পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ইউপিএসসি-র আইএসএস পরীক্ষায় সারা দেশে প্রথম আসানসোলের সিঞ্চন - INDIAN STATISTICAL SERVICE EXAM

ইউপিএসসি-র ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিস (আইএসএস) পরীক্ষায় 738 পেয়ে প্রথম হয়েছেন আসানসোলের সিঞ্চনস্নিগ্ধ অধিকারী ৷ দ্বিতীয় পূর্ব বর্ধমানের বিল্টু মাজি ৷ তাঁর প্রাপ্ত নম্বর 680 ৷

Indian Statistical Service Examination
ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম আসানসোলের যুবক (নিজস্ব ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 14, 2024, 3:01 PM IST

Updated : Dec 14, 2024, 7:00 PM IST

আসানসোল ও বর্ধমান, 14 ডিসেম্বর:ইউপিএসসির আইএসএস পরীক্ষায় বাংলার জয়জয়কার ৷ তালিকার শীর্ষে বাংলার দুই কৃতী ছাত্র ৷ প্রথম হয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের সিঞ্চনস্নিগ্ধ অধিকারী ৷ তাঁর মোট প্রাপ্ত নম্বর 738 ৷ দ্বিতীয় পূর্ব বর্ধমানের বিল্টু মাজি ৷ তাঁর প্রাপ্ত নম্বর 680 ৷

বৃহস্পতিবারইউপিএসসি-র ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিস (আইএসএস) পরীক্ষার ফলপ্রকাশ হয়েছে ৷ তাতে প্রথম হয়েছেন বছর সাতাশের সিঞ্চনস্নিগ্ধ । আসানসোলের ইসমাইলের বাসিন্দা তিনি । আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের কৃতী ছাত্র ছিলেন সিঞ্চন । একেবারে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে সিঞ্চনের এই সাফল্য ।

ইটিভি ভারতের মুখোমুখি সিঞ্চনস্নিগ্ধ অধিকারী (ইটিভি ভারত)

তাঁর সাফল্যে খুশি পরিবার, প্রতিবেশী থেকে শুরু করে আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ ও সমগ্র আসানসোল শহর । অদম্য অধ্যাবসায় থেকেই এই সাফল্য এসেছে বলে জানিয়েছেন সিঞ্চন ।

ছেলেকে মিষ্টি মুখ করাচ্ছেন বাবা-মা (নিজস্ব ছবি)

ইটিভি ভারতের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিলেন এই কৃতী ছাত্র ৷ তিনি বলেন, "যখন রেজাল্ট বেরিয়েছে, তখন দাবা খেলায় ডি গুকেশের বিশ্বজয়ের খবর নিয়ে মেতে ছিলাম ৷ বন্ধুদের কাছ থেকে ফোনে ইউপিএসসি-র আইএসএস পরীক্ষায় নিজের ফলের কথা জানতে পারি ৷ তখন দুটো আনন্দ মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় ৷"

সিঞ্চনস্নিগ্ধ অধিকারীর সাফল্যে খুশি পরিবার (নিজস্ব ছবি)

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল শহরের ইসমাইলে মাদার টেরেজা সরণিতে খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়ে ওঠা সিঞ্চনের । তাঁর বাবা প্রদীপ অধিকারী আসানসোল মাইন্স বোর্ড অফ হেলথের কর্মী । বহুবছর মাইন্স বোর্ড অফ হেলথের অবস্থাও ভালো নয় । সেই কারণে খুব সচ্ছল পরিবারে বড় হননি সিঞ্চন । মা সুজাতা অধিকারী গৃহবধূ । ছোট থেকে আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনেই পড়াশুনো করেছেন সিঞ্চন স্নিগ্ধ অধিকারী । পরবর্তীকালে কলকাতার আইএসআই থেকে স্ট্যাটিস্টিক্সের উপর মাস্টার্স করেন তিনি ।

