কলকাতা, 15 মে: ইন্ডিয়া জোটের চালিকা শক্তি হওয়ার কথা বলে এসেছেন বরাবার। সেই অবস্থান বদলে এখন শুধুই 'বাইরে থেকে সমর্থন'-এর প্রস্তাব তৃণমূল নেত্রীর ৷ এই নয়া অবস্থান ঘিরে রাজনৈতিক মহলে তরজার অন্ত নেই ! কংগ্রেস-সিপিএম মনে করছে, আদতে নিজের পুরনো অবস্থান বদলায়নি তৃণমূল। কৌশলে বিরোধী শিবির এবং পদ্ম শিবির-দু'পক্ষের সঙ্গেই হাত মেলানোর রাস্তা খোলা রাখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশ্য বিজেপি মনে করছে, ইন্ডিয়া জোট সরকার গঠনের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারবে না। তাই মমতা কী বললেন, তাতে কিছু যায় আসে না।
রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, এতদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ থেকে শোনা যাচ্ছিল অন্য সুর। তিনি বলছিলেন, "ইন্ডিয়া জোটের চালিকাশক্তি হবে তাঁর দল।" হঠাৎ করে বাইরে থেকে সমর্থনের কথা উল্লেখ করায় একটা বড় প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে । অনেকেই মনে করছেন, এই ধরনের কথা বলে নির্বাচন শেষ হওয়ার আগেই তৃণমূল বুঝিয়ে দিতে চাইছে, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলেও সরকারের অংশ হবে না তৃণমূল। তৃণমূল সুপ্রিমোর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রীতিমতো সমালোচনার সুর শোনা গেল ইন্ডিয়া জোটের দুই গুরুত্বপূর্ণ শরিক কংগ্রেস এবং সিপিএমের গলায়।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী মনে করছেন, এই কারণেই তৃণমূলের প্রতি বাংলার সাধারণ মানুষের বিশ্বাস কমছে। তিনি বলেন, "বাংলার মানুষের তৃণমূল সম্পর্কে মোহভঙ্গ হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলও বুঝতে পারছে বাংলায় তাদের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি অন্ধকার। নির্বাচনের পর তৃণমূল ছেড়ে অনেকেই কংগ্রেসে যোগ দেবেন।" এই প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, "আসলে উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) জল মাপার চেষ্টা করছেন। বাইরে বসে হাওয়া বুঝছেন। জাতীয় ক্ষেত্রে ওঁর বিশ্বাসযোগ্যতা ক্রমেই তলানীতে ঠেকেছে।"
অন্যদিকে, ইন্ডিয়া জোটের গুরুত্বপূর্ণ শরিক সিপিএম এই বক্তব্যকে হাতিয়ার করে সরাসরি তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুই শিবিরের সঙ্গে সেটিং করে চলার অভিযোগ তুলেছে। সিপিএম নেতা তথা দমদমের প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী বলেন, "তৃণমূল নেত্রী সবদিকেই আছেন। একদিকে তিনি বলছেন, ইন্ডিয়া জোট সরকার করলে সমর্থন দেবেন। অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদিকে সমর্থন দেওয়ার কথাও বলছেন। এ ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া জোটকে সমর্থন দেওয়ার কথা বললেও বলেছেন বাইরে থেকে সমর্থন দেবেন। অর্থাৎ, মমতা বুঝিয়ে দিতে যান, বিজেপির কাছে সুযোগ থাকলে তিনি তাদেরও সমর্থন করতে পারেন।
পাশাপাশি, সিপিএম সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "কয়েকদিন আগেই উনি বলেছিলেন সিপিএম ইন্ডিয়া জোটকে নিয়ন্ত্রণ করছে ৷ তাই আমি ইন্ডিয়া জোটে থাকব না। এখন বুঝতে পারছেন, ইন্ডিয়া জোট হয়তো ভালো ফল করবে। তাই এখন হাওয়া মোরগের মতো নিজের অবস্থান বদল করছেন। কিন্তু এটা জেনে রাখুন, যদি বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে বিজেপির দিকেই যাবেন ।" এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বাইরে থেকে সমর্থন প্রসঙ্গকে কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ওঁর সাহায্য গেঞ্জির বুকপকেটের মতো। স্যান্ডো গেঞ্জির যেমন বুক পকেট হয় না, তেমনই বিরোধী জোটেরও সরকার গঠনের সম্ভাবনাও তৈরি হবে না।"
প্রসঙ্গত, হুগলির নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে এদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, "চার দফায় যে ভোটগ্রহণ হয়েছে, তাতে বিজেপি হারবে। বাকি তিন দফাতেও জেতার সম্ভাবনা নেই। চিৎকার করবে, ইনিয়ে বিনিয়ে ভাঁওতা করবে, জুমলাবাজি করবে, কিন্তু জিততে পারবে না। অহংকার করে বিজেপি বলছে, এবার চারশো পার। মানুষ বলছে দুশো পার হবে না। এবার হবে পগারপার। তবে বাংলার সিপিএম-কংগ্রেসকে ধরবেন না। কারণ, ওরা বিজেপির সঙ্গে রয়েছে। আমি দিল্লির কথা বলছি। সেখানে ইন্ডিয়া জোটকে নেতৃত্ব দিয়ে, বাইরে থেকে সব রকম সাহায্য করে সরকার গঠন করে দেব আমরা। যাতে বাংলার মা-বোনেদের কোনও অসুবিধা না হয়, ১০০ দিনের কাজের টাকা না আটকায়।
আরও পড়ুন:
- হীরক-রানি কটাক্ষের পালটা লকেট-রানি, শাহকে জবাব মমতার
- শর্ত সাপেক্ষে তিনিও সিএএ মানতে রাজি, স্পষ্ট করলেন মমতা