শিলিগুড়ি, 4 জুলাই: টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পাহাড় । বারবার ধসের কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত বাংলা-সিকিম লাইফ লাইন 10 নম্বর জাতীয় সড়ক । সড়কের পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, অনির্দিষ্টকালের জন্য ওই সড়কে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন । যার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে পর্যটনে ৷ গত একমাসে পর্যটনে ক্ষতি হয়েছে প্রায় 45 থেকে 50 কোটি টাকা ৷ চিন্তায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা ৷
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ 10নং জাতীয় সড়ক (ইটিভি ভারত) প্রথমে অক্টোবরের হরপা বান, তারপর এখন বৃষ্টিতে তিস্তা নদী গ্রাস করতে শুরু করেছে 10 নম্বর জাতীয় সড়ককে । মেরামত বা সংস্কার তো দূরের কথা, আগামীতে এই সড়কের অস্তিত্ব থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে পর্যটন ব্যবসায়ীরা । জুন মাসের শুরু থেকে দফায় দফায় ধসের কারণে সাংঘাতিক পরিস্থিতি 10 নম্বর জাতীয় সড়কের । সেই কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে বাংলা-সিকিম যোগাযোগের একমাত্র এই লাইফ লাইন ৷ তবে তার জের পড়েছে উত্তরের পর্যটনে । খালি জুন মাসেই পর্যটনে প্রায় 45 থেকে 50 কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে । আর এই ক্ষতির ফল সুদূরপ্রসারী হবে বলে আশঙ্কা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা ।
এই বিষয়ে জিটিএ'র পর্যটন সচিব নর্দেন শেরপা বলেন, "10 নম্বর জাতীয় সড়ক উত্তরের যোগাযোগের একটি নির্ভরশীল মাধ্যম । আর পর্যটকরা শুধু সিকিম ঘুরতে যান না । সঙ্গে দার্জিলিং ও কালিম্পংয়েও যান । যে কারণে সিকিমে যাতায়াত বন্ধ হওয়ায় দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের ক্ষেত্রেও বুকিং বাতিল হয়েছে এবং হচ্ছে । এতে অবশ্যই প্রভাব পড়েছে ।"
রাজ্যের পর্যটন দফতরের যুগ্মসচিব (উত্তরবঙ্গ) জ্যোতি ঘোষ বলেন, "10 নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ রয়েছে । পূর্ত দফতর বিষয়টি দেখছে ।" হিমালয়ান হসপিটালিটি ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুর ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, "10 নম্বর জাতীয় সড়কের জন্য উত্তরের, বিশেষ করে পাহাড়ের পর্যটন ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছে । আর এই ক্ষতির প্রভাব পুজো পর্যন্ত থাকবে । আমাদের যা হিসেব, তাতে প্রায় 50 কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে ।"
ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী কমিটির সদস্য দেবাশিস মৈত্র বলেন, "জাতীয় সড়কের যা পরিস্থিতি, তাতে কোনও গাড়ির চালক এখন আর যেতে চাইছেন না । পর্যটকরাও একে একে বুকিং বাতিল করছেন ।"
পর্যটন দফতর ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পর্যটকরা সচরাচর শুধুমাত্র সিকিম ঘুরতে যান না । দার্জিলিং, ডুয়ার্সকে সঙ্গে রেখেই ট্যুর প্ল্যান করে থাকেন । কিছু সংখ্যক পর্যটক সিকিম না-যেতে পেরে দার্জিলিংয়ের দিকে গেলেও সেই পরিমাণ নগণ্য । জুন মাসে যেখানে 80 থেকে 85 শতাংশ বুকিং থাকে । সেখানে বুকিং নেমে আসে 15 থেকে 20 শতাংশে । জুলাই মাসে বর্ষার কারণে এমনিতেই বুকিং কমে 60 শতাংশে নেমে আসে । কিন্তু জাতীয় সড়কের কারণে তা নেমে এসেছে 7 থেকে 10 শতাংশে ।
10 নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে । 19 মাইলের শেতিঝোরা থেকে চিতরে এলাকা ধসের কারণে বন্ধ রয়েছে । রবিঝোরা থেকে তিস্তাবাজার এলাকায় ধস সরিয়ে মেরামতের কাজ চলায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে । তবে শিলিগুড়ি থেকে পানবু হয়ে কালিম্পং যাওয়ার রাস্তা খোলা রয়েছে । রঙপো থেকে লাভা হয়ে মানসঙ যাওয়ার রাস্তাও খোলা রয়েছে ।