মেডিক্যালে 168 র‍্যাংক করেছিলেন সিঞ্চন । ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও র‍্যাংক করেছিলেন সপ্তম । কিন্তু সিঞ্চনের ইচ্ছে ছিল স্ট্যাটিস্টিক্স নিয়ে পড়ার । তাই প্রথমে বি স্ট্যাট ও পরে এম স্ট্যাট করেছেন এই কৃতী ছাত্র । ইচ্ছে ছিল আইএএস হওয়া । প্রথম ইউপিএসসি-তে সফলতা আসেনি । আর তার পরেই পাখির চোখ করে কঠিন অধ্যাবসায় শুরু করেন সিঞ্চনস্নিগ্ধ অধিকারী । এবার তাক লাগানো রেজাল্ট তাঁর । গোটা দেশকে চমকে দিয়ে প্রথম হয়েছেন আসানসোলের সিঞ্চনস্নিগ্ধ অধিকারী ।

বাংলা মাধ্যম স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন তিনি ৷ সেই নিয়ে আগামী প্রজন্মকে সিঞ্চনস্নিগ্ধর বার্তা, "সত্যেন বসু মশাই বলে গিয়েছেন, যারা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা হয় না, তারা হয়তো বাংলা বোঝেন না, নয়তো বিজ্ঞান বোঝেন না ৷ সেই কথাটাই সবসময় সত্যি ৷ তবে দুর্ভাগ্যবশত দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন কারণে এখন বাংলা মাধ্যমে শিক্ষার মান আগের তুলনায় কমে গিয়েছে ৷ যদি তাকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসা যায়, অবশ্যই বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়ারা আবার ভালো ফল করবে ৷"

তবে নিজের সাফল্যের পুরো কৃতিত্বটাই সিঞ্চন দিতে চান বাবা-মাকে । বাবা প্রদীপ অধিকারীর কথায়, "ইউপিএসসি-তে পাশ করা সিঞ্চনের স্বপ্ন ছিল । কিন্তু এভাবে দেশের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করবে, তা ভাবিনি । খুব ভালো লাগছে । শুধু পরীক্ষায় প্রথম নয়, প্রশাসক হিসাবেও যেন এক নম্বর হয়, এটাই চাইব ।" মা সুজাতা অধিকারী বলেন, "ছেলের সাফল্যে আমরা সবাই গর্বিত । খুব ভালো লাগছে ওঁর পরিশ্রম সার্থক হল ।"

অবসর সময়ে রবীন্দ্রনাথের গান শোনেন সিঞ্চন। হ্যারি পটারের বই পড়তে ভালোবাসেন । এছাড়া সিনেমা দেখতেও ভালোবাসেন সিঞ্চন । তবে মাত্র 4 বছর আগে ফেসবুকে এলেও সোশাল মিডিয়ায় অতটা উৎসাহী নয় বলেই জানিয়েছেন সিঞ্চন । ইউপিএসসিতে প্রথম হয়ে সিঞ্চনস্নিগ্ধ অধিকারীর স্বপ্ন এখন দেশের এক নম্বর প্রশাসক হওয়া ।

আইএসএস পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থানাধিকারীও বাংলার

ইউপিএসসি-র ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করলেন পূর্ব বর্ধমানের বিল্টু মাজি । তাঁর প্রাপ্ত নম্বর 680 ৷ তাঁর বাড়ি আউশগ্রাম -2 ব্লকের রামনগর পঞ্চায়েতের পান্ডুক গ্রামে । বিল্টুর মতে, কোনও বিষয়ে সাফল্য না এলে হাল ছাড়া যাবে না । তাহলেই মিলবে সাফল্য ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিল্টু মাজি গ্রামের দীননাথপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন । পরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করার পরে স্ট্যাটিস্টিক্সে অনার্স পাশ করেন । এরপর ইন্ডিয়া পোস্টে চাকরি পান । বীরভূম জেলার রূপপুর গ্রামীণ পোস্ট অফিসে পোস্ট মাস্টার হিসেবে যোগ দেন ।

