কলকাতা, 31 জুলাই: কলকাতার প্রাণকেন্দ্র বড়বাজারে শহরের অন্যতম পুরনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সত্যনারায়ণ পার্ক এসি মার্কেট ৷ মঙ্গলবার এই মার্কেটের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছে সিইএসসি ৷ কলকাতা পুরনিগম এলাকার 36 বছরের এই মার্কেট সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ এদিকে এটা পুজোর বাজারের সময় ৷ এমন সময়ে মার্কেট বন্ধ হওয়ায় ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ী থেকে কর্মচারী সকলেই ৷ তাই মার্কেটের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে অবস্থান-বিক্ষোভে শামিল হলেন এসি মার্কেটের দোকানদার থেকে কর্মচারীরা ৷ এর সমাধানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার আবেদন জানিয়েছেন এসি মার্কেটের দোকানদারদের সংগঠন ৷
সত্যনারায়ণ পার্কে বিক্ষোভরত দোকানদার, কর্মচারী ও তৃণমূল কাউন্সিলর (ইটিভি ভারত) দোকান মালিকদের অভিযোগ
দোকান মালিকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মার্কেটে এসি চলে না ৷ তাই দোকানে ভিড় হয় না ৷ এই পরিস্থিতিতে ছ'মাসেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যুতের বকেয়া বিল হয়েছে 56 লক্ষ টাকা ৷ তাই এবার লাইন কেটে দিয়েছে সিইএসসি ৷ অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংস্থা 'হ্যাপি হোমস' বিদ্যুতের বিল না মেটানোয় এই ঘটনা ৷
কলকাতা পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজারের বয়স 36 ৷ প্রায় 30 বছর ধরে একটি সংস্থা এই বাজারের রক্ষণাবেক্ষণের টেন্ডার নিয়েছিল ৷ তারাই দোকান মালিকদের থেকে রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ টাকা আদায় করে ৷ এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিলের টাকাও থাকে ৷
2015 সালে টেন্ডারের মেয়াদ শেষ হয় ৷ তারপর তিন বছর তাদের টেন্ডারের সময়সীমা বাড়ানো হয় ৷ এই মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কোনও এক অজানা কারণে সংস্থাটি সত্যনারায়ণ পার্ক এসি মার্কেটকে নিয়ন্ত্রণ করছে ৷ এছাড়া এই মার্কেটে প্রায় 350টিরও বেশি দোকান রয়েছে ৷ এর মধ্যে বেশি কিছু দোকানদার ওই সংস্থাকেই এখনও প্রতি মাসে টাকা দিয়ে যাচ্ছেন ৷ এমনকী হ্যাপি হোমস নামের সংস্থাটির মালিকের নিজস্ব একাধিক দোকান আছে এই এসি মার্কেটে ৷
অভিযোগ, কলকাতা পুরনিগমের ঠিক করে দেওয়া প্রতি বর্গফুটের যে হিসেব বা প্রতি ইউনিটে বিদ্যুৎ বিলের যে টাকা, তার থেকে অনেক টাকা বেশি আদায় করে এসি মার্কেট রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এই সংস্থা ৷ এদিকে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে টাকা না দেওয়াতে তারা লাইন কেটে দেয় ৷ টাকা নিলেও মার্কেটের রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকঠাক করত না ওই সংস্থা ৷ ফলে এসি মার্কেটে দিনের পর দিন বন্ধই রয়েছে এসি মেশিন ৷ সমস্যায় পড়ছেন দোকানদাররা ৷
মাথায় বিপুল দেনা! বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজে বিরতি দিতে নারাজ পুরনিগম
