মালদা, 4 সেপ্টেম্বর: মালদার হরিশচন্দ্রপুর সদরে কংগ্রেস নেতার ছেলের হোটেলে মধুচক্র চালানোর অভিযোগ ৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাতে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় ওই হোটেলে ৷ মধুচক্র চালানোর অভিযোগে, হোটেলে ভাঙচুর চালালেন স্থানীয়রা ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে আহত হয়েছেন হরিশচন্দ্রপুর থানার এসআই ৷ পরে আইসি-র নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ৷
হরিশচন্দ্রপুরে কংগ্রেস নেতার হোটেলে মধুচক্র চালানোর অভিযোগ ৷ (ইটিভি ভারত) হরিশচন্দ্রপুর সদরের তেঁতুলবাড়িতে বড়সড় বিল্ডিংয়ে হোটেল ৷ বিল্ডিংয়ের মালিক প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতার ছেলে ৷ অভিযোগ, সেই হোটেলেই রমরমিয়ে চলছিল মধুচক্র ৷ স্থানীয়দের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরে সন্ধে নামলেই বহিরাগত যুবক-যুবতীদের ভিড় বাড়ছিল হোটেলে ৷ এনিয়ে সন্দেহ হয় তাঁদের ৷ তবে, প্রভাবশালী মালিকের ভয়ে এতদিন কেউ কিছু বলেননি ৷ কিন্তু, গতকাল রাতে স্থানীয়রা সেই হোটেলে হানা দেয় ৷ হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় মধুচক্রের কারবার ৷ হোটেলে শুরু হয়ে যায় ভাঙচুর ৷
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ ৷ অভিযোগ, উত্তেজিত গ্রামবাসীরা পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন ৷ তার জেরে নর্দমায় পড়ে আহত হন হরিশচন্দ্রপুর থানার সাব ইন্সপেকটর ৷ পরে থানার আইসি-র হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ৷ ঘটনাস্থল থেকে তিন যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ আটক করা হয়েছে এক মহিলাকেও ৷ এর জেরে গতকাল রাতে উত্তেজনা ছড়ায় তেঁতুলবাড়ি এলাকায় ৷ এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও ৷
তৃণমূলের দাবি, এভাবেই এলাকায় অনৈতিক কাজকে সমর্থন করছে বাম-কংগ্রেস জোটের দখলে থাকা পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত ৷ যদিও কংগ্রেসের দাবি, হোটেলের মালিক তাদের দলের হলেও, সেটি কিছুদিন আগে ভাড়া দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের লোকেদের ৷ এই হোটেলের মালিক নুর আলম ৷ তাঁর বাবা মহম্মদ মুসলিম প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা ৷ তাঁর ভ্রাতৃবধূ বাম-কংগ্রেস জোটের দখলে থাকা হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী ৷
ওই হোটেলের সামনেই চায়ের দোকান স্থানীয় মহাদেব ওঁরাওয়ের ৷ তিনি বলছেন, “মাসখানেক ধরেই এখানে মধুচক্রের আসর বসত ৷ সন্ধের পর বহিরাগত মেয়েদের নিয়ে এসে কিছু ছেলে এখানে ঢুকত ৷ ওই ছেলেরাও বহিরাগত ৷ কিছুদিন হোটেলটা বন্ধ ছিল ৷ ফের খোলার পর থেকেই এই ঘটনা দেখতে পাচ্ছি ৷ গতকাল রাতে গ্রামবাসীরা হোটেলে ধরপাকড় চালায় ৷”
এনিয়ে তৃণমূলের হরিশ্চন্দ্রপুর অঞ্চল সভাপতি সঞ্জীব গুপ্তর বক্তব্য, “হরিশ্চন্দ্রপুর সদর এলাকায় এমন অসামাজিক কাজ ভাবা যায় না ৷ পুলিশ খুব ভালো কাজ করেছে ৷ দ্রুততার সঙ্গে ওই হোটেল থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছে ৷ সেখানে পুলিশকেও আক্রান্ত হতে হয়েছে ৷ একজন পুলিশ অফিসার আহত হয়েছেন ৷ মাসখানেক আগেও বিএল অ্যান্ড এলআরও অফিসেও পুলিশ দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ করেছিল ৷ শুনেছি, এই হোটেলটি হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রীর আত্মীয়ের ৷”
হোটেল মালিক নুর আলম কিংবা তাঁর বাবা মহম্মদ মুসলিমের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ তবে, হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী তহমিনা খাতুনের দাবি, “আমার ভাসুর ভাড়া দেওয়ার জন্য বিল্ডিংটা বানিয়েছিলেন ৷ মাসখানেক আগে তৃণমূলের লোকজন জোর করে বিল্ডিংটা ভাড়া নিয়েছিল ৷ ভাড়া নিয়ে ওরা কী করছিল, সেটা ওরাই বলবে ৷ গতকাল রাতে খবর আসে, বিল্ডিং ভাঙচুর হচ্ছে ৷ সম্ভবত ষড়যন্ত্র করে আমাদের ফাঁসাতেই ওরা বিল্ডিং ভাড়া নিয়েছিল ৷ আমরা গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি পেয়েছি ৷ তাতেই ওরা আমাদের বদনাম করতে এই ষড়যন্ত্র করেছে ৷”