বিল্টু মাজির বাবা জয়দেব মাজি । তাঁদের বিঘা দুয়েক জমি আছে । সেই জমিতে চাষ আবাদ করেই সংসার চলে । মা সুমিত্রা কাঁথাস্টিচের কাজ করেন । সংসারে অভাব থাকায় ইউপিএসসি-র জন্য বিল্টু মাজিকে কোনও কোচিং দিতে পারেনি তাঁর পরিবার । তবে মনের জেদকে সম্বল করে শুরু হয় বিল্টুর লড়াই ।

তিনবারে সাফল্য ইউপিএসসিতে

প্রথম বছর ইউপিএসসিতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ইন্টারভিউতে কাট অফ থেকে 16 নম্বর কম থাকায় সফল হতে পারেননি । দ্বিতীয়বার ফের পরীক্ষায় বসেন তিনি । কিন্তু দু'নম্বরের জন্য লিখিত পরীক্ষায় সফল হননি বিল্টু । পরপর দু’বার সাফল্য না আসায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি । কিন্তু তাঁর মা ছেলের মনোবল ফেরাতে তাঁকে উৎসাহ দিতে থাকেন । তৃতীয়বার পরীক্ষা দিতেই আসে সাফল্য । দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন বিল্টু মাজি । তাঁর বাবা জয়দেব মাজি বলেন, "ইউপিএসসি পরীক্ষা সম্বন্ধে আমার কোনও ধারণা নেই । ছেলে পরীক্ষায় পাশ করার পরে বুঝতে পেরেছি ও একটা চাকরি পাবে ।"

আইএসএস পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের বিল্টু মাজি (নিজস্ব ছবি)

দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করার পরে বিল্টু মাজি বলেন, "ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিস (আইএসএস) পরীক্ষায় অল ইন্ডিয়ায় দ্বিতীয় হয়েছি । এটা আমার দীর্ঘ চার বছরের যাত্রাপথ । আমার বাবা একজন খেতমজুর । আমাদের খুব বেশি জমি নেই । এটাই আমাদের একমাত্র আয়ের সম্বল ছিল । প্রথমবার যখন আইএসএস পরীক্ষা দিই সেই বছর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ইন্টারভিউতে পাশ করতে পারিনি । ইন্টারভিউতে জেনারেল ক্যাটাগরিতে কাট অফ থেকে 16 নম্বর কম আসে । দ্বিতীয়বারে লিখিত পরীক্ষায় দু'নম্বরের জন্য উত্তীর্ণ হতে পারিনি ।

ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষার ফলের তালিকা (ছবি সূত্র- ইউপিএসসি'র ওয়েবসাইট)

তাঁর কথায়, "পরপর দুবার পাশ কর‍তে না পারায় প্রায় হাল ছেড়েই দিয়েছিলাম । তাই আর পড়ায় মন বসছিল না । কিন্তু আমার মা মনের জোর বাড়াতে সাহায্য করে । আমি তখন অন্যান্য চাকরির জন্য পড়াশোনা শুরু করি । কিন্তু মাথায় ইউপিএসসি ঢুকে থাকায় নতুন করে মায়ের উৎসাহে প্রস্তুতি নিতে শুরু করি । তাই ফের তৃতীয়বার পরীক্ষায় বসি । দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করি । তবে আমি গ্র‍্যাজুয়েশন করার পরে ইন্ডিয়ার পোস্টে চাকরি পাই । একটা গ্রামীণ পোস্ট অফিসে পোস্ট মাস্টার হিসেবে যোগ দিই । তবে ভবিষ্যতে মাস্টার্স করে নেট ও গেট-এ উত্তীর্ণ হতে চাই ।"

Last Updated : Dec 14, 2024, 7:00 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details