কলকাতা পুরনিগমের চোখ বন্ধ
দোকান মালিকদের সংগঠন সত্যনারায়ণ পার্ক এসি মার্কেট শপ ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে দাবি, এই টালমাটাল অবস্থায় কলকাতা পুরনিগমের বাজার বিভাগের মেয়র পারিষদের দ্বারস্থ হন দোকান তাঁরা ৷ তবে মীমাংসা হয়নি ৷ টেন্ডারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এখনও পর্যন্ত ওই সংস্থা এসি মার্কেটের রক্ষণাবেক্ষণ করে চলেছে কোনও এক অজানা কারণেই ৷ এদিকে পুরনিগমও তাদের হঠিয়ে দেওয়ার কোনও তৎপরতা দেখাচ্ছে না ৷ অনেকেই সন্দেহ করছেন, এখানে আর্থিক লেনদেন থাকলেও থাকতে পারে ৷ তাই হয়তো বাজার বিভাগের কর্তারা চোখ বন্ধ করে আছেন ৷ কোনও উপায় না পেয়ে শেষে এই হ্যাপি হোমস সংস্থার বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন দোকান মালিক সংগঠন ৷
সংগঠনের সম্পাদক হেমেন্দ্র মিত্র বলেন, "ওই সংস্থা দিনের পর দিন টাকা তুলে গেলেও সেই টাকা বিদ্যুৎ বণ্টনকারী সংস্থাকে জমা দেয়নি ৷ যার জেরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে ৷ মেনটেনেন্সের টাকা সংগ্রহ করলেও কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হয় না ৷ এসি মার্কেটে এসি চলে না ৷ ফলে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে ৷ প্রতি বর্গফুটের যে নির্ধারিত ভাড়া, সেই ভাড়া থেকে অনেক বেশি টাকা তারা নিত ৷ একইভাবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের যা দাম, তার থেকে অনেক বেশি টাকা তারা নিত ৷"
দোকানদারদের দাবি
তিনি আরও বলেন, "মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আমরা মনে করি এই সংস্থাকে কোনও চুক্তি ছাড়াই অন্যায় ভাবে রাখা হয়েছে ৷ তাই আদালতে দ্বারস্থ হয়েছি ৷ আমাদের দাবি, প্রতিটি দোকান মালিককে সাব-লাইসেন্স থেকে লাইসেন্স হোল্ডার করতে হবে ৷ আমরা সরাসরি রক্ষণাবেক্ষণের টাকা জমা দেব ৷ আমরাই সরাসরি প্রতি মিটারের লাইটের বিল দেব সিইএসসির কাছে ৷"
তৃণমূল কাউন্সিলরের বক্তব্য
এদিনের অবস্থানে ছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর রাজেশ সিনহা ৷ তিনি বলেন, "হ্যাপি হোমস নামক একটি সংস্থা এই এসি মার্কেটের 100টি দোকানদার রক্ষণাবেক্ষণের টাকা তোলে ৷ সেটা বেআইনি ৷ বাকিরা নিজেদের টাকা তুলে কিছু কিছু করে টাকা মেটাচ্ছিল ৷"
কলকাতা পুরনিগম ইতিমধ্যে ওই সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে ৷ কারণ, পুরনিগমের নিজস্ব সম্পত্তি ৷ সে কাকে কখন লিজ দেবে ? কখন বাতিল করবে, তাদের ব্যাপার ৷ হ্যাপি হোমস একশোটা দোকান নিজেদের হাতে রেখে দিয়েছে ৷ সেই অংশের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বা বিদ্যুৎ বিলের টাকা দেয়নি ৷ এই ঝামেলার মাঝে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা টাকা না পাওয়াতেই লাইন কেটে দিয়ে গিয়েছে ৷ বিষয়টি নিয়ে ফের পুরনিগমকে জানিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করব ৷" এই বিষয়ে জানার জন্য হ্যাপি হোমস সংস্থার মালিক পবন কাজারিয়াকে ফোন করা হলে তিনি ফোন তোলেননি ৷
এলাকা থেকে বর্ষার জমা জল কখন নামবে ? উত্তর মিলবে এক ক্লিকেই