মালদা, 29 জানুয়ারি: একের পর এক শুট আউট ৷ উত্তর থেকে দক্ষিণে কথায় কথায় ছুটছে জ্বলন্ত সীসা ৷ প্রাণ যাচ্ছে মানুষের ৷ মালদায় হচ্ছেটা কী? এত আগ্নেয়াস্ত্র কীভাবে জেলায় মজুত হচ্ছে? বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করতে পুলিশের ভূমিকাই বা কী?
বৈষ্ণবনগরের বীরনগর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধানাথটোলায় শুট আউটে মৃত্যুর পর জেলা জুড়ে এসব প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে ৷ মঙ্গলবারের ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ ৷ কিন্তু মানুষের প্রশ্নাবলির কোনও উত্তর এখনও পুলিশকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি ৷ তাঁদের একটাই কথা, তদন্ত চলছে ৷
মঙ্গলবার সন্ধেয় রাধানাথটোলার বাজার সংলগ্ন এলাকায় মদের আসরে গুলি চলে ৷ একবার নয়, অন্তত দু'বার ৷ গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে ৷ নিরঞ্জন দাস নামে দ্বিতীয়জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় মালদা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ৷ মৃত প্রদীপ কর্মকারের দেহ বুধবার ময়নাতদন্ত করানো হচ্ছে ৷
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, গুলিবিদ্ধ নিরঞ্জন পেশায় মদ বিক্রেতা ৷ নিজের বাড়িতেই ব্যবসা চালান ৷ বাড়িতে রয়েছে মদ্যপানের জায়গাও ৷ প্রতিদিন সকাল-সন্ধেয় তাঁর বাড়িতে মদের আসর বসে ৷ গতকাল সন্ধেতেও তেমনই আসর বসেছিল ৷ উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন ৷ মৃত প্রদীপ কর্মকারও গতকাল সেখানে মদ্যপান করতে গিয়েছিলেন ৷
স্থানীয়দের দাবি, আসরে ছিল স্থানীয় নিমাই ঘোষ, বাপি ঘোষ, সুজয় ঘোষ, গোপাল ঘোষ ও গৌরাঙ্গ ঘোষ ৷ মদ্যপান করতে করতে পকেটের টাকা শেষ হয়ে যায় নিমাইয়ের ৷ তিনি নিরঞ্জনকে ধারে মদ দিতে বলেন ৷ নিরঞ্জন তাতে রাজি না হওয়ায় শুরু হয় বচসা ৷ সেই সময় প্রদীপ কর্মকার নিরঞ্জনের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন ৷ এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে নিমাই-বাপিরা ৷ তারা কোমর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে প্রদীপ ও নিরঞ্জনকে গুলি চালায় ৷ এরপর ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে সেখান থেকে পালিয়ে যায় ৷
মঙ্গলবার রাতেই নিমাইকে আটক করে বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ ৷ রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয় ৷ আটক করা হয় তাঁর এক সঙ্গী পাণ্ডব ঘোষকেও ৷ পরে তাঁকেও গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ তবে শুট আউটে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি এখনও উদ্ধার করা যায়নি ৷ সাতদিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে এদিন নিমাই ও পাণ্ডবকে মালদা জেলা আদালতে পেশ করা হয়েছে ৷ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আদালতের নির্দেশ জানা যায়নি ৷
রাধানাথটোলা গ্রামটি বৈষ্ণবনগর থানার কাছেই ৷ কালিয়াচক থানার দূরত্বও খুব বেশি নয় ৷ প্রশ্ন উঠেছে, এমন একটি গ্রামে কয়েক বছর ধরে নিরঞ্জন কীভাবে নিজের বাড়িতে অবৈধ মদের ব্যবসা চালাচ্ছিলেন? কেন পুলিশের তা নজরে এল না? নাকি এর পিছনে রয়েছে মাসোহারার গল্প ৷
মাস ছয়েক আগে হরিশ্চন্দ্রপুর আর চাঁচলে শুট আউটের ঘটনা ঘটেছিল ৷ যদিও তাতে কেউ মারা যায়নি ৷ গুলি চলেছিল রতুয়া থানা এলাকার একটি জলকরেও ৷ গত 2 জানুয়ারি শুট আউটে মৃত্যু হয় জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি দুলাল সরকারের ৷ ঠিক তার 12 দিনের মাথায় বৈষ্ণবনগর থানা এলাকাতেই শুট আউটের ঘটনা ঘটে ৷ খুন হন এক তৃণমূল কর্মী ৷ যদিও তাঁর দেহে গুলি পাওয়া যায়নি ৷ কিন্তু বারবার সামান্য বিষয়েও ব্যবহার হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র ৷ এতেই গোটা জেলার নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ৷
এদিন ফোন ধরেননি মালদার পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব ৷ তবে আইজি (উত্তরবঙ্গ) রাজেশকুমার যাদব ইটিভি ভারতকে বলেন, "গতকাল বৈষ্ণবনগরের ঘটনায় রাতেই মূল অভিযুক্ত-সহ দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ বাকিদের খোঁজে পুলিশি তল্লাশি জারি রয়েছে ৷ ঘটনাস্থল থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ৷ মালদা জেলায় বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে ৷"