প্রয়াগরাজ, 19 জানুয়ারি: বাবা-মায়ের কাছে তিনি ফিরতে চান না। মহাকুম্ভে আগেই এ কথা জানিয়েছিলেন আইআইটিবাবা অভয় সিং ৷ সেটাই কি কাল হল ? কারণ বাবা-মায়ের আসার খবর পেতেই আশ্রম ছেড়ে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি ৷ তাতেই চটেছে জুনা আখড়া ৷ এরপর জুনা আখড়া আশ্রম কর্তৃপক্ষ তাঁকে বহিষ্কার করেছে ৷ আশ্রমের অভিযোগ, মিডিয়ায় প্রচার পেয়ে আইআইটি বাবার মাথা ঘুরে গিয়েছে। মন বিক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছে ৷ তবে এসব নিয়ে বিশেষ ভাবতে চান না তিনি । তাঁর স্পষ্ট কথা, "ভাগ্য যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই যাব!"
'আইআইটি বাবাা ওরফে অভয় সিংয়ের কথা প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ শুরু হওয়ার পরপরই সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে ৷ শনিবার রাতে তাঁকে বহিষ্কার করে জুনা আখড়া ৷ তিনি তাঁর বাবা এবং গুরুদের অপমান করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ শনিবার জুনা আখড়ার শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি পঞ্চ পরমেশ্বরের বৈঠক হয় ৷ তারপরই অভয় সিং ওরফে আইআইটি বাবাকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করা হয় ৷ আখড়ার সচিব হরি গিরি জানিয়েছেন, জুনা আখড়ায় অভয় সিংয়ের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে ৷
কাশীর পঞ্চ দশনম জুনা আখড়ার চেয়ারম্যান স্বামী হিরাপুরীজি মহারাজ বলেন, "তিনি (আইআইটি বাবা) আমাদের আশ্রম থেকে দীক্ষা পাননি ৷ আর আমায় তাঁর গুরু বলেও মানেন না ৷" তাঁর অভিযোগ, অভয় সিং এক সপ্তাহেরও বেশ সময় শান্তিতে একটি জায়গায় বসেছিলেন ৷ কিন্তু মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে চর্চা শুরু পর তাঁর মন চঞ্চল হয়ে উঠল ৷ তিনি এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে লাগলেন ৷ স্বামী হিরাপুরীজি মহারাজ আরও বলেন, "মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে যেভাবে প্রচার হয়েছে, তাতে তাঁর মন বিক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল ৷ তিনি কোনও দীক্ষা নেননি, তিনি আমাদের আশ্রমের উপর নির্ভরশীল ছিলেন মাত্র ৷"
সোমেশ্বরপুরী মহারাজ অভয় সিংকে মহাকুম্ভ মেলায় নিয়ে এসেছিলেন ৷ তাঁর বক্তব্য, "কাশীতে আমার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয় ৷ আমি তাঁকে মহাকুম্ভে নিয়ে আসি ৷ যদিও তিনি একাই থাকতে পছন্দ করছিলেন ৷ আমি এবিষয়ে সচেতনও ছিলাম ৷" কিন্তু অধিক রাতে অভয় সিংয়ের নাচানাচি এবং অদ্ভুত সব ক্রিয়াকলাপ সোমেশ্বরপুরী মহারাজকে বিস্মিত করেছিল ৷ এই বিষয়ে তিনি তাঁর গুরু ভুবনেশ্বর পুরীজি মহারাজের সঙ্গে আলোচনা করেন ৷ গুরু তাঁর শিষ্য সোমেশ্বরজিকে জানান, তিনি অভয় সিংকে কাছে রাখতেই পারেন ৷ কিন্তু অভয় সিং সেখান থেকে পালিয়ে যান ৷
অভয় সিং কিন্তু তাঁর আধ্যাত্মিক জীবনকে খুবই গুরুত্ব দিতেন ৷ শুধু তাঁর অদ্ভুত আচার-আচরণই সন্দেহ তৈরি করেছিল ৷ সোমেশ্বরপুরী মহারাজ বলেন, "তিনি (আইআইটি বাবা) বলেছিলেন, টিভিতে নিজেকে দেখতে চান এবং জনমনে নিজের একটা জায়গা তৈরি করতে চান ৷ কিন্তু কখনও ভাবিনি যে, ব্যাপারটা এরকম হয়ে যাবে ৷"
