জলপাইগুড়ি, 26 জুন: বাংলাদেশে তিস্তার রিভার ব্যাঙ্ক প্রোটেকশন বাঁধের ফলে বিপাকে ভারত ৷ ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে তিস্তা নদীর উপর অবৈজ্ঞানিকভাবে বাঁধ তৈরি করার অভিযোগ উঠল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৷ তার জেরে এপার বাংলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ৷
ওই বাঁধের ফলে তিস্তার জলে তলিয়ে যেতে পারে সীমান্তবর্তী ভূখণ্ডের একাংশ ৷ ডুবে যেতে পারে বিএসএফের একটি চৌকিও ৷ সবদিক খতিয়ে দেখে তিস্তার উপর বাংলাদেশ সরকার যে বাঁধ তৈরি করছে, তা নিয়ে আপত্তি তুলেছে রাজ্যের সেচ দফতর ৷ সেখানে পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্টও পাঠানো হয়েছে ৷ বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে সমস্যা সমাধানের আর্জি জানিয়েছে সেচ দফতর ৷
বিএসএফ-এর জলপাইগুড়ি সেক্টরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের দিকে তিস্তা নদী ব্যাঙ্ক প্রোটেকশন তৈরির কাজ হচ্ছিল ৷ 2022 সাল থেকে ধীরে ধীরে বাঁধটি এগিয়ে আসতে থাকে ৷ বাঁধটি সোজা না করে, বাঁকিয়ে তৈরি করছিল ৷ সীমান্ত এলাকায় আসার পরে, সেই কাজ আটকে দেওয়া হয়েছে ৷ তিস্তা নদীর জল যাতে বাংলাদেশের গ্রাম ভাসিয়ে না দেয়, সেই কারণে বাঁধটি তৈরি করা হচ্ছিল ৷ এর ফলে ভারতের দিকে ব্যাঙ্ক প্রোটেকশন বা নদী চর নষ্ট হচ্ছে ৷ সেচ দফতরের সঙ্গে যৌথ পরিদর্শনের পর জলপাইগুড়ি বিএসএফ সেক্টরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতের দিকে তিস্তার চরের নাব্যতা কমে গেলে কুচলিবাড়ি এলাকায় জল ঢুকে যাবে ৷
বাংলাদেশের দহাগ্রাম ও অঙ্গারপোতা গ্রামের পশ্চিম দিক দিয়ে তিস্তা নদী বয়ে গিয়েছে ৷ প্রতিবছর বর্ষায় তিস্তার জল এই এলাকায় ঢুকে যায় ৷ গ্রাম দু’টিকে বাঁচাতে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের তরফে ৷ কিন্তু, বাংলাদেশের তরফে ভারতের দিকে বাঁকিয়ে বাঁধ তোলার কাজ শুরু হতেই, বাধা দেয় বিএসএফ ৷ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, বাঁধ সোজাসুজি দিলে কোনও সমস্যা হত না ৷ কিন্তু, বাঁধটি বাঁকিয়ে দেওয়াতেই বিপাকে পড়তে চলেছে ভারত ৷
বাংলাদেশের এই অবৈজ্ঞানিক বাঁধ নির্মাণের ফলে তিস্তার জল ভারতীয় ভূখণ্ডের গ্রামগুলিতে ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ৷ এই বাঁধের ফলে ভারতীয় এলাকার কুচলিবাড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের 30-35 হাজার মানুষ ও বিএসএফের হেমন্ত বিপিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ৷ ইতিমধ্যে বিএসএফের পক্ষ থেকে সেচ দফতরের উত্তর-পূর্ব চিফ ইঞ্জিনিয়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে ৷ বাঁধ নির্মাণ যাতে না করা হয়, তা বাংলাদেশ প্রশাসনকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷
বিষয়টি খতিয়ে দেখে বাংলাদেশের বাঁধ নিয়েও আপত্তি তুলেছে সেচ দফতর ৷ ওই এলাকা পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্টও পাঠানো হয়েছে ৷ সীমান্তের ওপারে তৈরি হওয়া বাঁধকে প্রশস্ত করে ভারতে তিস্তার সঙ্গে সংযুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের তরফে ৷ সেই প্রস্তাব নাকচ করেছে সেচ দফতর ৷ কারণ এর ফলে সীমান্তের ওপারে বাঁধে ধাক্কা খেয়ে তিস্তার গতিপথ বাধাপ্রাপ্ত হবে ৷ ফলে বাঁধ ভেঙে বড় সমস্যা তৈরি হতে পারে ৷
সেচ দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (উত্তর-পূর্ব) কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, "সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশ প্রোটেকশন বাঁধ দিয়ে সমস্যা তৈরি করেছে ৷ বাঁধটা আগেই দেওয়া হয়েছে ৷ এই বাঁধটির ফলে বিএসএফের একটি বিওপি জলের তোড়ে ভেসে যেতে পারে ৷ শুধু তাই নয়, কুচলিবাড়ি এলাকায় তিস্তার জল ঢুকে বন্যা হতে পারে ৷ বিএসএফ আমাদের নজরে আনার পরেই আমরা পরিদর্শন করেছি জায়গাটি ৷ বিষয়টি আন্তর্জাতিক ইস্যু ৷ জটিল বিষ ৷ বিএসএফ আমাদের নজরে নিয়ে এসেছে ৷"
তিনি আরও জানান, "আমরা স্টাডি করে, আমাদের আপত্তির কথা রিপোর্টে সরকারকে লিখিতভাবে জানিয়েছি ৷ ভারত সরকারের প্রোটোকল অনুযায়ী বিদেশমন্ত্রক বিষয়টি দেখবে ৷ বিএসএফের সঙ্গে আমাদের বৈঠকের কথাও জানিয়েছি ৷ বিএসএফের সীমান্ত চৌকির নাম হেমন্ত ৷ সেটি সীমান্তের ওপারে বাঁধ তৈরির ফলে ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছে ৷"
সিকিম ও পাহাড় থেকে নেমে তিস্তা নদীতে এই সময় জলের চাপ থাকে ৷ সমতলে তিস্তা নদী ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মেখলিগঞ্জের পরে আংশিক বাধা পাচ্ছে ৷ তার ফলে স্বাভাবিকভাবে জল যেতে পারছে না ৷ সেচ দফতরের অভিযোগ, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ওপারে অবৈজ্ঞানিকভাবে বাঁধ তৈরি হওয়ায়, এই সমস্যা দেখা দিয়েছে ৷