বোলপুর, 6 সেপ্টেম্বর: আরজি কর-কাণ্ডের আবহে বিশ্বভারতীতে ভিন রাজ্যের আবাসিক ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু ৷ জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আম্রপালি ছাত্রী নিবাসে আত্মহত্যা করেন ওই ছাত্রী ৷ পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর ৷ ঘটনায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে ছাড়া ছাত্রী নিবাসে প্রবেশের অভিযোগ উঠেছে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশের বিরুদ্ধে ৷ এই অভিযোগে মধ্যরাত পর্যন্ত পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা ৷ পরে অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার এসে পরিস্থিতি সামাল দেন ৷ ঘটনাকে কেন্দ্র উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্বভারতী ৷
পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের (ইটিভি ভারত) বিশ্বভারতীর শিল্প সদনের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অনামিকা সিং ৷ উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর বাসিন্দা ৷ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্রীটি বিষ খান ৷ অসুস্থ অবস্থায় সহপাঠীরা প্রথমে তাঁকে বিশ্বভারতীর পিয়ার্সন মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যান ৷ পরে অবস্থার অবনতি হলে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে ৷ সেখানে তাঁর মৃত্যু হয় ৷ খবর পেয়ে হাসপাতালে যান বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ৷ রাতে শান্তিনিকেতন থানার ওসি কস্তুরি মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশ আম্রপালি ছাত্রী নিবাসে আসে ৷ পড়ুয়াদের অভিযোগ, বিশ্বভারতীর কোন আধিকারিক ছাড়াই ছাত্রী নিবাসে প্রবেশ করে পুলিশ ৷ এরপরই ওসি-সহ বাকি পুলিশকর্মীদের ছাত্রী নিবাসে আটকে রেখে বিক্ষাভ দেখাতে শুরু করেন পড়ুয়ারা ৷ 'বিশ্বভারতীকে আরজি কর হতে দেব না' এই স্লোগান তুলে তথ্য লোপাটের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন ছাত্রছাত্রীরা ৷
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন অতিরিক্ত বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার (বোলপুর) রাণা মুখোপাধ্যায় এবং বোলপুরের এসডিপিও রিকি আগরওয়াল ৷ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে আসেন ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতো, নিরাপত্তা আধিকারিক সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায় এবং ছাত্র পরিচালক গনেশ মালিক ৷ তাঁদের ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা ৷ প্রশ্ন করেন, ছাত্রী নিবাসের মূল গেটে কেন সিসি ক্যামেরা নেই ? পুলিশ পড়ুয়াদের জানায়, তথ্য যাতে লোপাট না হয়, তার জন্য ঘরটিকে সিল করতে তড়িঘড়ি ঢুকতে হয়েছে । ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্বভারতী ৷ পরে পুলিশ আধিকারিকদের প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় ৷
ছাত্রীদের তরফে দেবমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সেই বিকেলের ঘটনা ৷ আর মধ্যরাতে পুলিশ আসছে মেয়েদের হোস্টেলে ৷ সঙ্গে বিশ্বভারতীর কোনও অধিকারিক নেই। এটা কীভাবে সম্ভব ! তথ্য লোপাট করার চক্রান্ত চলছে ৷ মেয়েদের হস্টেলের গেটে সিসি ক্যামেরা নেই ৷ বিশ্বভারতীর হাসপাতালের কোনও পরিকাঠামো নেই ৷ আমরা এর বিচার চাই ৷"
বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতো বলেন, "একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গিয়েছে । আমরা মৃত ছাত্রীর পরিবারকে খবর দিয়েছি ৷ আর আমরা হাসপাতালে ছিলাম । তাই হস্টেলে পৌঁছতে দেরি হয়েছে । যাতে পুলিশ বলতে না পারে আমাদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি, তাই পুলিশ হস্টেলে গিয়েছে । আমরা পরে এলাম ।" ঘটনা প্রসঙ্গে বীরভূম জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বোলপুর) রাণা মুখোপাধ্যায় বলেন, "হাসপাতাল থেকে খবর পেয়েছি আমরা ৷ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বোর্ড বসিয়ে কোনও মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত করা হবে ৷ তথ্যপ্রমাণ লোপাটের ভয়ে পুলিশ হস্টেলের ঘরটি তড়িঘড়ি সিল করেছে ৷ প্রয়োজনে ফরেন্সিক দল ডাকা হবে ৷ আমরা তদন্তে কোনও খামতি রাখব না ৷"