বাদুড়িয়া, 11 ফেব্রুয়ারি: তৃণমূল নেত্রীর শ্লীলতাহানি, গাড়ি ভাঙচুর ও তাঁর দেহরক্ষীকে মারধরের অভিযোগ উঠল দলেরই এক নেতার বিরুদ্ধে । ঘটনার জেরে তীব্র শোরগোল পড়ে গিয়েছে উত্তর 24 পরগনার বাদুড়িয়ায় । ওই নেত্রী শাসকদলের বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার জেলা সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন । অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা আবার স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ।
আর এই ঘটনা ঘিরে শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল একেবারে প্রকাশ্যে চলে এসেছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহল মহল । মারধর ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ইতিমধ্যে অভিযুক্ত নেতার বিরুদ্ধে বাদুড়িয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন আক্রান্ত তৃণমূল নেত্রী । তবে অভিযোগ দায়ের হলেও মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ । ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে বসিরহাট জেলা পুলিশ । যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে বলে দাবি করেছেন যশাইকাটি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তারিক হাসান ।
বাদুড়িয়ায় আক্রান্ত তৃণমূল নেত্রী (ইটিভি ভারত) স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে তৃণমূলের ওই নেত্রী দলের কাজ সেরে নিজের গাড়িতে করে বাদুড়িয়ার বাড়িতে ফিরছিলেন । সেই সময় শিমুলিয়া এলাকায় তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরেন দলেরই অন্য গোষ্ঠীর লোকজন । অভিযোগ, তাঁকে গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে প্রকাশ্য রাস্তায় মারধর করা হয় ।
এই দৃশ্য দেখার পর তৃণমূল নেত্রীর দেহরক্ষী তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাঁকেও বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে । শুধু তাই নয়, নেত্রীর গাড়িতেও বেপরোয়া ভাঙচুর চালিয়েছে হামলাকারীরা । হামলার নেপথ্যে তৃণমূলের যশাইকাটি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তারিক হাসান রয়েছেন বলে দাবি ওই তৃণমূল নেত্রীর । তাঁর পরিকল্পনাতেই গোটা ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন তিনি ।
ওই তৃণমূল নেত্রী বলেন, "এটা পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা । হঠাৎ আমার গাড়ির সামনে একটা বাচ্চা চলে আসে । আমার গাড়ির চালক জোরে ব্রেক কষে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেন । না হলে দুর্ঘটনা হতে পারত । আমি জানলা দিয়ে মুখ বের করে বাচ্চাটির বাবাকে বলেছি, এই ভাবে বাচ্চাদের রাস্তায় কেউ ছেড়ে দেয় ? তার পরেই এলাকায় লোকজন আমায় ঘিরে ধরেন । তাতে নেতৃত্ব দেন উপপ্রধান । আমার গাড়ি ভাঙচুর করা হয় । আমাকে গাড়ি থেকে টেনে বের করে মারধর করা হয়েছে । চড় পর্যন্ত মারা হয়েছে । বাঁচাতে গেলে আমার দেহরক্ষীও আক্রান্ত হন ।"
পুরো ঘটনার নেপথ্যে রাজনৈতিক রোষ কাজ করেছে বলে অভিযোগ নেত্রীর । তিনি বলেন, "আমরা সকলে একই রাজনৈতিক দলের সদস্য । ভুল বোঝাবুঝি থাকতেই পারে । তাই বলে এই ভাবে মারধর করা, হেনস্তা করা তো বাঞ্ছনীয় নয় ।"
তৃণমূল নেত্রীর গাড়ি (নিজস্ব ছবি) অন্যদিকে, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা তারিক হাসান বলেন, "পুরোটাই মিথ্যা এবং বানানো কথা । উনি আমাদের দলের নেত্রী । আমি দলের এক জন সৈনিক । আমি কেন ওঁকে আক্রমণ করব ?" তিনি আরও বলেন, "আমি গণ্ডগোলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই সমস্যার সমাধান করতে । তখন বাদুড়িয়া থানার পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিল । যা ঘটেছে, সেটা সকলের সামনে । পুলিশ ভালো ভাবেই জানে কী ঘটেছে ।"
বিষয়টি নিয়ে বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার মেহেদি হোসেন রহমান বলেন, "পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে । তদন্তে কারও দোষ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।"
প্রসঙ্গত, আক্রান্ত তৃণমূল নেত্রী একসময় বিজেপি করতেন । 2024 সালে যখন সন্দেশখালি উত্তাল, সেই সময় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে টাকিতে তাঁকে পুলিশের গাড়ির উপর উঠে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করতে দেখা গিয়েছিল । তারপর সুকান্ত মজুমদারের গাড়ির বনেটের উপর তিনি পড়ে যান । পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন । তাঁকে বসিরহাট জেলা হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছিল । গত লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন । তারপর থেকেই তৃণমূলের ওই নেতার সঙ্গে রেষারেষি চলছে তাঁর । এর আগেও একবার হামলার মুখে পড়েছিলেন ওই তৃণমূল নেত্রী । আবারও সেই একই ঘটনা ঘটল তাঁর সঙ্গে ।