কলকাতা, 28 জুলাই: ফরাক্কা জল বন্টন চুক্তির নবীকরণ এবং তিস্তা জলবন্টন এই নিয়ে বাংলাকে এড়িয়ে কেন্দ্রের 'একতরফা' পদক্ষেপে রাজ্য যে খুশি নয়, তা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বারবারই তিনি বলেছেন, এই বিষয়টির মধ্যে তিন পক্ষ রয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার যেমন আছে একইভাবে আছে বাংলাদেশ সরকার। তাৎপর্যপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরও। কিন্তু রাজ্যের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গকে উপেক্ষা করেই ফরাক্কা জল চুক্তির নবীকরণ এবং তিস্তা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে ।
এবার কেন্দ্রীয় সরকারের এই ভূমিকার বিরোধিতা করতে রাজ্য বিধানসভায় প্রস্তাব আনা হতে পারে । গত শুক্রবার এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এখনও পর্যন্ত রাজ্য বিধানসভায় যে বিশেষ অধিবেশন চলছে তার যে সূচি পাওয়া গিয়েছে, তাতে 5 তারিখ পর্যন্ত বিধানসভা চলতে পারে বলে জানা যাচ্ছে । এই অবস্থায় নদীগুলিতে জল বন্টন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এই প্রস্তাব এই অধিবেশনেই আসে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন!
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই জল বন্টন নিয়ে আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে একটি কমিটি গঠন হয়েছে। সেই কমিটি খুব শীঘ্রই বাংলাদেশে যেতে পারে বলে কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে খবর । যদিও এই মুহূর্তে বাংলাদেশে অশান্তির কারণে কেন্দ্রীয় সরকার ঢাকার সবুজ সংকেতের জন্য অপেক্ষা করছে । এই অবস্থায় রাজ্য চাইছে, গঙ্গা ও তিস্তার জল বন্টন নিয়ে প্রস্তাব এনে তাদের বক্তব্য স্পষ্ট ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তুলে ধরতে, যাতে কোনও ভাবেই কেন্দ্র রাজ্যকে উপেক্ষা করে কোনও পদক্ষেপ না নিতে পারে ।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই ভুটান পাহাড়ের থেকে নামা নদী গুলির পর্যবেক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একটি প্রস্তাব রাজ্য বিধানসভায় এসেছে । গত শুক্রবার এই প্রস্তাবের উপর আলোচনা হয়েছে এক ঘন্টা আগামী সোমবারও তা নিয়ে আলোচনা রয়েছে । এখন দেখার সেই আলোচনার মধ্যেই জল বন্টন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ ইস্যু নিয়ে সামগ্রিক আলোচনা হয়, নাকি আলাদা করে প্রস্তাব আনা হয় ।
ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপি দাবি করেছে, এমন নদী যেগুলি একাধিক রাজ্যের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে এবং যা আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করেছে, তা নিয়ে রাজ্য বিধানসভায় আলোচনা সংবিধান বিরোধী । কোনও ভাবেই এই বিষয় নিয়ে আলোচনার অধিকার রাজ্য বিধানসভার নেই । গত শনিবারই এই বিষয় নিয়ে সরব হয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তথা বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ী । তিনি রাজ্যের এই উদ্যোগকে অনধিকার চর্চা বলছেন । এক্ষেত্রে তার বক্তব্য, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে চাইলে মুখ্যমন্ত্রী বা কোনও আমলা এই বিষয় নিয়ে চিঠি লিখতে পারে ৷ কিন্তু কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রস্তাব এনে রাজ্য বিধানসভায় আলোচনা করা যায় না ।
সেই জায়গা থেকেই যদি আগামী দিনে জল বন্টন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আসে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি জেতার সর্বাত্মক বিরোধিতা করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । এই অবস্থায় গঙ্গা ও তিস্তার জল বন্টন নিয়ে রাজ্য বিধানসভায় যদি প্রস্তাব আসে তা অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ হবে । বিশেষ করে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, যেখানে রাজ্য সরকার অভিযোগ করছে, এক্ষেত্রে তাদের উপেক্ষা করা হচ্ছে সেখানে এই ধরনের প্রস্তাব এনে কেন্দ্রের উপর চাপ তৈরি করার একটা কৌশল নিতে পারে রাজ্য সরকার । এবার বাস্তবে তা হয় কিনা, সেটাই এখন দেখার।
রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, এই বিষয়টা আরো গুরুত্বপূর্ণ এ কারণেই আগামী দিনে যদি তিস্তা জল বন্টনের বিষয়টি বাস্তবিক রূপ পায় সে ক্ষেত্রে বাংলার সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ক্ষোভ তৈরি হতে পারে । এক্ষেত্রে প্রশাসনিক বিরোধিতার পাশাপাশি পরিষদীয় স্তরে প্রস্তাব এনে কেন্দ্রের এই সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই নিজেদের বক্তব্য বিধানসভার পরিসরে নথিভূক্ত করতে চাইছে রাজ্যের শাসক দল ।