নয়াদিল্লি, 30 জুলাই: গরুপাচার মামলায় জামিন পেলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অনুব্রত মণ্ডল ৷ তাঁকে জামিন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ মঙ্গলবার শীর্ষ আদালত এই নির্দেশ দিয়েছে ৷ তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই যে মামলাগুলি দায়ের করেছিল, সেই মামলাগুলিতেই শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়েছেন অনুব্রত৷
মঙ্গলবার তাঁর জামিনের শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী ও এস সি শর্মার বেঞ্চে ৷ অনুব্রতকে জামিন দিতে গিয়ে আদালত জানিয়েছে যে এই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া যেহেতু অনেক সময় লাগতে পারে এবং অনুব্রত প্রায় দু’বছর জেলে রয়েছেন, তাই তাঁকে জামিন দেওয়া হচ্ছে ৷ তবে শীর্ষ আদালত বীরভূমের একসময়ে দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই নেতাকে তদন্তকারীদের সংস্থার সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছে ৷ পাশাপাশি তাঁকে পাসপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷
এ দিন বর্ষীয়ান আইনজীবী মুকুল রোহতগি অনুব্রতর হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেন ৷ তিনি এই মামলায় সিবিআইয়ের তরফে জমা দেওয়া চারটি চার্জশিট আদালতে পেশ করেন ৷ তিনি দাবি করেন, এই মামলায় অনুব্রত ছাড়া বাকি অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে গিয়েছে ৷
সিবিআইয়ের তরফে সওয়াল করেন অ্যাডিশনাল সলিসিটার জেনারেল এস ভি রাজু ৷ তিনি অনুব্রতকে জামিন দেওয়ার বিরোধিতা করেন ৷ তাঁর যুক্তি ছিল, অনুব্রত প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ৷ জামিন পেলে মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ নষ্ট করে ফেলতে পারেন অনুব্রত ৷
তিনি আরও দাবি করেন, বাংলাদেশে পাচারের জন্য নিয়ে যাওয়া গরু যাতে কোনও বাধা ছাড়াই বীরভূম অতিক্রম করে, সেটাই নিশ্চিত করার কাজ করতেন অনুব্রত মণ্ডল ৷ তবে অনুব্রতর আইনজীবী দাবি করেন যে এই নিয়ে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি ৷ সওয়াল-জবাব শেষে জামিন দেওয়া হয় অনুব্রতকে ৷
উল্লেখ্য, বেশ কয়েকবার তলব, হাজিরা, হাজিরা না দেওয়ার মতো কয়েকমাসের টানাপোড়েনের পর 2022 সালের 11 অগস্ট বীরভূমের বোলপুরের নিচুপট্টিতে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে হাজির হয় সিবিআই ৷ সেদিন তদন্তকারী আধিকারিকদের সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর শতাধিক জওয়ান ৷ সেদিনই তাঁকে গ্রেফতার করা হয় ৷ প্রথমে সিবিআই হেফাজত ও পরে জেল হেফাজতে তাঁর ঠিকানা হয় আসানসোল কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার ৷
এর পর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তাঁকে হেফাজতে নিতে চায় ৷ সেই নিয়েও দীর্ঘ টালবাহানা হয় ৷ নানা আইনি লড়াই শেষে 2023 সালের মার্চে অনুব্রতকে হেফাজতে পায় ইডি ৷ তার পর তাঁকে আসানসোল সংশোধনাগার থেকে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লিতে ৷ তার পর ইডি হেফাজতে ছিলেন তিনি ৷ সেই হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অনুব্রতর ঠিকানা হয় দিল্লির তিহাড় জেল ৷
সেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি একাধিকবার জামিনের আবেদন করেছেন ৷ তবে প্রতিবারই তা খারিজ হয়ে গিয়েছে ৷ অবশেষে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে জামিন দিল ৷ কিন্তু তিনি যেহেতু সিবিআইয়ের মামলায় জামিন পেয়েছেন, তাই এখনই জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না ৷ ইডির মামলাগুলিতে তাঁকে এখনও তিহাড়েই থাকতে হবে ৷