়েছে পুলিশের তরফে ৷ মহিলা বর্তমানে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৷