চন্দননগর, 10 ডিসেম্বর: চন্দননগর শহরের ইতিহাসের কথা উল্লেখ করলে, আপনা থেকেই উঠে আসবে ফরাসি প্রসঙ্গ ৷ কারণ, ফরাসি উপনিবেশের হাত ধরেই এই শহরের জন্ম ৷ আর তার ইতিহাস যেখানে সংরক্ষিত রয়েছে, সেই ফরাসি মিউজিয়াম 'দ্যুপ্লেক্স প্যালেসে'র গুরুত্বপূর্ণ দু’টি ঘর প্রায় 2 সপ্তাহের বেশি সময় বন্ধ রয়েছে ৷ তৎকালীন ফরাসি উপনিবেশ চন্দনগরের গর্ভনর জোসেফ ফ্রাসোয়াঁ দ্যুপ্লেক্সের নামে এই মিউজিয়াম ৷
মিউজিয়ামের এই দু’টি ঘরে রয়েছে ফরাসি উপনিবেশে ব্যবহার হওয়া শেষ পতাকা, তৎকালীন মানচিত্র এবং চন্দননগরের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল ৷ কিন্তু, গত 26 নভেম্বর এই দু’টি ঘরের ফলস সিলিং ও দেওয়ালের একাংশ ভেঙে পড়ে ৷ জানা গিয়েছে, বিদেশি পর্যটকদের সামনেই বহু পুরনো কড়িকাঠের সিলিং ভেঙে পড়ে ৷ এর কয়েকদিন পর আরও একটি দুর্ঘটনা ঘটে ৷
সংস্কারের কাজের জন্য পর্যটনের ভরা মরশুমে বন্ধ ফরাসি মিউজিয়ামের 2টি ঘর ৷ (ইটিভি ভারত) সেই থেকে বন্ধ রয়েছে মিউজিয়ামের ঘর দু’টি ৷ পরেরদিন থেকে সংস্কারের কাজ শুরু হলেও, তা শেষ হয়নি ৷ আর এই মুহূর্তে রাজ্যে পর্যটনের ভরা মরশুম ৷ ফলে দেশ ও বিদেশের পর্যটকরা মিউজিয়ামে এলেও হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে তাঁদের ৷ কারণ, ওই দু’টি ঘরেই ছিল চন্দননগরের ফরাসি উপনিবেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং বহু দলিল সংরক্ষিত রয়েছে ৷ এমনকি দ্যুপ্লেক্স সাহেবের ব্যবহার করা চেয়ার, মূল্যবান চায়ের কাপ, চীনামাটির সামগ্রী, তৎকালীন চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার হওয়া সরঞ্জাম এবং বিজ্ঞান চর্চার সামগ্রীও সংরক্ষণ করা হয়েছিল ৷
এ নিয়ে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ফরাসি মিউজিয়ামের ডিরেক্টর বাসবী পাল ৷ তিনি অভিযোগ করেছেন, "আমরা ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগকে অনেক আগে সংরক্ষণের কথা জানিয়েছিলাম ৷ এটা একটা ঐতিহাসিক হেরিটেজ ৷ তার সংরক্ষণও হওয়া উচিত সময়ে সময়ে ৷ কিন্তু, তারা কোনও গুরুত্ব দেয়নি ৷ এখন ভেঙে পড়ার পরে সংস্কারের কাজ করছে ৷"
ফরাসি মিউজিয়ামে সংরক্ষিত উপনিবেশিক নির্দশন ৷ (নিজস্ব চিত্র) তিনি বলেন, "ভেঙে পড়া অংশগুলিকে সরানোর কাজ এখনও চলছে ৷ মূল সংস্কারের কাজ শুরু হয়নি ৷ এই মরশুমে পর্যটকদের আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ও নথি দেখাতে পারছি না ৷ সব নথি ও দলিল তুলে রাখতে হয়েছে একটা ঘরের মধ্যে ৷ আমাদের জানানোর জায়গা একটাই ৷ সেটা হল- ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ ৷ তারাই দায়িত্বে রয়েছে ৷ সিলিং ও দেওয়ালের কথা ছাড়ুন ৷ মিউজিয়ামের জানালা-দরজাগুলি বহু বছর হল রং হয় না ৷ একপোচ রং করাতে কত খরচ হয় ! রং করানো হলে বর্ষায় নষ্ট হত না জানালা-দরজাগুলি ৷"
ফরাসি নির্দশন দেখতে চন্দননগরের মিউজিয়ামে বিদেশি পর্যটক ৷ (নিজস্ব চিত্র) এই অভিযোগগুলি নিয়ে ইটিভি ভারত ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের এক আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ৷ রাজেন্দ্র যাদব নামে ওই আধিকারিক বলেন, "আমি বিষয়টা শুনেছি ৷ আমি অফিসে গিয়েই বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের পাঠাব সেখানে ৷ তাঁরা খতিয়ে দেখবে বিষয়টা ৷ আশা করছি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা যাবে ৷"
ফরাসি উপনিবেশ চন্দনগরের গর্ভনর জোসেফ ফ্রাসোয়াঁ দ্যুপ্লেক্সের আবক্ষ মূর্তি ৷ (নিজস্ব চিত্র) ফরাসি মিউজিয়াম 'দ্যুপ্লেক্স প্যালেসে'র দু’টি ঘর বন্ধ থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ট্যুরিস্ট গাইড নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, "সংস্কারটা খুবই দরকার ৷ ভবিষ্যতের কথা ভেবে বেশি করে দরকার ৷ কিন্তু, তার জন্য বর্তমানে বহু বিদেশি পর্যটক এসে ফিরে যাচ্ছেন ৷ তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ নথি ও জিনিসপত্র দেখতে পাচ্ছেন না ৷ আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি এই কাজ শেষ হবে ৷"
প্রশ্ন হচ্ছে হেরিটেজ ঐতিহ্য বজায় রেখে কত দ্রুত মিউজিয়ামের কাজ শেষ হবে ? কারণ, হেরিটেজের ক্ষতি না-করে সংস্কার করা এক-দু’দিনের বিষয় নয় ৷ তার জন্য প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া জরুরি ৷ ফলে কতদিনে আবারও ফরাসি মিউজিয়াম 'দ্যুপ্লেক্স প্যালেসে'র বন্ধ ঘর খুলবে, সেটাই এখন দেখার ৷