হরি গিরিজি মহারাজ জুনা আখড়ার শ্রী পঞ্চ দশনম-এর প্রধান ৷ তিনি ইটিভি ভারতকে বলেন, "গুরু ও বাবা-মাকে শ্রদ্ধা করাই আখড়ার শিষ্যের প্রধান যোগ্যতা ৷ সন্ন্যাস ধর্ম পালনের ক্ষেত্রেও এটাই সবচেয়ে জরুরি যোগ্যতা ৷ অভয় সিং প্রথম যোগ্যতাতেই ব্যর্থ হয়েছেন ৷ তাই তাঁকে আখড়া থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে ৷ তিনি উচ্ছৃঙ্খল ৷ গুরু-শিষ্যের রীতি ভঙ্গ করছেন ৷ তাঁর কাজকর্ম সন্ন্যাসের নীতির বিরোধী ৷"
হরি গিরি মহারাজের অভিযোগ, "আখড়ায় শৃঙ্খলাপরায়ণতাই রীতি ৷ কেউ এই রীতির ঊর্ধ্বে নয় ৷ আমিও নই ৷ তিনি (আইআইটি বাবা) কুৎসিত ভাষা ব্যবহার করেছেন ৷ তিনি তাঁর গুরুকে পাগল বলেছেন ৷ এগুলো সহ্য করা যায় না ৷ "
তিনি বলেন, "আখড়ার সোমেশ্বর পুরীজি মহারাজের কাছ থেকে অভয় সিং দীক্ষা পেয়েছেন ৷ যদি আখড়ার সঙ্গে যুক্ত কেউ কাউকে দীক্ষা দেন, তখন সেই শিষ্য আখড়ারই অংশ হয়ে যান ৷ নিয়ম মেনে 3 বছর পর আখড়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয় ৷" এইসব কিছু ছাড়াও আইআইটি বাবা বলেছেন বাবা-মা ভগবানের চেয়ে বড় হতে পারে না ৷ এই মন্তব্যে জুনা আখড়ার চরম আপত্তি রয়েছে ৷ এরপরই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে থাকে জুনা আখড়া এবং আইআইটি বাবাকে আখড়া ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় ৷
কী বললেন অভয় সিং ?
গুরুর অভিযোগের জবাবে আইআইটি বাবা অভয় সিং বলেন, "ওখানে যা হচ্ছিল, তা আমার ভালো লাগছিল না ৷ প্রত্যেক গুরুই চাইছিলেন, আমি তাঁদের শিষ্য হই ৷ কিন্তু আমি তো এখানে কারও শিষ্য হতে আসিনি ৷" তিনি জুনা আখড়ার নিয়ম-রীতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না, তাই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন ৷ তাঁর উপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হোক, তা চাননি আইআইটি বম্বে থেকে এরোস্পেস নিয়ে পাশ করা অভয় সিং ৷
তিনি আরও বলেন, "আমার বিশ্বাস, বাবাদের উচিত সত্যিকারের সাধনাকে সমর্থন করা ৷ কারও গতি সীমিত করে তাঁর উন্নতি আটকে দেওয়া নয় ৷ আমি আরও বিশ্বাস করি, আইআইটি থেকে যে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছি, তা আমায় আধ্যাত্মিকতাকো বুঝতে আরও ভালোভাবে সাহায্য করবে ৷" বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা না করা প্রসঙ্গে অভয় সিংয়ের বক্তব্য, "আমি এখন বাড়ি ফিরতে চাই না ৷ তাঁরা আমায় খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে এসেছেন ৷ এটা ভুল করছেন ৷ তাঁদের উচিত আমার বদলে ভগবানের সন্ধান করা ৷"
তিনি সাফ জানান যে মহাকুম্ভ মেলার পুরো সময়টাই তিনি প্রয়াগরাজে থাকবেন ৷ আর ভবিষ্যৎ ? এই প্রসঙ্গে অভয় বলেন, "আমার ভাগ্য আমায় যেখানে নিয়ে যাবে আমি সেখানে যাব ৷ আমি দরজাটা সবসময় খোলা রাখি ৷ জুনা আখড়া যদি আবারও আমার কাছে আসে, তাহলে ভেবে দেখব ৷" তবে অন্যরা কে কী বলল, তা উপেক্ষা করেই তিনি নিজের আধ্যাত্মিক যাত্রা চালিয়ে যাবেন বলে জানালেন অভয় সিং ৷